ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হ্রাস

প্রকাশিত: ০৬:১১, ২৭ মার্চ ২০১৫

কৃষি খাতে ঋণ বিতরণ হ্রাস

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) কৃষিখাতে ঋণ বিতরণ কমেছে। চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে যে পরিমাণ ঋণ বিতরণ করা হয়েছে, তা আগের অর্থবছরের একই সময়ের তুলনায় প্রায় দুই শতাংশ কম। বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর তুলনায় রাষ্ট্রায়ত্ত ও বিশেষায়িত খাতের ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণে পিছিয়ে রয়েছে। জানা গেছে, অগ্রাধিকার খাত হিসেবে এ খাতে ঋণ বিতরণ বাড়াতে বিভিন্ন সময়ে ব্যাংকগুলোর প্রতি নির্দেশনা দিয়ে আসছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপরও কৃষিতে ঋণ বিতরণ না বেড়ে উল্লেখযোগ্য হারে কমেছে। মূলত অন্য খাতের তুলনায় কৃষি ঋণ সুদহার কম হওয়ায় ব্যাংকগুলো অনাগ্রহ দেখাচ্ছে। মূলত ঋণ নিতে গিয়ে বিভিন্ন ধরনের হয়রানি এবং মামলার ভয়ে কৃষকরা ব্যাংকবিমুখ হয়ে পড়ছেন বলে আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা। কৃষিঋণ বিতরণ বাড়াতে সম্প্রতি কৃষিখাতে ব্যাংকগুলোর বিতরণ করা ঋণে বর্তমানে নির্ধারিত হারের তুলনায় ২ শতাংশ সুদ কমিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১ জানুয়ারি থেকে কৃষকরা সর্বোচ্চ ১১ শতাংশ সুদে কৃষিঋণ নিতে পারছেন। আগে যেখানে সুদ গুনতে হতো ১৩ শতাংশ। গত ২১ ডিসেম্বর এ সংক্রান্ত এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, আমানত ও ঋণের সুদ হারের নিম্নমুখী প্রবণতা বিবেচনায় অগ্রাধিকার খাত হিসেবে কৃষি ও পল্লী ঋণের সুদ হারের উর্ধসীমা ১৩ শতাংশের পরিবর্তে ১১ শতাংশ নির্ধারণ করা হলো। একইসঙ্গে গত ফেব্রুয়ারি মাসে কৃষিঋণ গ্রাহকদের নামে ব্যাংকের দায়েরকৃত মামলা প্রত্যাহারের নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। একইসঙ্গে নতুন ঋণপ্রাপ্তি নিশ্চিত করতে ব্যাংকগুলোকে সব ধরনের সহযোগিতা দিতে বলা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যাংকগুলো কৃষি খাতে নয় হাজার ৯১৪ কোটি ১০ লাখ টাকার ঋণ বিতরণ করেছে। আগের বছরের একই সময়ে বিতরণ করা ঋণের পরিমাণ ছিল দশ হাজার ১০৭ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। এ হিসেবে আট মাসে ঋণ বিতরণ কমেছে ১৯৩ কোটি ৭৫ লাখ টাকা বা এক দশমিক ৯১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত বিতরণ হওয়া ঋণ চলতি অর্থবছরের মোট লক্ষ্যমাত্রার ৬৩ দশমিক ৭৬ শতাংশ। আগের অর্থবছরের একই সময়ে লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বিতরণের হার ছিল ৬৯ দশমিক ২৬ শতাংশ। মূলত সরকারী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ কমার ফলে সামগ্রিক পরিস্থিতির অবনতি হয়েছে। প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, রাষ্ট্রীয় মালিকানার সোনালী, জনতা, অগ্রণী, রূপালী, বেসিক, বাংলাদেশ কৃষি ও রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক পুরো অর্থবছরের নয় হাজার ২৪০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে আট মাসে পাঁচ হাজার ৮৩৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা বিতরণ করেছে। আগের অর্থবছরের একই সময়ে আট হাজার ৯৫০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল ছয় হাজার ৫৪১ কোটি ২৮ লাখ টাকা। এ হিসেবে তাদের বিতরণ কমেছে ৭০৫ কোটি ৩৩ লাখ টাকা। আর বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর জন্য এবারে ছয় হাজার ৩১০ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। আট মাসে তাদের বিতরণ হয়েছে চার হাজার ৭৮ কোটি ১৫ লাখ টাকা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে পাঁচ হাজার ৬৪৫ কোটি টাকা লক্ষ্যমাত্রার বিপরীতে বিতরণ করেছিল তিন হাজার ৫৬৬ কোটি ৫৭ লাখ টাকা। সে হিসেবে আট মাসে বেসরকারী ও বিদেশী ব্যাংকগুলোর ঋণ বিতরণ বেড়েছে ৫১১ কোটি ৫৮ লাখ টাকা। কৃষিঋণ কমার কারণ জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের কৃষিঋণ ও আর্থিক সেবাভুক্তি বিভাগের মহাব্যবস্থাপক প্রভাষ চন্দ্র জনকণ্ঠকে বলেন, চলমান হরতাল-অবরোধের কারণে ঋণ চাহিদা কিছুটা কমেছে। কেননা কৃষক ঋণ নিয়ে পণ্য উৎপাদন করলেও বাজারজাত করতে পারছে না। কৃষকদের এ সমস্যার কথা মাথায় রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক তাদের জন্য কিছু সুবিধা দিচ্ছে। তবে ব্যাংকগুলো যেন কৃষকদের সঠিকভাবে এসব সুবিধা দেয় সে বিষয়ে কঠোর তদারকি করবে বাংলাদেশ ব্যাংক। এ বিষয়ে প্রতিমাসেই ব্যাংকগুলোর সঙ্গে আলাদাভাবে বৈঠক করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সুদহার কমানোর ফলে কৃষকরা বর্তমানের তুলনায় বেশি উপকৃত হবেন। স্বাভাবিকভাবে ঋণ চাহিদাও বাড়বে। ফলে আগামীতে ঋণ বিতরণ বাড়বে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
×