ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় যাননি ॥ লে. জে. মাহবুব

জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় খালেদা সমালোচনার মুখে

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ২৭ মার্চ ২০১৫

জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় খালেদা সমালোচনার মুখে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ মহান স্বাধীনতা দিবসে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে জাতীয় স্মৃতিসৌধে না যাওয়ায় ব্যাপক সমালোচনার মুখে পড়েছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। তবে গুলশানের দলীয় কার্যালয়ে ফেরত আসতে পারবেন না এমন আশঙ্কা করে অন্যান্য বছরের মতো এবার তিনি মহান স্বাধীনতা দিবসে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে। এদিকে মহান স্বাধীনতা দিবসেও দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচী অব্যাহত রাখায় খালেদা জিয়ার বিরুদ্ধে সর্বস্তরের মানুষ সমালোচনায় মেতে উঠেছে। স্বামী জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক দাবি করলেও স্বাধীনতা দিবসে কার স্বার্থে তিনি অবরোধের মতো নেতিবাচক আন্দোলন কর্মসূচী বহাল রাখলেন তা নিয়ে নানা জন নানা প্রশ্ন করছে। এদিকে খালেদা জিয়া না গেলেও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে দলের কয়েকশ’ নেতাকর্মী বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে গিয়ে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছেন। পরে তারা শেরেবাংলানগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, কিছু সীমাবদ্ধতা থাকায় বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া অন্যবারের মতো এবার জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাননি। তবে তার পক্ষে আমরা সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেছি। সরকারবিরোধী আন্দোলন সফলের লক্ষ্যে ৩ জানুয়ারি থেকে বাসা ছেড়ে গুলশান কার্যালয়ে অবস্থান করছেন বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া। আর ৫ জানুয়ারি বিকেলে গুলশান কার্যালয় থেকেই নির্দলীয় সরকারের অধীনে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাবিতে ৬ জানুয়ারি থেকে সারাদেশে টানা অবরোধ কর্মসূচী পালনের ঘোষণা দেন তিনি। এ যাবত গুলশান কার্যালয়ে ৮৩ দিন ধরে অবস্থান ও ৮০ দিন ধরে টানা অবরোধ কর্মসূচী চলাকালে ১ মিনিটের জন্যও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয়ের বাইরে যাননি। প্রতিদিন আত্মীয়-স্বজনের বাসা থেকে পাঠানো খাবার খাচ্ছেন তিনি। ১৯ জানুয়ারি জিয়াউর রহমানের জন্মদিন উপলক্ষে তার মাজারে এবং ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারেও যাননি খালেদা জিয়া। এমনকি ছোট ছেলে আরাফাত রহমান কোকোর মৃত্যুর পরও খালেদা জিয়া গুলশান কার্যালয় থেকে বের হননি। কোকোর মরদেহকেও শেষ বিদায় জানিয়েছেন এখান থেকেই। কোকোর কুলখানি না হলেও তার আত্মার মাগফেরাত কামনায় মিলাদ পড়ানো হয়েছে গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়েই। জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জিয়ার মাজারে বিএনপি নেতাকর্মীরা ॥ মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টায় জাতীয় স্মৃতিসৌধে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে গিয়েছিলেন বিএনপি নেতাকর্মীরা। পরে তারা শেরেবাংলানগরে জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তবে খালেদা জিয়া না যাওয়ায় এবার দলের নেতাকর্মীদের উপস্থিতি ছিল কম। দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমানের নেতৃত্বে জাতীয় স্মৃতিসৌধ ও জিয়ার মাজারে বিএনপির অন্য নেতাদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান, ভাইস চেয়ারম্যান আলতাফ হোসেন চৌধুরী, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, ইনাম আহমেদ চৌধুরী, আবদুল মান্নান, দলের আইনবিষয়ক সম্পাদক জিয়াউর রহমান খান, কেন্দ্রীয় নেতা আসাদুল করীম শাহিন, হাবিবুল ইসলাম হাবিব, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, শামা ওবায়েদ, সেলিম রেজা হাবিব, ঢাকা মহানগর বিএনপি নেতা আবু সাঈদ খান খোকন, শ্রমিক দলের সভাপতি আনোয়ার হোসেন, মহিলা দলের সভাপতি নুরে আরা সাফা, ওলামা দলের সভাপতি মাওলানা আব্দুল মালেক. মৎস্যজীবী দলের সভাপতি, রফিকুল ইসলাম মাহতাব, জাসাস সভাপতি এমএ মালেক, সাধারণ সম্পাদক মনির খান, সাবেক সাংসদ সুলতানা আহমেদ, রাশেদা বেগম হীরা, কৃষক দলের যুগ্ম-সম্পাদক শাহজাহান মিয়া সম্রাট প্রমুখ। জিয়ার মাজারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব) মাহবুবুর রহমান বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তার পরও বিএনপি এটিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত, প্রার্থীদের মুক্তি, সভা-সমাবেশ করার সুযোগ এবং প্রচার-প্রচারণার স্বাধীনতা নিশ্চিত করা হলে বিএনপি নির্বাচনে যাবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের বড় একটি উপাদান হলো অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন। তাই দেশের মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা বিএনপির প্রধান লক্ষ্য। মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করে চলমান আন্দোলনকে ঈপ্সিত লক্ষ্যে নিয়ে যাওয়াই বিএনপির চ্যালেঞ্জ। এক প্রশ্নের জবাবে মাহবুবুর রহমান বলেন, খালেদা জিয়া দেশের বর্তমান রাজনৈতিক রুগ্ন গণতন্ত্রের সংকট থেকে উত্তরণের জন্য এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা প্রতিষ্ঠার জন্যই আদর্শিক আন্দোলন করে যাচ্ছেন। অপর এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বিএনপি নির্বাচনে বিশ্বাসী দল। আমরা সব সময় এ ব্যাপারে উদ্যোগী থাকি। দলের অনেক নেতাকর্মী মিথ্যা মামলায় কারাগারে। সরকারের নিপীড়ন-নির্যাতনে অনেকে আত্মগোপনে আছেন। তাদের ফ্রি করে দিতে হবে। আন্দোলন ও নির্বাচন এক সঙ্গে চলবে। সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে ড. মঈন খান বলেন, সরকার বিএনপিকে গণবিচ্ছিন্ন দল বলছে। বিএনপি গণবিচ্ছিন্ন দল হলে তারা সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে ভয় পাচ্ছে কেন? সুষ্ঠু নির্বাচন হলে সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনসহ সব নির্বাচনে বিএনপিই জয়ী হবে। তিনি বলেন, সরকার বর্তমানে যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছে সেটাই প্রমাণ করে তারা বিএনপিকে কতটা ভয় পায়। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আন্দোলন চলমান আছে, দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত চলমান থাকবে। জিয়ার আদর্শের দলকে হত্যা, গুম, খুন, হামলা, মামলা করে রুখে দেয়া যাবে না। তিনি বলেন, দেশে গণতন্ত্র অনুপস্থিত থাকায় মানুষের চলাফেরা ও কথা বলার স্বাধীনতা নেই। গণমাধ্যমকর্মীদের প্রতি প্রশ্ন ছুড়ে তিনি বলেন, আপনারাই জানেন কোন সংবাদটি পরিবেশন করতে পারেন আর কোনটি পারেন না। মঈন খান বলেন, আজকে গণমানুষের ভোটের অধিকারের আন্দোলনকে সামনে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে যে পন্থায় সম্ভব সেই পন্থায় আমাদের গণতান্ত্রিক রাজনীতি করে যেতে হবে। আমরা সেই পথেই চলছি। দেশে একটি নতুন নির্বাচনের মাধ্যমে একটি জাতীয় সংসদ গঠন করতে হবে। আজকে স্বাধীনতা দিবসে এটাই আমাদের প্রত্যয়।
×