ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট

প্রকাশিত: ০৫:৪০, ২৬ মার্চ ২০১৫

শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট

ফিরোজ মান্না ॥ শুষ্ক মৌসুমের শুরুতেই নগরীর বিভিন্ন এলাকায় পানি সঙ্কট দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন এলাকা থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে, গত কয়েক দিন ধরেই পানি সঙ্কটে তারা নাকাল। গোসলের পানি তো দূরের কথা রান্নার কাজে ব্যবহারের পানিও তারা পাচ্ছে না। ওয়াসার পানি কিনতে গিয়েও তারা নানা বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছে। বেশি দামে পানি কিনতে হচ্ছে। তবে ওয়াসা বলছে, পানি উৎপাদনের পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় ২৯ কোটি লিটার বেশি। নগরবাসীর পানির প্রয়োজন প্রতিদিন ২১৪ কোটি লিটার। তাই পানির কোন সঙ্কটের কারণ নেই। কিন্তু বাস্তব চিত্র ভিন্ন রকম। অনেক গুরুত্বপূর্ণ এলাকাতেও পানি সরবরাহ প্রয়োজনের তুলনায় অনেক কম হচ্ছে। গত এক সপ্তাহ ধরে পানির এই সঙ্কট চলছে। পানি সঙ্কটে বেইলি রোড, শান্তিনগর, মগবাজার, পেয়ারাবাগ, আমবাগান, গাবতলা, মধুবাগ, হাজীপাড়া, শাহজাহানপুর, উত্তর শাহজাহানপুর, বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা, বাড্ডা, মুগদা, মিরপুর এলাকাসহ আরও কয়েকটি এলাকা। এসব এলাকার মানুষ ওয়াসার পানি কিনতে গিয়েও নানা রকম হয়রানিতে পড়ছেন। বেশি টাকা দিয়েও তাঁরা সময় মতো পানি পাচ্ছেন না। অভিযোগ উঠেছে, প্রতি গাড়ি পানির জন্য ৬ থেকে ৭শ’ টাকা তাদের বেশি দিতে হচ্ছে। পানি সঙ্কট শুরু হলেই ওয়াসার অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পোয়াবারো হয়ে যায়। তারা সুযোগ বুঝে গ্রাহকদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করে থাকে। ওয়াসা সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা মহানগরীর দক্ষিণ-পূর্ব এলাকায় একযোগে ৩০ থেকে ৩৫ পানির পাম্প নষ্ট হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত না করা পর্যন্ত পানি সরবরাহ স্বাভাবিক হবে না। তবে সায়েদাবাদ থেকে পানি সরবরাহ ঠিকভাবেই হচ্ছে। যে সব এলাকায় পানি সরবরাহ কম হচ্ছে, ওই সব এলাকায় পানির পাইপ পুরনো হয়ে গেছে। আবার কোন কোন এলাকায় রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও নির্মাণ কাজের জন্য পানির সমস্যা হতে পারে। তবে এই সমস্যা বড় কোন সমস্যা নয়। শুষ্ক মৌসুম শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ওয়াসার পক্ষ থেকে কিছু উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যদিও প্রতিবছরের মতো এবারও ওয়াসা লোডশেডিংয়ের ওপর দোষ চাপিয়ে দিচ্ছে। লোডশেডিংয়ের কারণে পানি উৎপাদন ঘণ্টা কমে যাচ্ছে। এর ওপর আবার কয়েকটি জেনারেটর অচল হয়ে রয়েছে। এই সময়ে লোডশেডিং না থাকলেও ইচ্ছাকৃতভাবে পাম্পগুলো দিনে বন্ধ থাকছে এক হাজার থেকে সাড়ে ১১শ’ ঘণ্টা। ঢাকা ওয়াসার ১০ জোনে পাম্প রয়েছে ৬১৩। এই পাম্পগুলোতে প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই ঘণ্টা করে লোডশেডিং হচ্ছে। নগরীতে মোট পানির চাহিদা দৈনিক ২২৭ কোটি লিটার। কিন্তু এর বিপরীতে ওয়াসা উৎপাদন করছে ২৪১ কোটি লিটার। উৎপাদনের মাত্রা বেশি দেখানো হলেও বাস্তবে এর পরিমাণ কম বলে খবর মিলেছে। সায়েদাবাদ তৃতীয় প্রকল্পে ৪০ কোটি লিটার পানি উৎপাদন হচ্ছে। এর আগেও নগরীতে পানির যে সঙ্কট ছিল এখনও তাই রয়ে গেছে। পানির জন্য একটি পাম্পের ওপর প্রায় ১০ হাজার মানুষ নির্ভর করে। যদি প্রতিদিন কারিগরি ত্রুটির কারণে দশটি পাম্প বন্ধ থাকে, তাহলে এক লাখের বেশি মানুষ পানির অভাবে থাকছে। যেসব এলাকায় পানি সমস্যা হচ্ছে সেই সব এলাকায় পানির ট্রলি বা গাড়ি দিয়ে পানি সরবরাহ করা হয়। তবে দশটি জোনে যেই পরিমাণ ট্রলি বা গাড়ি দরকার-তা নেই। ১০ জোনে পানি সরবরাহের জন্য গাড়ি বা ট্রলি দরকার ৪৮৫। কিন্তু গাড়ির আছে মাত্র ২৪০। জানা গেছে, বর্তমানে রাজধানীতে ৬০২ গভীর নলকূপ এবং ৪ পানি শোধনাগারের মাধ্যমে ২১৪ থেকে ২২৫ কোটি লিটার পানির চাহিদা রয়েছে। বর্তমানে দৈনিক ২৪৩ কোটি লিটার পানি উৎপাদন করে সরবরাহ করা হচ্ছে। এরপর নগরীতে পানি সমস্যা থেকেই যাচ্ছে। ওয়াসার পানির ৮৭ শতাংশ ভূ-গর্ভস্থ এবং অবশিষ্ট ১৩ শতাংশ ভূ-পৃষ্ঠের উৎস থেকে সংগ্রহ হচ্ছে। জানা গেছে, চলতি শুষ্ক মৌসুমে রাজধানীতে পানির সঙ্কট সমাধানে গত এক বছরে প্রায় ৮৮ গভীর নলকূপ স্থাপন করা হয়েছে। আরও ২৩ গভীর নলকূপ (১৩ নতুন এবং ১০ প্রতিস্থাপন) স্থাপনের কাজ চলছে। বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ের সময় পানির উৎপাদন অব্যাহত রাখতে মোট ৬০২ পাম্প স্টেশনের মধ্যে ৪৩৩টিতে স্থায়ী জেনারেটর স্থাপন করা হয়েছে। পাশাপাশি জরুরী ব্যবহারের জন্য ৬০ ভ্রাম্যমাণ (মোবাইল) জেনারেটর রয়েছে। যেখানেই বিদ্যুতের লোডশেডিং দেখা দেবে সেখানেই ভ্রাম্যমাণ জেনারেটর পৌঁছে যাবে। এছাড়া লোডশেডিংয়ের বিষয়টি বিবেচনায় রেখে ২০৪ পাম্প স্টেশনে ডুয়েল লাইন বিদ্যুত সংযোগ দেয়া হয়েছে। জরুরী অবস্থা মোকাবিলায় ৩৬ পানির গাড়ি, ১৬ ট্রাক্টর এবং ২৮ ট্রলি প্রস্তুত রাখা হয়েছে। কোন এলাকায় পানি সমস্যা দেখা দিলে পানির গাড়ি দিয়ে পানি পৌঁছে দেয়া হবে। শুষ্ক মৌসুমে কয়েকটি কারণে পানি সরবরাহে ঘাটতি হয়।
×