ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অসি বধে কোহলির হুঙ্কার

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৬ মার্চ ২০১৫

অসি বধে কোহলির হুঙ্কার

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ গায়ে ক্রিস গেইলের মতো অসুরের শক্তি নেই, শরীরটা ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের মতো পেটানোও নয়, তবু তিনি ভয়ঙ্কর! হ্যাঁ বিরাট কোহলির কথাই বলা হচ্ছে। অনেকটা ‘চকোলেট বয়’ টাইপের ভারতীয় ক্রিকেটারকে দেখলে মনে হয়, ‘ভাজা মাছটি উল্টে খেতে জানেন না!’ মাছ কতটা ওল্টাতে পারেন তা বিচারের ভার ‘বলিউড কুইন’ অনুশকা শর্মার! তবে ব্যাট হাতে ভয়ঙ্কর, প্রতিপক্ষ বোলারদের জন্য আতঙ্কের নাম কোহলি। বিশ্বের তাবত সব গোলকবাজ একবাক্যে স্বীকার করেন। গত কয়েক বছর বিশ্ব ক্রিকেটের সবচেয়ে ‘ধারাবাহিক’ আর ‘ক্লেসিক্যাল’ ব্যাটসম্যানের প্রতিমূর্ত কোহলি। টানা দ্বিতীয় শিরোপার পথে দ্বিতীয় সেমিতে আজ অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি ভারত। কোন রকম রাগ-ঢাক ছাড়াই প্রতিপক্ষকে উড়িয়ে দিতে হুঙ্কার ছুড়েছেন তিনি! ‘অসিদের হারাতে এর চেয়ে ভাল সুযোগ আর হতে পারে না। এবার দীর্ঘ অস্ট্রেলিয়া সফর থেকে শুরু করে বিশ্বকাপের এ পর্যায়ে আমরা যা অর্জন করেছি, মাঠে তা প্রয়োগের এটাই সময়। করে দেখানোর সেরা সুযোগ। আশা করছি সেমির ম্যাচটি দিয়েই ওরা আমাদের আসল শক্তিটা টের পাবে! ওদের হারাতে শারীরিক ও মানসিকভাবে শতভাগ প্রস্তুত আমরা।’ বলেন ভারতীয় ব্যাটিংয়ের ‘প্রাণ ভোমরা’ বিরাট কোহলি। বাড়তি আত্মবিশ্বাসের বড় কারণ অবশ্যই বিশ্বকাপের সাফল্য। আসর শুরু আগে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট ও ওয়ানডে দুই সংস্করণেই নাস্তানাবুদ হয় ভারত। সেই তারাই সময় মতো ঘুরে দাঁড়ায় দুর্দন্তভাবে। গ্রুপ পর্বের প্রতি ম্যাচ জিতে শতভাগ সাফল্য নিয়ে উঠে আসে কোয়ার্টার ফাইনালে। সেখানে বাংলাদেশ ম্যাচে অবশ্য ‘বিতর্কিত’ আম্পয়ারিংয়ের কলঙ্ক মাথায় নিয়ে আজকের সেমিতে ক্রিকেটের মোড়লরা। এত অল্প সময়ে এভাবে দলের বদলে যাওয়ার রহস্য জানাতে গিয়ে কোহলি আরও বলেন, ‘একটা দল হয়ে সামনে এগোতে হবেÑ আমরা সবসময় এমনটাই ভেবেছি। সেভাবেই নিজেদের শুধরে নিয়েছি। বিশ্বকাপের আগে ভাবার সময় ছিল না, ঠিক আছে বিশ্বকাপ যত এগোবে, তত নিজেদের আরও শুধরে নেয়া যাবে। আমরা জানতাম সে সুযোগ আমাদের থাকবে না। তাই যা যা ভুল শোধরাতে হবে, তা চিহ্নিত করে আমরা শুরু থেকেই কাজে নেমে পড়ি।’ ভারতীয় বোলারদের পারফর্মেন্স আলাদা করে নজর কেড়েছে চলতি বিশ্বকাপে। কোহলিও যেন পিঠ চাপড়ে দিলেন সতীর্থদের, ‘বোলাররা এই বিশ্বকাপে যেভাবে পারফর্ম করেছে, এক কথায় দুর্দান্ত। ওদের আত্মবিশ্বাস আর আগ্রাসন ছিল দেখার মতো। আমাদের এ উন্নত বোলিংয়ের জন্যই দলের চেহারাটা পাল্টে গিয়েছে। এবার আশা করব, একটা খুব ভাল দলকে হারাতে গেলে যে পারফর্মেন্সটা করা দরকার, সেমিতে তার সেটাই করে দেখাবে। যদি এটা ধরে রাখতে পারি, তাহলে দারুণ সুযোগ রয়েছে।’ দীর্ঘ অস্ট্রেলিয়া সফরে ব্যাটিংয়ের চেয়ে ভারতীয়দের বোলিং নিয়ে বেশি কথা হচ্ছি। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশনে ভাল কিছু পেতে পেসারদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। সেখানেও ব্যর্থ ছিল তারা। অথচ ৬ ম্যাচে তৃতীয় সর্বাধিক ১৭ উইকেট শিকারি মোহাম্মদ শামি। অবিশ্বাস্য বোলিং করছেন এই পেসার। ১১ উইকেট নিয়ে মোহিত শর্মাও দুর্দান্ত ছন্দে। এ পর্যায়ে বোলারদের প্রশংসা কোহলি করতেই পারেন। একই সঙ্গে নিজের দর্শন থেকেও সরে আসেননি তিনি। ‘আমি সবসময় সেরা হতে পচ্ছন্দ করি। সেঞ্চুরি, নেতৃত্ব কিংবা অন্য কোন ক্রিকেটীয় বিচারে দ্বিতীয় হতে পছন্দ করি না! আমার লক্ষ্য একটাই, বিশ্বসেরা হওয়া, তা যে বিচারেই হোক। আজও খেলা শেষে যদি সেরা (ম্যাচসেরা) হন, তবে কপাল পুড়বে অসিদের! একটি মাত্র সেঞ্চুরিতে (পাকিস্তানের বিপক্ষে) আসরে ৭ ইনিংসে মোট রান ৩০৪। গড় ৬১। মন্দ নয়। তবে কোহলির কাছ থেকে আরও বেশি কিছু চাইছেন ভক্তরা। চাওয়ার জয়াগাটা তিনি নিজেই তৈরি করেছেন। ৪ সেঞ্চুরি ও ৫ হাফ সেঞ্চুরির সাহায্যে ২০১৪ সালে করেছিলেন ১০৫৪ রান। ১৫৭ ওয়ানডের ক্যারিয়ারে ইতোমধ্যে পেরিয়েছেন ৬ হাজার রানের মাইল ফলক (৬৫৩৬), সেঞ্চুরি ২২টি! ভারতীয়রা তার মাঝে শচীনের ছাঁয়া তো আর এমনি দেখেন না। চার বছর পর বিশ্বকাপ। কোহলির করে দেখানের সেরা সুযোগ তো আজই। দুটি ম্যাচ জিতলেই যে স্বপ্নের ট্রফি।
×