ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

ফাইনালে বোনের জন্য বিশেষ কিছু করতে চান ইলিয়ট

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৭ মার্চ ২০১৫

ফাইনালে বোনের জন্য বিশেষ কিছু করতে চান ইলিয়ট

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এতদিন ‘শান্ট’ নামেই ডাকা হতো তাকে। কিন্তু নিউজিল্যান্ড ক্রিকেট দল এর আগে ৬ বিশ্বকাপে যা পারেনি এবার সেটা করতে পেরেছে। প্রথমবার ফাইনালে উঠতে সক্ষম হয়েছে। এর পেছনে মূলনায়ক ছিলেন ৩৬ বছর বসয়ী মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান গ্র্যান্ট ইলিয়ট। কিউইদের বিশ্বকাপ ভাগ্যাকাশে উজ্জ্বল আলোকচ্ছটা এলো তার দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের জন্যই। পাঁচ নম্বরে নেমে ৭৩ বলে অপরাজিত ৮৪ রানের দারুণ এক ইনিংস উপহার দিয়ে সেমিফাইনালে ব্ল্যাক ক্যাপস শিবিরকে জয়ী করে মাঠ ছাড়েন। একজন দক্ষিণ আফ্রিকান বংশোদ্ভূত ক্রিকেটারের ব্যাটে ভর দিয়ে প্রথমবার গৌরবময় বিশ্বকাপের ফাইনালে নিউজিল্যান্ড। এ কারণে কিউইবাসী এবং দেশটির গণমাধ্যমগুলো তাকে নাম দিয়ে ফেলেছে ‘ম্যাজিক’। তবে আরেকটি ম্যাচ জয়ী ইনিংস খেলতে চান তিনি। কিউইবাসীদের জন্য তো অবশ্যই সেই সঙ্গে ছোট বোনের জন্যও। আজ বিয়ের পিঁড়িতে বসতে চলা ছোট বোন কেট ইলিয়টের বিয়েতে থাকতে পারছেন না তিনি। আবার শনিবার সংবর্ধনা অনুষ্ঠানেও থাকা সম্ভব হচ্ছে না। কারণ রবিবারের ফাইনাল খেলার জন্য এখন দলের সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ায় ইলিয়ট। এ কারণে বোনের জন্য হলেও উপহার হিসেবে বিশেষ কিছু করে দেখাতে চান। বিশ্বকাপের দলে হুট করেই ঢুকে পড়েন ইলিয়ট। অথচ ১৫ জনের চূড়ান্ত স্কোয়াডে মেষ পর্যন্ত তার অন্তর্ভুক্তির তেমন বড় কোন কারণই ছিল না। ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ডের ওয়ানডে দলে অভিষেক ঘটলেও ২০১৩ সালে ছিটকে পড়েছিলেন। এরপর আর কোন ম্যাচই খেলেননি। অথচ তাকেই এ বছর জানুয়ারিতে কিউই নির্বাচকরা বিশ্বকাপ দলে টেনে নেন। যদিও গ্রুপ পর্বের কোন ম্যাচেই আহামরি কোন কিছু করে দেখাতে পারেননি এ মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান। সব ম্যাচে খেললেও সেমিফাইনালে আগে করতে পেরেছেন ২৯, ২৯, ০, ১৯, ৩৯ ও ২৭ রান। তবে এরপরও একাদশ থেকে বাদ পড়েননি আশ্চর্যজনকভাবে। নির্বাচকরা এবং টিম ম্যানেজমেন্ট বিশেষ কিছু পাওয়ার প্রত্যাশাই তাকে রেখে দিয়েছিলেন। সেই আস্থার প্রতিদান দিলেন সেমিফাইনালে। আগে ৬ বিশ্বকাপের সেমি খেললেও কিউইদের ভাগ্যে ফাইনাল খেলার শিকে ছিঁড়েনি। এবারও শঙ্কাটা ছিল। আর নিউজিল্যান্ডবাসীর বহুদিনের লালিত স্বপ্নের এ ম্যাচেই তিনি খেললেন অবিস্মরণীয় এক ইনিংস, পাল্টে দিলেন নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের ইতিহাস। তিন উইকেট চলে যাওয়া এবং ওভারপ্রতি রানের পরিমাণ বড় আকার ধারণ করা- এ দ্বিমুখী চাপের মধ্যে থেকে মাত্র ৭৩ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৪ রানের এক ইনিংস উপহার দিয়েছেন। দলকে প্রথমবার পৌঁছে দিয়েছেন বিশ্বকাপের সেমিতে। জাদুকরীয় এ ইনিংস খেলে তিনি এখন নিউজিল্যান্ডের মহানায়ক! তাই উপাধি পেয়ে গেছেন ‘ম্যাজিক’। ফাইনালে আরেকটি জাদু দেখাতে উন্মুখ হয়ে আছেন তিনি। এবার সেটা করে দেখাতেই হবে। কারণ অনেক বিষয় জড়িয়ে আছে এর সঙ্গে। সেমির মতোই আরেকটি ভাল ইনিংস খেলতে পারলে দল শিরোপা জয়ের গৌরব অর্জন করবে প্রথমবারের মতো ফাইনালে উঠেই। এর পাশাপাশি ছোট বোনের জন্য কিছু করতেই হবে সেই তাগাদা অনুভব করছেন। কেটের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে আজই। অথচ ইলিয়ট অস্ট্রেলিয়ায় ফাইনাল খেলতে। শনিবার নববিবাহিত দম্পত্তির সংবর্ধনায়ও তাই অংশ নেয়া সম্ভব নয়। সে কারণে ছোট বোনকে বিমর্ষ চিত্তে ‘না’ বলতেই হলো। এক বছর আগেই এ তারিখটা নির্ধারণ করা হয়েছিল যখন ইলিয়ট কিউই ওয়ানডে দলের সদস্যই না। বিশ্বকাপ খেলার আচমকা সুযোগটা আসবে সেটাও ভাবা যায়নি কোনভাবে। এ কারণে সম্মতি দিয়েছিলেন সময়সূচীর। এখন ফাইনালের জন্য সেটা সম্ভব নয়। তবে কেট হাসিমুখেই মেনে নিয়েছেন বিষয়টা। তিনি বলেন, ‘বিশ্বকাপ ফাইনালের আগের দিন অনুষ্ঠানের জন্য সবকিছুই নির্ধারণ করা হয়েছে অনেক আগে। আমি ওই সময় জানতে চেয়েছিলাম বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ আছে কিনা। তিনি তখন সম্ভাবনা নেই জানিয়েছিলেন। কিন্তু এখন শুধু খেলছেন তাই নয়, দলের অন্যতম নায়কই হয়ে গেছেন। মেলবোর্নে যাওয়ার আগে আমি তাকে বলেছি- ‘যাও এবং অবশ্যই জিতে এসো। শুধু আমার মধুচন্দ্রিমার উপহার হিসেবে নয়। বরং নিজের যোগ্যতা অনুসারে জ্বলে ওঠ দলের জন্য।’ এটা এখন মিশ্র এক অনুভূতি। এমন দিনে তিনি থাকতে পারছেন না। কিন্তু আমি আবার বড় টিভি পর্দায় তার সাফল্যে হাস্যোজ্জ্বল মুখটা দেখতে চাই। আমি শুরু থেকেই বলেছি তুমি যদি স্বপ্ন পূরণ করতে পারো সেটাই হবে অভূতপূর্ব এক অর্জন এবং তা আমাকে সবচেয়ে আনন্দিত করবে।’
×