ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

কোন্দল মিটিয়ে চট্টগ্রাম বিএনপি এক মঞ্চে ॥ নোমান পরিচালনা কমিটিতে, খসরু মনজুরের প্রধান এজেন্ট, শাহাদতের সমর্থন

মেয়র পদে মনজুর নাছির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৭ মার্চ ২০১৫

মেয়র পদে মনজুর নাছির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হবে

মোয়াজ্জেমুল হক/হাসান নাসির, চট্টগ্রাম অফিস ॥ আসন্ন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন (চসিক) নির্বাচন কেন্দ্র করে স্থানীয় বিএনপি অবশেষে কোন্দলের অবসান ঘটিয়ে একমঞ্চে এসেছে। বৃহস্পতিবার সকালে দলের নগর শাখার সভাপতি আমীর খসরুর বাসভবনে অনুষ্ঠিত সভায় সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান মেয়র ও বিএনপির চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা এম মনজুর আলমকে দলের একক প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। শুধু তাই নয়, এ নির্বাচনকে তারা জয়ের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবেও ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী মনজুর আলমের প্রতি স্থানীয় ২০ দলের শরিকদেরও সমর্থন রয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। যদিও এখনও কোন প্রকাশ্য ঘোষণা আসেনি। এর কারণ হিসেবে জানা গেছে, ২০ দলের পক্ষে কেন্দ্রীয়ভাবে এ নির্বাচনকে তামাশার নির্বাচন হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে। সে কারণেই স্থানীয়ভাবে ২০ দল এখনও মুখ না খুলে নীরবে সমর্থন দিয়ে যাচ্ছে বলে বিএনপির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এর আগে বুধবার বিকেলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে মনজুর আলমকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। এরপর বৃহস্পতিবার বিএনপি আনুষ্ঠানিক বৈঠক ডেকে মনজুরকে মেয়র পদে সমর্থন ঘোষণা করে। এ বৈঠকে দলের কেন্দ্রীয় ভাইস-চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, সাবেক এমপি ও উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি জাফরুল ইসলাম, নগর শাখার সভাপতি আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। তবে দলের পক্ষে মেয়র প্রার্থী হতে ইচ্ছুক ডাঃ শাহাদাত হোসেন উপস্থিত ছিলেন না। বৈঠক শেষে যোগাযোগ করা হলে ডাঃ শাহাদাত জনকণ্ঠকে জানান, দলের সিদ্ধান্ত তিনি মেনে নিয়েছেন। যেহেতু কেন্দ্রের সিগন্যালে চট্টগ্রামে দল মনজুর আলমকে মেয়র পদে সমর্থন দিয়েছে সেক্ষেত্রে দলীয় স্বার্থে তিনি মেনে নিয়েছেন। এ ঘটনার ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী দল আওয়ামী লীগের মতো চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের সমর্থনে একমঞ্চে আসতে সক্ষম হলো। দুই প্রধান দলের পক্ষে এ নির্বাচন ঘিরে একমঞ্চে আসতে পারায় আসন্ন চসিক নির্বাচন জমজমাট হবে বলে দু’দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রগুলো অভিমত ব্যক্ত করেছে। এদিকে, নাগরিক কমিটি বনাম চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের ব্যানারে আ জ ম নাছির উদ্দিন ও এম মনজুর আলম প্রার্থী হয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নামছেন সত্য, মূলত লড়াইটা হবে যথারীতি আওয়ামী লীগ-বিএনপি তথা ১৪ দল বনাম ২০ দলে। যদিও এ জাতীয় কোন আনুষ্ঠানিক ঘোষণা নেই। আ জ ম নাছিরের পক্ষে নাগরিক কমিটি হয়েছে ৫০১ সদস্যের; যার আহ্বায়ক সাবেক এমপি এম এসহাক মিয়া ও সদস্যসচিব সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী। বৃহস্পতিবার বিএনপির অনুষ্ঠিত সভায় মনজুর আলমের পক্ষে নির্বাচন পরিচালনা কমিটির প্রধান করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমানকে এবং মনজুর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট করা হয়েছে সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনের বিভিন্ন সূত্রে বৃহস্পতিবার থেকে আলোচনায় এসেছে এই বলে যে, চসিক নির্বাচনে দুই প্রার্থীর মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতা হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। চট্টগ্রামে বিএনপির পক্ষে মেয়র প্রার্র্থী আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা দেয়ায় আওয়ামী লীগ স্বাগত জানিয়েছে। নগর আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি খোরশেদ আলম সুজন জনকণ্ঠকে জানান, অবরোধ-আন্দোলনের নামে অরাজকতা বাদ দিয়ে বিএনপি নির্বাচনমুখী হওয়ায় আওয়ামী লীগ তাদের স্বাগত জানায়। তিনি আশা করেন, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নগরীর ভোটাররা তাদের নগরপিতা নির্বাচিত করবেন। এক্ষেত্রে তিনি আশা করেন, তার দলের পক্ষে প্রার্থী আ জ ম নাছির উদ্দিন ভোটের ব্যাপক ব্যবধানে বিএনপি প্রার্থীকে পরাজিত করতে সক্ষম হবেন। দলের নগর শাখার সভাপতি ও সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী বার বার বলে যাচ্ছেন, দল সমর্থিত মেয়র প্রার্থী আ জ ম নাছিরকে বিজয়ী করতে দল সমর্থিত সকলকে অগ্নিপরীক্ষায় নামতে হবে। সকল মতভেদ ভুলে গিয়ে নাছিরের পক্ষে কাজ করার জন্য ইতোমধ্যে তিনি তার সমর্থকসহ দলের সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন। এছাড়া ৪১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও ১৪ সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদেও এককভাবে প্রার্থিতা দেয়ার প্রক্রিয়া চলছে। অপরদিকে, বিএনপির পক্ষে ইতোমধ্যেই সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলের ১৪ পদে প্রার্থী চূড়ান্ত করা হয়েছে এবং তারা মনোনয়নপত্রও সংগ্রহ করেছে। তবে ৪১ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মতো বিএনপির মাঝেও একাধিক প্রার্থী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। আওয়ামী লীগ-বিএনপির মতো জাতীয় পার্টি, জামায়াত, ইসলামী ফ্রন্টও এ নির্বাচনে কাউন্সিলর পদে অংশ নিয়ে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ব্যাপকভাবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। ৫৮৯ মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ॥ সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহণের অষ্টম দিন বৃহস্পতিবার মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছে ৯ কাউন্সিলর প্রার্থী। এদিন মেয়র ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর পদে কেউ মনোনয়নপত্র নেয়নি। এ নিয়ে মেয়র, সংরক্ষিত কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করল মোট ৫৮৯। এর মধ্যে মেয়র পদে ১৩, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০ ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৯৬ মনোয়নপত্র বিক্রি হয়। মেয়র পদে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত যারা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছে Ñআওয়ামী লীগের আ জ ম নাছির উদ্দিন, বিএনপির এ্যাডভোকেট আবদুস সাত্তার, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, ইসলামী ফ্রন্টের এমএ মতিন, ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল মনজুর, শফিকুল আলম, মোঃ শাহজাহান, আরিফ মঈনুদ্দিন, গাজী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সৈয়দ সামসুজ্জোহা, ফখরুদ্দিন চৌধুরী ও গোলাম ইয়াজদানি। বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের রিটার্নিং অফিসারের কাছে মনোনয়নপত্র দাখিল করেছে এক মেয়র প্রার্থী। তার নাম সৈয়দ সাজ্জাদ জোহা। এই স্বতন্ত্র প্রার্থী গত নির্বাচনেও মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল। কেন্দ্র সংখ্যা ৭১৯ ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা চূড়ান্ত হয়েছে। মোট ৭১৯ কেন্দ্রের ৪ হাজার ৯০৬ বুথে ভোট গ্রহণ সম্পন্ন হবে। ২০১০ সালের নির্বাচনে ভোট কেন্দ্র ছিল ৬৭৩। ভোটার বৃদ্ধি পাওয়ায় এবার বেড়েছে ৪৬। মোট ভোট কেন্দ্রের মধ্যে অস্থায়ী কেন্দ্র রয়েছে ৩। আর ভোটার বাড়ায় অস্থায়ী বুথও করতে হয়েছে ৪৪৬। মোট ৪৪৮ প্রতিষ্ঠানে এসব কেন্দ্র ও বুথ স্থাপন করা হবে, যার অধিকাংশই হবে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে এবার ভোটার সংখ্যা ১৮ লাখ ১৩ হাজার ৪৪৯। এরমধ্যে পুরুষ ভোটার ৯ লাখ ৩৭ হাজার ৫৩। আর মহিলা ভোটার ৮ লাখ ৭৬ হাজার ৩৯৬। ভোট গ্রহণ কর্মকর্তার সংখ্যা ১৫ হাজার ৪৩৭ ॥ চসিক রিটার্নিং অফিসার কার্যালয়সূত্রে জানানো হয়, ২৮ এপ্রিল ভোট গ্রহণের জন্য তিনটি পদে ১৫ হাজার ৪৩৭ কর্মকর্তা নিয়োগ করা হচ্ছে। এর মধ্যে প্রিসাইডিং অফিসার থাকবে প্রতিকেন্দ্রে একজন করে ৭১৯। সহকারী প্রিসাইডিং অফিসার ৪ হাজার ৯০৬ এবং পোলিং অফিসার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবে ৯ হাজার ৮১২। এ সকল পদে নিয়োজিত থাকবে কলেজ, হাইস্কুল, প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও সরকারী, আধা সরকারীসহ স্বায়ত্তশাসিত বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা কর্মচারী। ইতোমধ্যেই সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানে রিটার্নিং অফিসার কার্যালয় থেকে চিঠি দেয়া হয়েছে।
×