ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সংস্কৃতি সংবাদ

স্বাধীনতা দিবসে বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত সাংস্কৃতিক ভুবন

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৭ মার্চ ২০১৫

স্বাধীনতা দিবসে বর্ণিল আয়োজনে মুখরিত সাংস্কৃতিক ভুবন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দিনটি ছিল একইসঙ্গে আত্মত্যাগের বেদনা আর অর্জনের আনন্দের। বাঙালীর রাষ্ট্র বাংলাদেশের স্বাধীনতার দিন। লক্ষ প্রাণের বিসর্জন আর অসীম সাহসিকতায় বিশ্ব মানচিত্রে বাঙালীর স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার দিন। তাই তো বেদনাকে ছাপিয়ে শুধুই যেন আনন্দ ও বীরত্বগাথার দিনে পরিণত হয়েছে স্বাধীনতা দিবস ও জাতীয় দিবস। বৃহস্পতিবার ছিল ৪৪তম স্বাধীনতাবার্ষিকী। সকাল থেকে রাত অবধি নানা আয়োজনে মুখরিত ছিল রাজধানীর সংস্কৃতি অঙ্গন। গানের সুরে, কবিতার ছন্দে, নৃত্যের মুদ্রায় কিংবা বক্তার কথা উচ্চারিত হয়েছে একাত্তরের সেই আন্দোলিত মহাকাব্যিক অধ্যায়। একইভাবে সেলুলুয়েডেও ছিল মুক্তিযুদ্ধের প্রতিচ্ছবি। সকালবেলায় শিশুদের গান-কবিতা ও নাচের তালে সরব হয়ে ওঠে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর আঙিনা। আর শাহবাগের জাতীয় জাদুঘর ও মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের স্বাধীনতা জাদুঘরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্র প্রদর্শনী। কোথাও বা শিল্পীর রং-তুলিতে মুক্তিযুদ্ধের প্রেক্ষাপটে রঙিন হয়েছে ক্যানভাস। বিকেলে শহীদ মিনারে গান কবিতা কিংবা নৃত্য পরিবেশনায় উদ্্যাপিত হয়েছে স্বাধীনতা দিবস। সন্ধ্যায় শিল্পকলা একাডেমির আয়োজনে বৈচিত্র্যময় পরিবেশনায় বারংবারং এসেছে একাত্তরের বীরত্বগাথা। বাংলা একাডেমির স্বাধীনতা দিবসের আলোচনায় বক্তার উচ্চারণে ছিল সেই গৌরবময় ইতিহাসের কথা। সব মিলিয়ে স্বাধীনতা দিবসে একাত্তরের প্রেরণাদায়ী বহুমাত্রিক পরিবেশিনায় স্পন্দিত হয়েছে শহরের সংস্কৃতি ভুবন। সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, শিশু একাডেমি, স্বাধীনতা জাদুঘর, কেন্দ্রীয় কচিকাঁচার মেলাসহ নানা সাংস্কৃতিক সংগঠন দিনভর নানা অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। রমনা পার্ক, চারুকলা অনুষদ, টিএসসি, রবীন্দ্র সরোবর, আগারগাঁওয়ের বিমানবাহিনী জাদুঘর, বিভিন্ন বিনোদন কেন্দ্র ও উদ্যানসহ নগরজুড়ে বসেছিল স্বাধীনতা উৎসবে প্রাণের মেলা। শহীদ মিনারে জোটের স্বাধীনতা উৎসব ॥ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের তিন দিনব্যাপী স্বাধীনতা উৎসবের শেষ দিন ছিল বৃহস্পতিবার। ‘সন্ত্রাস নাশকতাÑরুখে দাঁড়াও বাংলাদেশ’ সেøাগানে জোটের স্বাধীনতা উৎসবের সমাপনী দিনে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার ও ধানম-ির রবীন্দ্র সরোবরে যেন ছড়িয়ে পড়ে উদ্দীপ্ত প্রাণের স্পন্দন। বসন্ত বিকেলে শহীদ মিনারে একাত্তরের চেতনাদায়ী গান, কবিতার সঙ্গে নৃত্যের ঝংকারে মুখরিত হয়ে ওঠে অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণ। নানা পরিবেশনার ভেতর দিয়ে প্রকাশিত হয় যুদ্ধাপরাধীমুক্ত ও অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার অঙ্গীকার। সম্প্রতির সুর গেঁথে শুরু হয় বৈকালিক এ আয়োজন। শুরুতেই বহ্নিশিখার শিল্পীরা গেয়ে শোনান ‘বাংলার হিন্দু, বাংলার খ্রিস্টান, বাংলার বৌদ্ধ, বাংলার মুসলমানÑআমরা সবাই বাঙালী’। এছাড়াও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সুরতাল, উজান ও দৃষ্টি। আবিদা রহমান সেতু পরিবেশন করেন ‘জন্ম আমার ধন্য হলো’ ও ‘একটি পেলাম একটি পতাকা’ শীর্ষক দুটি সঙ্গীত। এছাড়া একক কণ্ঠে গান শোনান বুলবুল মহলানবীশ, অনিমা রায়, ফয়জুল বারী ইমু, সালাহউদ্দিন সোহাগ ও শিমুল সাহা। শামসুর রাহমানের ‘তোমাকে পাওয়ার জন্য হে স্বাধীনতা’ কবিতাটি আবৃত্তি করেন রেজীনা ওয়ালী লীনা। মাসুম আজিজুল বাশারের কণ্ঠে উচ্চারিত হয় নির্মলেন্দু গুণের কবিতা ‘স্বাধীনতা এই শব্দটি কি করে আমাদের হলো’। এছাড়া একক আবৃত্তিতে অংশ নেন আহসান উল্লাহ তমাল। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করে মুক্তধারা, ত্রিলোক, ঢাকা স্বরকল্পন ও ঢাকা আবৃত্তি একাডেমি। শিশু-কিশোর পরিবেশনায় অংশ নেয় কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর। পথনাটক পরিবেশন করে লোকনাট্যদল (বনানী), গতি থিয়েটার, পদাতিক নাট্য সংসদ। রবীন্দ্র সরোবরের আয়োজনে দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে ক্রান্তি শিল্পীগোষ্ঠী ও স্বভূমি লেখক শিল্পী কেন্দ্র। একক কণ্ঠে গান শোনান মহাদেব ঘোষ, নাসিমা শাহীন ফেন্সী, প্রলয় সাহা, রাজিয়া মুন্নি ও সঞ্জয় কবিরাজ। দলীয় আবৃত্তি পরিবেশন করেন স্বনন ঢাকা, সংবৃতা ও কথা আবৃত্তি চর্চা কেন্দ্র। একক আবৃত্তিতে অংশ নেন তামান্ন ডেইজি, জি এম মোর্শেদ ও তামান্না তিথি। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে সুকন্যা ও নৃত্যজনের শিল্পীরা। শিশু সংগঠনের পরিবেশনায় অংশ নেয় মৈত্রী শিশুদল। পথনাটক পরিবেশন করে অবয়ব, সাত্ত্বিক নাট্য সম্প্রদায় ও নাট্যধারা। জাতীয় জাদুঘর ও স্বাধীনতা জাদুঘর ॥ মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদযাপন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতা জাদুঘর প্রাঙ্গণে সকাল সাড়ে ৭টায় শুরু হয় সঙ্গীতানুষ্ঠান। একক ও দলীয়ভাবে একাত্তরের প্রেরণাদায়ী সঙ্গীত পরিবেশন করে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বহ্নিশিখা সাংস্কৃতিক দল এবং জয়ধ্বনি সাংস্কৃতিক সংগঠনের শিল্পীবৃন্দ। সঙ্গীতানুষ্ঠান উদ্বোধন করে জাদুঘরের মহাপরিচালক ফয়জুল লতিফ চৌধুরী বলেন, কণ্ঠযোদ্ধাদের যে সব জাগরণী গান আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে অনুপ্রাণিত করেছিল। আগামী প্রজন্মের হাত ধরে সেসব জাগরণী গানকে যুগের পর যুগ আমাদের মাঝে বাঁচিয়ে রাখতে হবে। অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় পর্বে সন্ধ্যায় জাদুঘরের নলিনীকান্ত ভট্টশালী প্রদর্শনী হলে আয়োজন করা হয় কবিতা আবৃত্তি অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর। আবৃত্তি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন জাতীয় জাদুঘর বোর্ড অব ট্রাস্ট্রিজের সদস্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম। কবিতা আবৃত্তি করেন সৈয়দ হাসান ইমাম, রামেন্দু মজুমদার, আশরাফুল আলম, কেয়া চৌধুরী, ভাস্বর বন্দোপাধ্যায়, পীযূষ বন্দোপাধ্যায়, জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়, ড. রণজিৎ কুমার বিশ^াস, ক্যামেলিয়া, আফরোজা বানু, শমী কায়সার, আহকাম উল্লাহ, ডালিয়া আহমেদ, বেলায়েত হোসেন, লায়না আফরোজ, রফিকুল ইসলাম, মাহিদুল ইসলাম, মাসকুর কল্লোল, ঝর্ণা সরকার, সামিউল ইসলাম, তামান্না তিথী, রোকেয়া প্রাচী ও কান্তি কানিজা। সব শেষে আবৃত্তি করেন অনুষ্ঠানের প্রধান অতিথি আসাদুজ্জামান নূর। এছাড়া সকাল ১১টায় জাতীয় জাদুঘর প্রাঙ্গণে প্রদর্শন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র ‘আগুনের পরশমনি’ ও ‘গেরিলা’। একই সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে প্রদর্শিত হয় ‘শ্যামল ছায়া’ ও ‘জীবন থেকে নেয়া’ চলচ্চিত্র। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সরকারী ছুটি থাকলেও সরকারী নির্দেশে জাতীয় জাদুঘর ও সকল শাখা জাদুঘর আজ দর্শকদের জন্য উন্মুক্ত রাখা হয়। শিশু-কিশোর শিক্ষার্থী ও প্রতিবন্ধীগণ বিনা টিকেটে গ্যালারি পরিদর্শন করে। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার থেকে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নির্মিত স্বাধীনতা জাদুঘর দর্শকদের জন্য খুলে দেয়া হয়। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরে শিশু-কিশোরদের পরিবেশনা ॥ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা উৎসব উপলক্ষে সপ্তাহব্যাপী অনুষ্ঠানের পঞ্চম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এদিন সকালে জাদুঘর প্রাঙ্গণে ‘শিশু-কিশোর আনন্দ শীর্ষক বিশেষ অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। এতে নৃত্য-গীত ও কবিতায় সজ্জিত পরিবেশনায় অংশ নেয় কল্পরেখা, ইউসেপ টুইটা বোট ফিল্ড স্কুল, ইঞ্জিনিয়ার্স ইউনিভার্সিটি গার্লস স্কুল ও নৃত্যজন। যুদ্ধাপরাধ ও মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের বিচারের দাবিটি ভেসে ওঠে শিশুদের পরিবেশনার মধ্য দিয়ে। আর সন্ধ্যায় সং যাত্রা পরিবেশন করে টাঙ্গাইলের মহাদেব সং যাত্রাদল। উৎসবের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর মিলনায়তনে ‘এক ছাদের নিচে মুক্তিযুদ্ধের হাজার বই’ স্লোগান নিয়ে চলমান মুক্তিযুদ্ধের বইমেলায়ও ছিল উৎসুক পাঠকদের ভিড়। দিনভর জাদুঘর গ্যালারি পরিদর্শন করেন রেকর্ডসংখ্যক দর্শনার্থী। সেগুন বাগিচা কার্যালয়ের পাশাপাশি বিকেলে মিরপুর জল্লাদখানা বধ্যভূমিতেও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের অনুষ্ঠানমালা। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও স্বাধীনতা দিবসের অংশ হিসেবে মুক্তিযুদ্ধের উদ্দীপনামূলক সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান পরিবেশিত হয় সেখানে। স্মৃতিচারণ করে শহীদ-সন্তান জল্লাদখানা বধ্যভূমি। বিভিন্ন পরিবেশনায় অংশ নেয় মিথস্ক্রিয়া আবৃত্তি পরিষদ, চারুলতা একাডেমি, সাত্ত্বিক, স্রোত, বধ্যভূমির সন্তানদল, বুলবুল ললিতকলা একাডেমি, সোনার বাংলা সঙ্গীত একাডেমি, মিরপুর সাংস্কৃতিক একাডেমি ও ঘাসফুল শিশু-কিশোর সংগঠন। স্বাধীনতা দিবসে বাংলা একাডেমির আলোচনাসভা ॥ স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে আলোচনাসভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলা একাডেমি। বিকেলে একাডেমির নজরুল মঞ্চে অনুষ্ঠিত আলোচনাসভা স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান। আলোচনায় অংশ নেন রামেন্দু মজুমদার, ড. শামসুল বারি ও ম. হামিদ। সভাপতিত্ব করেন বাংলা একাডেমির সভাপতি এমেরিটাস অধ্যাপক আনিসুজ্জামান। অনুষ্ঠানের শুরুতে মুক্তিযুদ্ধের কবিতা আবৃত্তি করেন আবৃত্তিশিল্পী ডালিয়া আহমেদ ও শাহাদাৎ হোসেন নিপু। আলোচকবৃন্দ বলেন, একাত্তরে আমাদের প্রায়-সম্পূর্ণ একতার মধ্যেও যেমন একটি সক্রিয় বিরোধী পক্ষ আমাদের স্বাধীনতাকে ঠেকাতে চেয়েছিল, তেমনি বর্তমান সময়েও সেই একই শক্তি গত চার দশকের বেশি সময় ধরে নানাভাবে নিজেদের পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করে আমাদের একাত্তরের অর্জনকে অস্বীকার করছে ও দেশের অগ্রগতিকে থামিয়ে দিয়ে দেশকে ভিন্ন পথে নেবার চেষ্টা করছে। তাদের সঙ্গে আরও অনেকে যোগ দিয়েছে রাজনৈতিক সুবিধা অর্জনের আশায়। সব দেশেই বিরোধী পক্ষ থাকে, সেটাই স্বাভাবিক। তবে এদের ঠিকমতো মোকাবেলা করতে না পারলে একাত্তরের অর্জন ও গত চুয়াল্লিশ বছরে দেশের কষ্টার্জিত উন্নয়ন সে ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। এই কাজের জন্যে আমরা একাত্তরের একতা থেকে শিক্ষা নিতে পারি। তাঁরা বলেন, জাতির বর্তমান প্রেক্ষিতে একাত্তরের মূল লক্ষ্য ও আদর্শকে কাজে লাগানোর কৌশল বের করার চেষ্টা করা যায়। এর জন্যে প্রয়োজন সহনশীল রাজনৈতিক পরিবেশ ও বিচক্ষণ সামাজিক ও রাজনৈতিক নেতৃত্ব। যারা একাত্তরের মূল আদর্শে বিশ্বাসী না তাদের সঠিকভাবে চিহ্নিত করে যেমন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তেমনি রাজনৈতিক ভিন্নতা মেনে নিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে সকল শক্তিকে চিহ্নিত করে তাদের সবাইকে উন্নয়নের সঙ্গী করতে হবে। সভাপতির বক্তব্যে আনিসুজ্জামান বলেন, একাত্তরের পঁচিশে মার্চ বাঙালী জাতির বিরুদ্ধে পরিচালিত পাক হানাদারদের গণহত্যা যেমন গোটা বিশ্ব-ইতিহাসেই নজিরবিহীন তেমনি মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের পরিচালিত অসহযোগ আন্দোলনও পৃথিবীর ইতিহাসে এক অনন্য ঘটনা। বাঙালী জাতি একাত্তরে যেভাবে অটুট ঐক্য এবং সুনির্দিষ্ট লক্ষে তার আত্মপরিচয়ের প্রতিষ্ঠার জন্য মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে সে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে আজকের বাংলাদেশকে সম্মুখে অগ্রসর হতে হবে। সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে সংগীত পরিবেশন করেন শিল্পী সাজেদ আকবর, আবদুল হালিম খান, আজগর আলীম, নাসিমা শাহীন ফেন্সি এবং ফারহানা শিরিন। শিল্পকলা একাডেমির আয়োজন ॥ স্বাধীনতা দিবস উদযাপনের অংশ হিসেবে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি। নন্দন মঞ্চে আয়োজিত আলোচনাসভায় একাডেমির সঙ্গীত বিভাগের পরিচালক সোহরাব উদ্দীনের সভাপতিত্বে অংশ নেন আসিফ মুনীর তন্ময়, শমী কায়সার ও কাজীয় শায়লা জেবিন। একাডেমির প্রশিক্ষণার্থী শিশু শিল্পীদের কণ্ঠে ‘স্বাধীন স্বাধীন দিকে দিকে’ শীর্ষক সমবেত সঙ্গীত পরিবেশনার মাধ্যমে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। এছাড়াও দলীয় সঙ্গীত পরিবেশন করে সাইদুর রহমান বয়াতি ও তার দল এবং আওয়ামী শিল্পী গোষ্ঠী। একক কণ্ঠে গান শোনান অনুপমা মুক্তি, সালমা চৌধুরী ও সুবর্ণা। একক আবৃত্তি পরিবেশন করেন কৃষ্টি হেফাজ। দলীয় নৃত্য পরিবেশন করে নন্দনকলা কেন্দ্র, স্পন্দন ও বাফা। ছায়ানট ॥ স্বাধীনতা দিবসে ছায়ানটের সংস্কৃতি ভবন মিলনায়তনে মুক্তিযুদ্ধে নারীর অংশগ্রহণ ও ভূমিকা নিয়ে শামীম আখতার নির্মিত ‘ইতিহাস কন্যা’ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধভিত্তিক চলচ্চিত্রের প্রদর্শনীর অনুষ্ঠিত হয়। এছাড়াও ছিল সঙ্গীতানুষ্ঠান। ‘রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’ ॥ প্রবীণ বরেণ্য শিল্পীদের তুলির আঁচড়ে ক্যানভাসে উদ্ভাসিত হলো নবীনের মাঝে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে চ্যানেল আই প্রাঙ্গণে অনুষ্ঠিত হয় চ্যানেল আই আয়োজিত ‘রং তুলিতে মুক্তিযুদ্ধ’। বরেণ্য পঞ্চাশজন চিত্রশিল্পীর অংশগ্রহণে এবারের অনুুষ্ঠানটি উৎসর্গ করা হয় প্রয়াত চিত্রশিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী স্মরণে। মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক এ চিত্রকলা অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন শিক্ষাবিদ বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীর। এই অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে দেয়া হয় সম্মাননা। মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর ট্রাস্টি বোর্ডের সদস্য সারোয়ার আলী এবং তারিক আলীর হাতে সম্মাননা স্মারক তুলে দেন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। চিত্রাঙ্কনের পাশাপাশি মূল মঞ্চে দেশাত্মবোধক সঙ্গীত পরিবেশন করেন রেজওয়ানা চৌধুরী বন্যা ও সুরের ধারার শিল্পীরা। আবৃত্তি করেন কবি আসাদ চৌধুরী, হাবিবুল্লাহ সিরাজী ও হাসান আরিফ। অনুষ্ঠানে চিত্রাঙ্কন করেন মনিরুল ইসলাম, বীরেন সোম, সৈয়দ ইকবাল, মনিরুজ্জামান, আবদুল মান্নান, শেখ আফজাল, সব্যসাচী হাজরা, খালিদ মাহমুদ মিঠু, বিপাশা হায়াত, নাসিম আহমেদ নাদভী, নাঈমা হক, রফি হক, রেজাউন নবী, সোহানা শাহরীন, আলপ্তগীন তুষার, সৈয়দ জাহিদ ইকবাল, অনুকূল চন্দ্র মজুমদার, মোঃ জহির উদ্দিন, হামিদুজ্জামান খান, লায়লা শারমীন, রণজিৎ দাস, জাহিদ মুস্তাফা প্রমুখ। এ আয়োজনে সহযোগিতা করে গ্যালারি চিত্রক। ছবিগুলোর বিক্রির অর্থ থেকে সরাসরি ৫০ ভাগ প্রদান করা হবে যুুদ্ধাহত খেতাবধারী মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরকে। শিশু একাডেমি ॥ শিশু-কিশোরদের উচ্ছ্বল উপস্থিতিতে মেলা প্রাঙ্গণ ছিল মুখরিত। বিত্রি-বাট্টাও ছিল ভাল। অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় সংসদের ডেপুটি স্পীকার ফজলে রাব্বী মিয়া এমপি, শিশুসাহিত্যিক ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। গণজাগরণ মঞ্চের স্বাধীনতা কনসার্ট ॥ স্বাধীনতা দিবসে স্বাধীনতা কনসার্টের আয়োজন করে গণজাগরণ মঞ্চ। সন্ধ্যায় শাহবাগের জাতীয় জাদুঘরের সামনে আয়োজিত এই কনসার্টে দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডদল গান পরিবেশনা করেন। শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ডদলের মধ্যে অংশ নেন ওয়ারফেস, শিরোনামহীন, নেমেসিস, অর্থহীন, রেডিও এ্যাক্টিভ ইত্যাদি। বিকেল সাড়ে পাঁচটা থেকেই কনসার্টস্থলকে কেন্দ্র করে শাহবাগে গানপ্রেমীদের ভিড় বাড়তে থাকে। এর আগে বিকাল ৪টায় স্বাধীনতা দিবস উদযাপনে সমাজের জ্যেষ্ঠ নাগরিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্বে শাহবাগ থেকে পতাকা মিছিল করে গণজাগরণ মঞ্চ। বিনোদন কেন্দ্রগুলো মুখরিত ॥ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে আনন্দে মাতোয়ারা হয় রাজধানীবাসী। সরকারী ছুটি হওয়ায় সকাল থেকেই নানা বয়সী মানুষের পদচারণায় মুখরিত নগরীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো। পরিবার-পরিজন নিয়ে ঘুরেছেন অনেকে। শিশু একাডেমির আয়োজন ॥ বাংলাদেশ শিশু একাডেমি আয়োজিত বইমেলার অষ্টম দিন ছিল বৃহস্পতিবার। এ দিন মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস উদ্যাপন উপলক্ষে বিকেলে বইমেলায় প্রধান অতিথি ছিলেন ডেপুটি স্পিকার মোঃ ফজলে রাব্বী মিয়া। সম্মানিত অতিথি ছিলেন বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও শিক্ষাবিদ ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল। বিশেষ অতিথি ছিলেন সঙ্গীত শিল্পী ফরিদা পারভীন ও অভিনয় শিল্পী রোকেয়া প্রাচী। সভাপতিত্ব করেন শিশু একাডেমির পরিচালক মোশাররফ হোসেন। স্বাগত বক্তব্য রাখেন একাডেমির উপ-পরিচালক ড. মুনিরা সুলতানা। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করে অগ্রণী স্কুল এ্যান্ড কলেজ, বঙ্গবন্ধু শিশু-কিশোর মেলা, অচিন পাখি এবং বাংলাদেশ শিশু একাডেমির প্রশিক্ষক ও প্রশিক্ষণার্থীবৃন্দ।
×