ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ধূমপান নিয়ন্ত্রণে

প্রকাশিত: ০৪:১০, ২৭ মার্চ ২০১৫

ধূমপান নিয়ন্ত্রণে

ধূমপান মানে বিষপান- এ কথা জেনেও বহু মানুষ এতে আমৃত্যু আসক্ত থেকে যান। খুব কম সংখ্যক দৃঢ় ইচ্ছাশক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিই এই মারাত্মক কু-অভ্যাস থেকে বেরিয়ে আসতে পারেন। অনেকটা সঙ্গদোষেই সাধারণত তরুণ বয়স থেকেই অভ্যস্ত হয়ে যায় এই বিষাক্ত নেশায়। তবে অনেকেই জানেন না ধূমপান যিনি করেন শুধু তাঁরই যে স্বাস্থ্য বিপদসঙ্কুল হয়ে ওঠে তা নয়। ধূমপানকালে সিগারেটের ধোঁয়ার আওতায় যিনি অবস্থান করেন, তিনিও থাকেন সর্বনাশা ঝুঁকির ভেতর। স্বাস্থ্যশাস্ত্রে ‘প্যাসিভ স্মোকার’ বা পরোক্ষ ধূমপায়ী বলে একটা টার্ম রয়েছে। তাই আমরা বলতে পারি কোন সমাজে প্রকাশ্যে ও ব্যাপকভাবে ধূমপানের চল থাকা মানেই হলো সে সমাজের স্বাস্থ্যগত দিক দিয়ে বিপদাপন্ন থাকা। বিষয়টি সম্পর্কে সভ্য সমাজ পুরোপুরি সচেতন হয়েও শতভাগ ঝুঁকি দূর করতে পারে না, বরং তামাকের উৎপাদন ও বিক্রয় নিয়ন্ত্রণ এবং কর আরোপসহ ধূমপান রোধে বিধি ও আইন প্রণয়ন করে ক্ষতির মাত্রা কমিয়ে রাখার প্রচেষ্টা নিয়ে থাকে। জনস্বার্থে এবং জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে ২০১৩ সালে ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইনের সংশোধন জাতীয় সংসদে পাস হয়। ওই আইনে পাবলিক প্লেসে ধূমপানের জরিমানা ৫০ থেকে বাড়িয়ে ৩০০ টাকা করা হয়। সম্প্রতি ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা-২০১৫ জারি করেছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। যাতে বলা হয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, গ্রন্থাগার, হাসপাতাল-ক্লিনিক ও এক কামরাবিশিষ্ট পাবলিক পরিবহনসহ ১০টি পাবলিক প্লেসে ধূমপান করা যাবে না। তবে অন্য যেসব স্থানে ধূমপান করা যাবে, সেখানে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান এবং ধূমপান মৃত্যু ঘটায় এ লেখা সংবলিত সতর্কতামূলক নোটিস বাংলা ও ইংরেজীতে টানিয়ে রাখতে হবে। দেরিতে হলেও ধূমপান সংক্রান্ত বিধিমালায় স্পষ্টভাবে স্থানের কথা উল্লেখ করার বিষয়টি ইতিবাচক। এখন থেকে সুনির্দিষ্টভাবে এই আইন কঠোরভাবে প্রয়োগ করা সম্ভব হবে বলে আশা করা যায়। সেজন্য অবশ্য আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার সদিচ্ছা যেমন জরুরী, তেমনি সচেতন নাগরিকদেরও এগিয়ে আসতে হবে। আমরা মনে করি ফুটপাথেও ধূমপান নিষিদ্ধ হওয়া আবশ্যক। জনসমক্ষে ধূমপানের ক্ষতিকর দিক নিয়ে প্রচারণা বাড়ানো দরকার। আইন বিষয়ে জনগণকে অবহিত করার পদক্ষেপও নিতে হবে। পাশাপাশি আরও একটি প্রাসঙ্গিক বিষয় স্মরণে রাখা দরকার। অধিক জনসংখ্যার এই দেশটির রয়েছে সীমিত চাষযোগ্য জমি। খাদ্যশস্যের জমিতে তামাক চাষ খাদ্য নিরাপত্তা, পরিবেশ, জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ। উত্তরাঞ্চলের খাদ্যভা-ার বলে পরিচিত চলনবিল এখন দখল করে নিচ্ছে তামাক চাষ, পার্বত্য এলাকায় এ বিষের ছোবল রন্ধ্রে রন্ধ্রে। তামাক চাষ শুধু খাদ্য নিরাপত্তার জন্যই হুমকি নয়, এই বিষবৃক্ষ চাষ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ এবং বিপণন সকল ক্ষেত্রে ক্ষতিগ্রস্ত করছে সংশ্লিষ্ট মানুষকে। এছাড়া রাসায়নিকের প্রভাবে জনস্বাস্থ্য, বনভূমি, পানি, জলজ প্রাণী, পরিবেশ মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তামাক চাষ করার ফলে কৃষক এবং তাদের পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন জটিল রোগে আক্রান্ত হওয়ারও আশঙ্কা থাকে। তাই তামাক চাষের ওপর নিয়ন্ত্রণ বাড়ানো দরকার। এতে পরোক্ষভাবে ধূমপানের উপকরণের সরবরাহ কমে আসবে বলে ধারণা করা যায়।
×