ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

হরতাল অবরোধের নামে যারা পুড়িয়ে মারছে তাদের ক্ষমা নেই

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৭ মার্চ ২০১৫

হরতাল অবরোধের নামে যারা পুড়িয়ে মারছে তাদের ক্ষমা নেই

বিশেষ প্রতিনিধি ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদী কর্মকা-কে ‘না’ বলতে দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, হরতাল-অবরোধের নামে যারা পুড়িয়ে শিশু-অন্তঃসত্ত্বা মহিলাসহ নিরীহ সাধারণ মানুষ হত্যা করছে তাদের কোন ক্ষমা নেই। জাতি তাদের কখনই ক্ষমা করবে না। শিশুদের নিরাপত্তা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত নিশ্চিত করতে সর্বোপরি দেশ ও জাতির বৃহত্তর স্বার্থে হানাহানি, সংঘর্ষ, অগ্নিসংযোগের রাজনীতি পরিহার এবং সন্ত্রাস-জঙ্গীবাদকে ‘না’ বলতে হবে। শিশুরা যাতে মর্যাদার সঙ্গে বাঁচতে পারে, এজন্য একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়ে তোলার কাজে প্রত্যেককে এগিয়ে আসতে হবে। বৃহস্পতিবার সকালে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে জাতীয় শিশু-কিশোর সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী এ সব কথা বলেন। ৪৫তম মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবস পালন উপলক্ষে ঢাকা জেলা প্রশাসন এ সমাবেশের আয়োজন করে। সন্ত্রাস-সহিংসতা দিয়ে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা আটকানো যাবে না- মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশের জনগণ সমাজে একটি শান্তিপূর্ণ পরিবেশ চায়। একটি উজ্জ্বল ভবিষ্যত প্রত্যাশা করে। বর্তমান সরকার জনগণের এ প্রত্যাশা পূরণে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমরা উন্নত দেশ চাই, শান্তিপূর্ণ সমাজ চাই। তবে সন্ত্রাস-সহিংস কর্মকা- চালিয়ে দেশের অগ্রযাত্রা আটকানো যাবে না। বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবেই। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশ হবে এবং ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত ও সমৃদ্ধশালী দেশ হবে। যেখানে আজকের শিশুরা খুঁজে পাবে একটি সুন্দর ভবিষ্যৎ ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এর আগে প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে পৌঁছালে মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আকম মোজাম্মেল হক এবং ঢাকার জেলা প্রশাসক তোফাজ্জল হোসেন মিয়া তাকে স্বাগত জানান। প্রথমেই জাতীয় পতাকা উত্তোলন করেন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় জাতীয় সঙ্গীত বাজানো হয়। অনুষ্ঠান মঞ্চে গিয়ে দাঁড়ানোর পর প্যারেড কমান্ডার সালাম জানালে প্রধানমন্ত্রী পায়রা ছেড়ে ও বেলুন উড়িয়ে শিশু-কিশোর সমাবেশের উদ্বোধন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রী একটি খোলা জীপে করে প্যারেড পরিদর্শন করেন। প্যারেড পরিদর্শনের পর স্টেডিয়ামের বিশাল পর্দায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের বজ্রকঠিন ভাষণ প্রচার করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পর বিএনসিসি, ঢাকা জেলা নৌ-স্কাউট, ভারতেশ্বরী হোমস, শহীদ আবদুর জব্বার আনসার ও ভিডিপি স্কুল ও কলেজ, ভিকারুন্নিসা স্কুল ও কলেজ, বাংলাদেশ ফিমেল এ্যাকাডেমি, তেজগাঁও শিশু পরিবারসহ ৪৬টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান প্যারেডে অংশ নেয়। প্রধানমন্ত্রী শিশু-কিশোরদের সালাম গ্রহণ করেন। বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ এবং শিশুদের শারীরিক কসরত প্রত্যক্ষও করেন শেখ হাসিনা। এরপর ভারতেশ্বরী হোমস ও পিলখানার বীরশ্রেষ্ঠ নূর মোহাম্মদ স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থীরা আকর্ষণীয় ডিসপ্লে প্রদর্শন করে। দিবসটি উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামের গ্যালারি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ও বীর শ্রেষ্ঠদের প্রতিকৃতি, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি এবং বাংলাদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ছবি দিয়ে সুসজ্জিত করা হয়। শিশু-কিশোর সমাবেশ শেষে প্রধানমন্ত্রী গণভবনে গিয়ে স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে বিশেষ ডাকটিকেট ও খাম অবমুক্ত করেন। মহান স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসে মুক্তিযোদ্ধাদের শুভেচ্ছা জানান শেখ হাসিনা। সকালে মোহাম্মদপুরের গজনবী সড়কে যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের বিশ্রামাগারে ফুল, ফল ও মিষ্টি পাঠান প্রধানমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত বিশেষ সহকারী এ্যাডভোকেট সাইফুজ্জামান শিখর, উপ-প্রেস সচিব আশরাফুল আলম খোকন ও ব্যক্তিগত সহকারী জাহাঙ্গীর আলম সেগুলো যুদ্ধাহত মুক্তিযোদ্ধাদের কাছে পৌঁছে দেন। শিশু-কিশোরদের উদ্দেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী বিএনপি-জামায়াত জোটের কঠোর সমালোচনা করে বলেন, যারা সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদী কর্মকা- চালাচ্ছে, আগুন দিয়ে শিশুদের জীবন্ত পুড়িয়ে মারছে, তাদেরকে কোন ছাড় দেয়া হবে না। যারা শিশুদের ভবিষ্যত নিয়ে ছিনিমিনি খেলছে, জাতি কখনই তাদের ক্ষমা করবে না। জনগণ তাদেরকে প্রত্যাখ্যান করেছে। তিনি বলেন, আর কোন শিশুর এভাবে মৃত্যু হোক আমরা তা কখনই প্রত্যাশা করি না। আর কেউ শিশুদেরকে স্কুলে যেতে বাধা দিতে পারবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা পহেলা জানুয়ারি শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছে দিয়েছি। কিন্তু শিশুরা স্কুলে যেতে পারছে না, ঠিকমতো পরীক্ষা দিতে পারছে না। সহিংসতার জন্য পরীক্ষার সূচী পরিবর্তনের কথা তুলে ধরে তিনি বলেন, যারা এ জঘন্য কর্মকা- করছে তাদের কোন ক্ষমা হয় না। শিশু-কিশোরদের নিয়মানুবর্তিতার প্রতি গুরুত্ব দিতে পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, তোমরা দেশ-বিদেশে সুনাম অর্জন করবে, সেটাই আমাদের লক্ষ্য। তোমরা বাবা-মা, শিক্ষকদের কথা শুনবে। আমিও তোমাদের মতো একদিন শিশু ছিলাম। তোমাদের মধ্য থেকেই একদিন কেউ প্রধানমন্ত্রী হবে। তিনি বলেন, শিশুদের উন্নত জীবন গড়ে তোলাই বর্তমান সরকারের লক্ষ্য। জাতির মর্যাদা রক্ষায় সরকার কাজ করছে। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ায় একটি জাতিরাষ্ট্র। আমাদের লক্ষ্য দেশের উন্নয়ন করা। স্বাধীনতাকে অর্থবহ করতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বিশ্বের যে কোন দেশে প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশের শিশু-কিশোরদের সাফল্য কামনা করে তিনি বলেন, দেশের প্রত্যেক উপজেলায় একটি করে মিনি স্টেডিয়াম প্রতিষ্ঠা করা হবে।
×