ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কম দামে পাটসুতা বিক্রির প্র্রবণতা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২৭ মার্চ ২০১৫

কম দামে পাটসুতা বিক্রির প্র্রবণতা বাড়ছে

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ বর্তমানে পাটসুতার আন্তর্জাতিক বাজার সঙ্কটের মধ্য দিয়ে অতিবাহিত হচ্ছে। এর প্রধান কারণ আন্তর্জাতিক বাজারে রফতানি মূল্যের অস্বাভাবিক দর পতন। চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বৃদ্ধিই এর অন্যতম কারণ। এছাড়া পাটসুতা রফতানিকারকদের নিজেদের মধ্যে পণ্য বিক্রয়ে অস্থিরতা। এ সুযোগে ক্রেতাদের মাঝে নিম্নমূল্যে পণ্য বিক্রয়ের প্রবণতা বাড়ছে। বর্তমানে আন্তর্জাতিক বাজারে পাটসুতার মূল্য হ্রাস পাওয়ার কারণে পাটসুতা শিল্পের ওপর নেতিবাচক প্রভাব উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে পাটসুতা রফতানির পরিমাণ হ্রাস পাচ্ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে (জুলাই’১৪-ফেব্রুয়ারি’১৫) পাটসুতা রফতানি হয়েছে ৩.১৫ লাখ মেট্রিক টন। গত অর্থবছরের একই সময়ে এ রফতানির পরিমাণ ছিল ৩.২৯ লাখ মেট্রিক টন। অর্থাৎ গতবছরের চেয়ে এবছর পাটসুতা রফতানি হ্রাস পেয়েছে ৪.২৫ শতাংশ। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এ্যাসোসিয়েশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহ্জাহান বলেন, দেশের বিদ্যমান অস্থিরতা, অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ এবং দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে হরতাল ঘোষণার কারণে দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা এক চরম বিপর্যয়ের মধ্যে অতিবাহিত হচ্ছে। দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য বিশেষ করে রফতানি বাণিজ্য চরম নাজুক অবস্থায় পতিত হয়েছে। অবরোধের কারণে পাটসুতা কলের শ্রমিকদের উপস্থিতি আশঙ্কাজনকভাবে হ্রাস পেয়েছে, যার কারণে পণ্য উৎপাদন ব্যাপকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। কাঁচাপাটের পরিবহন সঙ্কটে উৎপাদন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। পাটকলের অপূরণীয় ক্ষতির কারণে তারল্য সঙ্কট উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং সেই সঙ্গে বৃদ্ধি পাচ্ছে ঋণের বোঝা। এ কারণে সময়মতো পাটকলসমূহ ঋণ পরিশোধে ব্যর্থ হবে। সম্প্রতি বাংলাদেশ জুট স্পীনার্স এ্যাসোসিয়েশনের বার্ষিক সাধারণ সভা সংগঠনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাহজাহান। সভায় উপস্থাপিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাটসুতা শিল্প খাত দেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। বাংলাদেশ হতে যে পরিমাণ পাটপণ্য রফতানি হয় তার ৬৮ শতাংশ পাটসুতা। বর্তমানে বিজেএসএর আওতাভুক্ত ৯৬টি, বিজেএমসির অধীনে ২৭টি, বিজেএমএর সদস্যভুক্ত ছোট বড় মিলের সংখ্যা ১২৬টি। সব মিলিয়ে বাংলাদেশে বর্তমানে মোট ২৪৯টি পাটকল রয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থবছরে বিজেএসএর আওতাভুক্ত মিলসমূহের পাটসুতার রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ৫৯ হাজার ৩৭৮ মেট্রিক টন এবং আয় হয়েছে ৩ হাজার ৪৭৪ কোটি টাকা। আগের বছরে বিজেএসএর রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ লাখ ১৬ হাজার ২৫২ মেট্রিক টন এবং আয় ছিল ৩ হাজার ৪৯৬ কোটি টাকা, যা পরিমাণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৭.৭০ শতাংশ এবং আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ০.৬২ শতাংশ। অন্যদিকে ২০১৩-১৪ অর্থবছরের মোট পাটপণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ৭ লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। আয়ের পরিমাণ ৫ হাজার ৬২ কোটি টাকা। তবে এ অর্থবছরে কাঁচা পাটসহ পাটপণ্য রফতানি করে মোট আয় হয়েছে ৫ হাজার ৭৬৮ কোটি টাকা। ২০১২-২০১৩ অর্থবছরে মোট পাটপণ্য রফতানির পরিমাণ ছিল ৮ লাখ ৪১ হাজার টন এবং আয়ের পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৯৭৩ কোটি টাকা। আর কাঁচা পাটসহ মোট পাটপণ্য রফতানি থেকে আয়ের পরিমাণ ছিল ৭ হাজার ৪১০ কোটি টাকা। ফলে দেখা যায়, গত বছরের তুলনায় পাট ও পাটজাত পণ্য রফতানিতে আয় হ্রাস পেয়েছে ২২.১৫ শতাংশ এবং পাটপণ্যের পরিমাণ হ্রাস পেয়েছে ৬.১৭ শতাংশ। পাটসুতার দেশভিত্তিক পরিসংখ্যান পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে সর্বাধিক পাটসুতা রফতানি হয়েছে তুরস্কে, যার পরিমাণ ২ লাখ ২৬ হাজার ৩৩০ টন এবং যা মোট রফতানির ৪১.০৭ শতাংশ। চীনে রফতানি হয়েছে ৭৫ হাজার ৭৭৩ টন, যা মোট রফতানির ১৩.৭৫ শতাংশ, ভারতে রফতানি হয়েছে ৫৮ হাজার ৫৮৬ টন, যা মোট রফতানির ১০.৬৩ শতাংশ। ইরানে রফতানি হয়েছে ৩৫ হাজার ২৬৩ টন, যা মোট রফতানির ৬.৪০ শতাংশ। মিসরে পাটসুতা রফতানি হয়েছে ২৯ হাজার ৭৩৯ টন, যা মোট রফতানির ৫.৪০ শতাংশ। ইন্দোনেশিয়াতে রফতানির পরিমাণ ১৮ হাজার ২৮৩ মেট্রিক টন, যা মোট রফতানির ৩.৩২ শতাংশ এবং বেলজিয়ামে গত অর্থবছরে রফতানি হয়েছে ১৫ হাজার ৫৭১ টন, যা মোট রফতানির ২.৮৩ শতাংশ। শাহ্জাহান বলেন, বর্তমানে পাটপণ্য রফতানির বিপরীতে বিপুল পরিমাণ ভর্তুকির টাকা ক্রমপুঞ্জীভূত হয়ে নগদ সহায়তার অর্থ বকেয়া রয়েছে। পুঞ্জীভূত এই বকেয়ার পরিমাণ প্রায় ৬০০ কোটি টাকা। পাটসুতা রফতানির পরিমাণ উত্তরোত্তর বৃদ্ধির কারণে বিগত বাজেট হিসাবে ভর্তুকি বাবদ যে অর্থ বরাদ্দ হয়েছিল তাতে সঙ্কুলান না হওয়ায় এ খাতে বকেয়ার পরিমাণ ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। তিনি আগামী বাজেটে বকেয়া ভর্তুকির অর্থ বরাদ্দ রাখার জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানান। বাংলাদেশ সরকারের পাটজাত মোড়কের বাধ্যতামূলক আইন ১২ অক্টোবর ২০১০ বাংলাদেশ গেজেট আকারে প্রকাশ হয়েছে। কিন্তু আজ পর্যন্ত এ আইনটি বাস্তবায়নে অগ্রগতি বিশেষভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তিনি সরকারের কাছে এ আইন বাস্তবায়নের জোরাল আহ্বান জানান।
×