ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার ঘটনায় এক যুবক আটক

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ মার্চ ২০১৫

সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী হত্যার ঘটনায় এক যুবক আটক

স্টাফ রিপোর্টার ॥ রাজধানীর উত্তর যাত্রাবাড়ীর কলাপট্টিতে সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আব্দুল কুদ্দুসের স্ত্রী রওশন আরা বেগম (৬৫) ও গৃহকর্মী কল্পনা আক্তার (১২) নিজ বাড়িতে খুন হওয়ার ঘটনায় সাঈদ হাওলাদার নামে এক যুবককে আটক করেছে পুলিশ। শাহজাহানপুর থেকে মঙ্গলবার রাতে আটক করা হয় সাঈদকে। তারপর ডিএমপির উপ-কমিশনার (ওয়ারী) মোঃ মোস্তাক আহমেদ ও যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শঙ্কর করের উপস্থিতিতে তাৎক্ষণিকভাবে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করা হয়। আটক সাঈদ এ জোড়া খুনের ঘটনার প্রধান আসামি। তার কাছ থেকে এ হত্যাকা-ের সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার বেশ কিছু আলামত উদ্ধার করা হয়েছে। শাহজাহানপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাশেদুল আলম রেলওয়ে কলোনি এলাকা থেকে সাঈদকে আটক করেন। এদিকে চাঞ্চল্যকর এ জোড়া খুনের কারণ সম্পর্কে পুলিশ এখনও কিছুই বলতে পারছে না। পুলিশের সন্দেহ হয় ডাকাতির উদ্দেশে নাকি পূর্ব পরিকল্পিতভাবে সম্পত্তি দখলের জন্য এ হত্যাকা- হতে পারে। আটক সাইদকে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে তার কাছ থেকে প্রকৃত তথ্য পাওয়া যেতে পারে। এ বিষয়ে যাত্রাবাড়ী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অবনী শঙ্কর কর অবশ্য দাবি করেন বেশ গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পাওয়া গেছে। এখনই তদন্তের স্বার্থে কিছুই বলা যাচ্ছে না। যাকে আটক করা হয়েছে তার কাছ থেকেই আরও অনেক তথ্য পাওয়া যেতে পারে। তিনি জানান, হারুন অর রশিদ হাওলাদারের ছেলে সাঈদ শাহজাহানপুরের রেলওয়ে কলোনির একটি গ্যারেজে কাজ করেন। সন্ধ্যার পর তার গতিবিধি এবং তার কাছে অনেক টাকা ও স্বর্ণালঙ্কার দেখে সন্দেহ হওয়ায় গ্যারেজের এক সহকর্মী পুলিশে খবর দেন। পরে পুলিশ তাকে আটক করে যাত্রাবাড়ী থানায় হস্তান্তর করে। একই থানার অপর একজন দারোগা জানান, ডাকাতির চেষ্টাকালে বাধা দেয়ায় তাদের হত্যা করা হয়েছে। আবদুল কুদ্দুসের পরিবারের অন্য সদস্যরা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিন তলা ওই বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে কল্পনাকে নিয়ে রওশন আরা একাকী থাকতেন। বাড়ির অপর ফ্লাটগুলো ভাড়া দেয়া। ঘটনার পর থেকে বাড়ির নিরাপত্তা কর্মী পালাতক রয়েছে বলে রওশন আরার নাতি আলাল পুলিশকে জানিয়েছেন। পুলিশ জানায়, ৫৬ উত্তর যাত্রাবাড়ীর এ এলাকাটি কলাপট্টি নামে পরিচিত। বাড়িটি পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আবদুল কুদ্দুসের। বাড়িটির নাম বাবার প্রাসাদ। সাবেক ওই পুলিশ কর্মকর্তার তিন ছেলে ও দুই মেয়ে। তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী। তিন তলা ওই বাড়ির দোতলায় কাজের মেয়েকে নিয়ে থাকতেন রওশন আরা বেগম। ঘটনাটি ডাকাতির চেষ্টায় বাধা দেয়ার কারণে ঘটেছে বলে তারা প্রাথমিকভাবে ধারণা করছেন। তবে এর নেপথ্যে জমিজমা বা পারিবারিক কোন বিরোধ আছে কিনা সেটাও খোঁজখবর নিচ্ছেন। বাসা থেকে কি কি জিনিস খোয়া গেছে তাৎক্ষণিকভাবে সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। নিহতের সন্তানদের ফোনে খবর জানানো হয়েছে। বাসার দারোয়ানের সঙ্গে খুনীদের যোগসাজশ থাকতে পারে। এদিকে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন যাত্রাবাড়ী থানার এসআই পরিমল চন্দ্র দাস। তিনি জানান, দুটি লাশের গলাকাটা অবস্থায় ফ্লোরে ও খাটের ওপর পড়ে ছিল। তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে ধারালো অস্ত্রের আঘাত রয়েছে। পুরো ঘর রক্তে ভেসে গেছে। বাসার আসবাবপত্র তছনছ করা ছিল। বাসার দরজা খোলা অবস্থায় পাওয়া গেছে। স্থানীয় লোকজন জানান, দীর্ঘদিন থেকেই ওই বাড়িতে থাকতেন রওশন আরা। তিনি নিতান্তই প্রয়োজন ছাড়া বাসা থেকে বের হন না। বাড়ির কাজকর্ম সবই করত গৃহকর্মী কল্পনা। এদিকে অপর একটি সূত্র জানায়, ওই বাড়িতে পরিচিতজন ছাড়া আর কারও পক্ষে মেইন গেট দিয়ে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। খুনীরা গৃহকর্ত্রীর পরিচিত হতে পারে। বাসার পেছনের গেট দিয়েও ডাকাত ঢুকে থাকতে পারে বলে পুলিশের সন্দেহ।
×