ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

হাজী সেলিমের সরে দাঁড়ানোর গুঞ্জন

ঢাকায় বিএনপির মিন্টু, সালামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ, চট্টগ্রামে মঞ্জুর

প্রকাশিত: ০৫:২৪, ২৬ মার্চ ২০১৫

ঢাকায় বিএনপির মিন্টু, সালামের মনোনয়নপত্র গ্রহণ, চট্টগ্রামে মঞ্জুর

জনকণ্ঠ রিপোর্ট ॥ নির্বাচনী মাঠে বিএনপি। মনোনয়ন কিনতে শুরু করেছেন সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থীরা। বুধবার ঢাকায় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছেন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আওয়াল মিন্টু ও মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব আবদুস সালাম এবং বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া। এছাড়াও আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি ও বিকল্পধারা নেতা মাহি বি চৌধুরী মনোনয়ন কিনেছেন। বিএনপির পক্ষে ‘শত নাগরিক কমিটি’ প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে ছয় দফা দাবি তুলে ধরেছেন। জবাবে সিইসি কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বলেছেন, মনোনয়ন দাখিলের সময় বাড়ানো হবে না। এদিকে চট্টগ্রামে বিএনপির মেয়র প্রার্থী হলেন সাবেক মেয়র মনজুর আলম। চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলনের পক্ষ থেকে বুধবার সন্ধ্যায় তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বহিষ্কৃৃত নেতা সোলায়মান আলম শেঠকে চট্টগ্রামে মেয়রপদে সমর্থন দিয়েছে এরশাদের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি। এদিকে ঢাকা দক্ষিণে সাংসদ হাজী সেলিম নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াচ্ছেনÑ এমন গুঞ্জন রয়েছে। প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব জানতে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) কাছে চিঠি দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন বিএনপি প্রার্থীরা ॥ ডিসিসি উত্তরে মেয়রপদে বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা আবদুল আউয়াল মিন্টু ও দক্ষিণে বিএনপির অর্থবিষয়ক সম্পাদক আব্দুস সালাম মনোনয়ন ফরম সংগ্রহ করেছেন। বুধবার বিকেলে স্ব-স্ব রির্টানিং অফিসারের কার্যলয় থেকে বিএনপির এই দুই নেতার পক্ষে মনোনয়ন সংগ্রহ করা হয়। মিন্টুর পক্ষে মনোনয়ন উত্তোলন করছেন তাঁর ছেলে তাফসীর আউয়াল ও সালামের মনোনয়ন ফরম উত্তোলন করেন বিএনপিকর্মী ফখরুল ইসলাম সেলিম। তাফসীর আউয়াল মনোনয়ন ফরম তোলার বিষয়টি নিশ্চিত করে সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, তাঁর বাবা বিএনপির সমর্থন নিয়েই নির্বাচন করবেন। আগামী রবিবার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেয়া হবে। ডিসিসি উত্তরে মেয়রপদে বিকল্প ধারার মহাসচিব মাহী বি চৌধুরীর পক্ষে সাইফুর রহমান শোভন মনোনয়ন সংগ্রহ করেন। অন্যদিকে বিএনপি ঘরানার শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূঁইয়া ডিসিসি দক্ষিণে মনোনয়নপত্র তুলেছেন। এছাড়াও দক্ষিণ থেকে মনোয়ন সংগ্রহ করেছেন আওয়ামী লীগের সাবেক সাংসদ গোলাম মাওলা রনি। ২৯ দলীয় জোটের প্রার্থী ঘোষণা ॥ আসন্ন ঢাকা (উত্তর-দক্ষিণ) সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন ব্যারিস্টার নাজমুল হুদার নেতৃত্বাধীন জোট বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (বিএনএ)। এ জোট থেকে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে ন্যাশনাল কংগ্রেসের চেয়ারম্যান শেখ শহিদুজ্জামান এবং দক্ষিণের প্রার্থী মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীর নাতি ও বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টির (বিএমপি) মহাসচিব আবু হামিদুর রেজা খান ভাসানী। বুধবার জাতীয় প্রেসক্লাবের কনফারেন্স লাউঞ্জে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন বিএমপি সভাপতি ব্যারিস্টার নাজমুল হুদা। নাজমুল হুদার বাংলাদেশ মানবাধিকার পার্টিসহ (বিএমপি) ২৯টি দল নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ ন্যাশনাল এ্যালায়েন্স (বিএনএ) থেকে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনে দুইজন প্রার্থীকে সমর্থন দেয়া হয়। হাজী সেলিমকে নিয়ে নানা গুঞ্জন ॥ মঙ্গলবার রাতে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন হাজী সেলিম ও সাঈদ খোকন। সাক্ষাতপর্বে হাজী সেলিমকে দক্ষিণের মেয়র নির্বাচন পদ থেকে সরে দাঁড়ানোর নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা। সাঈদ খোকনকে মেয়র পদে সমর্থন দেয়া হয় আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে। এরপর থেকেই নির্বাচন থেকে সেলিম সরে দাঁড়াচ্ছেন কিনা- এ নিয়ে গুঞ্জন চলছে। বুধবার রাত পর্যন্ত বিষয়টি পরিষ্কার করেননি তিনি। তবে সাংসদ পদ ছেড়ে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র হতে মনোনয়নপত্র নেয়া হাজী সেলিম হঠাৎ নিষ্ক্রিয় হয়ে যান। গত কয়েক দিন সিটি নির্বাচন নিয়ে সরব থাকলেও ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগের এই যুগ্মসাধারণ সম্পাদক বুধবার সকাল থেকে নিজের লালবাগের বাসায় আছেন। তিনি কারও সঙ্গে দেখা করছেন না, ফোনও ধরছেন না। সকাল থেকে জনা ত্রিশেক কর্মী-সমর্থক ওই বাসার নিচতলায় হাজী সেলিমের অফিসে অপেক্ষায় থাকলেও কর্মচারীরা বলছেন, ‘স্যার ঘুমাচ্ছেন। এখন কথা বলবেন না।’ এ পরিস্থিতিতে কর্মীদের মধ্যেও কানাঘুষা শুরু হয়েছে। বলা হচ্ছেÑ স্বতন্ত্র এ সংসদ সদস্য সিটি নির্বাচন থেকে সরে আসছেন। হাজী সেলিমের ব্যক্তিগত সচিব মহিউদ্দিন হেলাল বলেন, তাঁর পক্ষ থেকে গতকাল স্পীকারকে পদত্যাগপত্র দেয়া হয়েছিল। কিন্তু তা গ্রহণ করা হয়নি। তবে সময় আছে। আমরা এখনও আশাবাদী। বলা হচ্ছে- সাঈদ খোকনকেই এ নির্বাচনে সমর্থন দিচ্ছে আওয়ামী লীগ। আর এ জন্য হাজী সেলিমকে সরে দাঁড়াতে বলা হয়েছে। এ বিষয়ে দৃষ্টিআকর্ষণ করলে সাঈদ খোকন বুধবার বলেন, হাজী সেলিম নির্বাচনে যাচ্ছেন না বলে তিনি শুনেছেন। তবে দলের উর্ধতন কেউ এ ব্যাপারে তাঁকে নিশ্চিত করেননি। ইসিতে সিপিবি-বাসদ ও হেলেনার চিঠি ॥ ঢাকা সিটি কর্পোরেশন (ডিসিসি) উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে আচরণবিধি যথাযথভাবে পালন করার বিষয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদকে (সিইসি) অনুরোধ জানিয়ে চিঠি দিয়েছেন উত্তরের সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী হেলেনা জাহাঙ্গীর। বুধবার তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ে এসে সিইসির একান্ত সচিব এ কে এম মাজহারুল ইসলামের কাছে এ চিঠি জমা দেন। এদিকে আসন্ন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে সৎ, যোগ্য ও শ্রমজীবী সাধারণ মানুষের অংশগ্রহণ, সকলের জন্য সমান সুযোগ নিশ্চিতসহ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত করার দাবিতে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কাছে স্মারকলিপি দিয়েছে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি ও বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের সমন্বয়ে গঠিত জোট। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে (ডিএনসিসি) আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সম্ভাব্য মেয়র প্রার্থী এখলাছ উদ্দিন মোল্লাকে কারণ দর্শানোর নোটিস দিয়েছে উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা। চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে (চসিক) মেয়র প্রার্থী হিসেবে বিএনপির সমর্থনে বর্তমান মেয়র এম মনজুর আলমের নাম চূড়ান্ত হয়েছে। কেন্দ্র থেকে ঘোষণার বাকি মাত্র। গতবারের মতো এবারও তিনি বিএনপির সমর্থনে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন মনোনীত প্রার্থী হয়েছেন। বুধবার সন্ধ্যায় নগরীর জিইসি কনভেনশন হলে চট্টগ্রাম উন্নয়ন আন্দোলন সাংবাদিক সম্মেলন আহ্বান করে তাঁকে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। নাগরিক আন্দোলনের আহ্বায়ক প্রফেসর আবুল কালাম এ ঘোষণা দেন। বিএনপির সমর্থনে মেয়র প্রার্থিতা নিয়ে কোন্দল থাকলেও অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী নগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ডাঃ শাহাদাত হোসেনকে স্থানীয় পর্যায়ের দলের শীর্ষ নেতারা চাচ্ছেন না। যদিও তাঁর প্রতি দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সমর্থন রয়েছে বলে তিনি আগেও যেমন দাবি করেছেন এখনও দাবি করে যাচ্ছেন। তবে চট্টগ্রামে বিএনপির দুই প্রভাবশালী নেতা নগর বিএনপির সভাপতি ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী এবং দলীয় ভাইস চেয়ারম্যান সাবেক মন্ত্রী আবদুল্লাহ আল নোমান চট্টগ্রামে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনজুর আলমের প্রতিই সমর্থন দিয়েছেন। ফলে কেন্দ্র থেকে বাকি রয়েছে আনুষ্ঠানিক ঘোষণার। অপরদিকে, আওয়ামী লীগের সমর্থন নিয়ে চট্টগ্রামে দলের নগর শাখার সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দিন দলসমর্থিত সাবেক তিনবারের মেয়র আলহাজ এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর মতো চট্টগ্রাম নাগরিক উন্নয়ন কমিটির ব্যানারেই মেয়রপদে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। এ লক্ষ্যে ৫০১ সদস্যবিশিষ্ট কমিটিও করা হয়েছে, যার আহ্বায়ক সাবেক এমপি এম ইসহাক মিয়া এবং সদস্য সচিব হয়েছেন মহিউদ্দিন চৌধুরী। চট্টগ্রামের রাজনৈতিক অঙ্গনে আসন্ন চসিক নির্বাচন নিয়ে নানা জল্পনা-কল্পনার ডালপালা ইতোমধ্যে বিস্তার লাভ করেছে। আলোচনার প্রধান বিষয় ছিল বিএনপি এ নির্বাচনে আসছে কী আসছে না তা নিয়ে। বুধবার পর্যন্ত বিএনপির পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিক কোন ঘোষণা না এলেও দলের নেতৃবৃন্দ ও সম্ভাব্য প্রার্থীদের দৌড়ঝাঁপ দেখে ইতোমধ্যে নিশ্চিত হওয়া গেছে এ নির্বাচন তারা বয়কট করবে না। শুধু তাই নয়, একক প্রার্থী দিতেও তারা হিমশিম খাবে। বিশেষ করে কাউন্সিলর পদে একাধিক প্রার্থীর তৎপরতা লক্ষণীয়। অনুরূপভাবে আওয়ামী লীগের সমর্থনে মেয়রপদে একক প্রার্থী করা সম্ভব হলেও কাউন্সিলর পদে তা হয়ত সম্ভব হবে না বলে অবস্থাদৃষ্টে মনে হচ্ছে। দলের পক্ষ থেকে ইতোমধ্যেই ঘোষণা দেয়া হয়েছে চসিকের ৪১ ওয়ার্ডে এবং সংরক্ষিত ১৪টি কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগ সমর্থিত একাধিক প্রার্থী ইতোমধ্যে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন। গত মঙ্গলবার নগরীর একটি কমিউনিটি সেন্টারে চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ এবং মহানগর আওয়ামী লীগের যৌথ বর্ধিত সভায় প্রতিটি পদে একক প্রার্থিতা দেয়ার সিদ্ধান্ত প্রদান করা হয়েছে। দলের সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানানো হয়েছে, সম্ভবত একক প্রার্থিতা ধরে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। শনিবার পদত্যাগ করছেন মনজুর আলম ॥ মেয়র পদে এবারও বিএনপির সমর্থনে প্রার্থিতা নিশ্চিত হওয়ায় আগামী শনিবার ২৮ মার্চ মেয়র মনজুর আলম পদত্যাগের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। জনকণ্ঠকে বুধবার বিকেলে বিষয়টি তিনি নিজেই নিশ্চিত করেছেন। আজ মহান স্বাধীনতা দিবসের সরকারী ছুটি। কাল শুক্রবার সরকারী বন্ধ। শনিবারও বন্ধ। কিন্তু রবিবার মনোনয়নপত্র গ্রহণ ও জমা দেয়ার শেষদিন হওয়ায় তিনি শনিবার চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তার মাধ্যমে স্থানীয় সরকার পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রীর কাছে তার পদত্যাগপত্র জমা দেবেন। এ লক্ষ্যে বুধবার তিনি তার শেষ সাধারণ সভা ও অফিস করেছেন। ৭ম দিনে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ৫৭৯ ॥ সিটি নির্বাচনে মনোনয়নপত্র গ্রহণের ৭ম দিন বুধবার মেয়র, সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর ও সাধারণ কাউন্সিলর পদের জন্য মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন মোট ৯৩ জন। এর মধ্যে মেয়র পদে ২ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ২১ জন ও সাধারণ কাউন্সিলর পদে ৭০ জন মনোনয়নপত্র নেন। এ নিয়ে মেয়র পদে ১৩ জন, সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে ৮০ জন ও সাধারণ ওয়ার্ড কাউন্সিলর পদে ৪৮৬ জন মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করলেন। মেয়র পদে বুধবার যারা মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেছেন তারা হলেন- স্বতন্ত্র প্রার্থী আবুল মনজুর ও শফিকুল আলম। এর আগে যে ১১ জন মনোনয়নপত্র গ্রহণ করেন তারা হলেন- বিএনপির এডভোকেট আবদুস সাত্তার, ইসলামিক ফ্রন্টের এমএ মতিন ও স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ শাহজাহান, আওয়ামী লীগ সমর্থিত আজম নাছির উদ্দিন, জাতীয় পার্টির সোলায়মান আলম শেঠ, ইসলামিক ফ্রন্টের হোসাইন মোহাম্মদ মুজিবুল হক, আরিফ মঈনুদ্দিন, গাজী মোহাম্মদ আলাউদ্দিন, সৈয়দ সামসুজ্জোহা, ফখরুদ্দিন চৌধুরী ও গোলাম ইয়াজদানি। আচরণবিধি লঙ্ঘনের দায়ে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের এক নারী কাউন্সিলর প্রার্থীকে শোকজ করেছে রিটার্নিং অফিসারের কার্যালয়। ফারজানা জাবেদ নামের এ প্রার্থীর বিরুদ্ধে এলাকায় নির্বাচনী গণসংযোগের নামে বিভিন্ন ধরনের উপঢৌকন বিতরণের অভিযোগ আসে। বিএনপি সমর্থিত শত নাগরিক কমিটির ছয় দফা ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় ২/৩ দিন পেছানোসহ ছয়টি প্রস্তাব নিয়ে ইসি গেলেন বিএনপি সমর্থিত সংগঠন শত নাগরিক কমিটি। এ সব প্রস্তাব নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা। তাদের অন্যান্য প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে প্রার্থী ও নেতাকর্মীদের নির্বিঘেœ নির্বাচনী প্রচারণায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়া। মামলা ও গ্রেফতারের ভয়ে যারা পালিয়ে আছে তাদেরকে মুক্ত পরিবেশে নির্বাচনের সুযোগ দেয়া। নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক মামলা গ্রেফতার ও নির্যাতন বন্ধ করে অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের আয়োজন করা। এছাড়া আলোচনায় দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ থাকা বিএনপির দুটি কার্যালয় উন্মুক্ত করে নির্বাচনী প্রচারের সুযোগ প্রদান করা। নির্বাচনে সেনা মোতায়েন ও নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশী পর্যবেক্ষক রাখার দাবি জানানো হয় এ সময়। এছাড়াও মেয়র নির্বাচিত হওয়ার পর তাদেরকে যেন কোন অজুহাতে বরখাস্ত করা না হয় সে বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়। তবে সময় বাড়ানো এ প্রস্তাবকে নাকচ করে দিয়েছে ইসি। বুধবার শত নাগরিক কমিটির বিএনপির পক্ষে এ সব দাবি দাওয়া নিয়ে কমিশন সচিবালয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদের সঙ্গে বৈঠক করেন। শত নাগরিক কমিটির পক্ষে এ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য্য প্রফেসর ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ, অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, সুপ্রীমকোর্ট বার সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন, গণস্বাস্থ্য নগর কেন্দ্রের পরিচালক ডাঃ জাফরউল্লাহ চৌধূরী, কবি আব্দুল হাই শিকদার, সুপ্রীমকোর্টের আইনজীবী ফাহিমা শারমিন মুন্নী। বুধবার বিকেল তিনটার পর প্রফেসর এমাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বে শতনাগরিক কমিটির সদস্যরা কমিশনে উপস্থিত হন। এরপর বিএনপির পক্ষে তারা ছয়টি প্রস্তাবনা নিয়ে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠকে মিলিত হন। প্রায় দু’ঘণ্টা বৈঠক শেষে ড. এমাজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, তাদের দাবি ইসি ইতিবাচক হিসেবে নিয়েছে। বৈঠকে বিএনপির পক্ষ থেকে ছয় দফা প্রস্তাবনায় বলা হয় দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠার আন্দোলন চলাকালে হঠাৎ করেই দীর্ঘ কয়েক বছর ধরে বন্ধ থাকা ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার কারণ নগরবাসীর কাছে এ নির্বাচন এ দুর্বোধ্য হয়ে পড়েছে। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন হলেও বিভিন্ন দল সমর্থিত প্রার্থীরা এতে অংশগ্রহণ করেন। দল সমর্থক ভোটাররা উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করে থাকেন। কিন্তু এবারের পরিস্থিতি অনেকটাই ভিন্ন। দেশের সচেতন নাগরিক হিসেবে কয়েকটি প্রাসঙ্গিক বিষয়ে মনোযোগ আকর্ষণ করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তা বাস্তবায়নের নিশ্চিতায় বিধানের অনুরোধ করছি। ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে অংশগ্রহণে আগ্রহী প্রার্থীদের অনেকেই রাজনৈতিক উদ্দেশ্য প্রণোদিত মিথ্যা মামলায় ও হয়রানির শিকার হয়ে গ্রেফতার হয়েছেন। অনেকেই গ্রেফতার এড়াতে গাঁ ঢাকা দিয়েছেন। এসব সম্ভাব্য প্রার্থীরা যাতে অন্যান্য প্রার্থীর মতো মুক্ত অবস্থায় প্রকাশ্যে ও নিরাপদে নির্বাচন কার্যক্রম চালাতে পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা পালনের আহ্বান জানানো হয়। প্রার্থীদের পক্ষে নির্বাচনী প্রচরণা চালানোর জন্য যারা দায়িত্বপ্রাপ্ত হবেন তাদের কেউ মিথ্যা মামলায় আবদ্ধ থাকলে বা গ্রেফতার এড়াতে গা ঢাকা দিয়ে থাকলে তারা যাতে নির্বিঘেœ নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশ নিতে পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে শতনাগরিকের পক্ষ থেকে। এছাড়া তাদের পক্ষে প্রস্তাবনায় আরও উল্লেখ করা হয় সরকারী দল সমর্থিত প্রার্থীদের বিশেষ সুবিধা দিতে অন্য প্রার্থীদের কিংবা তাদের নির্বাচনী প্রচারণায় যুক্ত নেতাকর্মীদের মিথ্যা অভিযোগে আটক করার কিংবা গা ঢাকা দিতে বাধ্য করার প্রশাসনিক অপপ্রয়াস রোধে নির্বাচন কমিশন কি ব্যবস্থা নেবে তা নিয়েও বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। আলোচনায় তাদের পক্ষে থেকে আর বলা হয় অস্ত্র বা পেশীশক্তির প্রয়োগ কার্যকরভাবে রোধ করার মাধ্যমে নির্বাচনকে শান্তিপূর্ণ অবাধ ও সুষ্ঠু করার লক্ষ্যে নির্বাচন কমিশন কি ধরনের পদক্ষেপ নেবে তাও জানতে চাওয়া হয় কমিশনের কাছে। নির্বাচনে প্রচারকর্মী ও পোলিং এজেন্টদের জীবন ও সম্ভ্রমের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার এবং নির্ভয়ে নিশ্চিন্তে দায়িত্ব পালনের বিষয়ে কমিশনের গৃহীত ব্যবস্থা সম্পর্কেও এ সময় জানতে চাওয়া হয়। সময়ের স্বল্পতা বিবেচনা নিয়ে অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের স্বার্থে মনোনয়নপত্র জমাদানের সময় দু’তিনদিন বৃদ্ধি করার বিষয়টি সক্রিয়ভাবে বিবেচনা করার আহ্বান জানানো হয়। বৈঠকে শত নাগরিকের পক্ষ থেকে বলা হয় অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য এ সব প্রস্তবনা নির্বাচন কমিশনের প্রকাশ্য এবং তা বাস্তবায়নে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়ার আহ্বান জানানো হয়। বেলায় ৫টায় বৈঠক শেষে বেরিয়ে এসে অধ্যাপক এমাজউদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, সবাই চায় সুন্দরভাবে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হোক। কিন্তু তার আগে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী সব প্রার্থীকে সমান সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ নির্বাচনের যেন কোন প্রকার ভয়ভীতির সুযোগ না থাকে। তিনি বলেন, তিনি বলেন নির্বাচিত হওয়ার পর তাকে বরখাস্ত করা গ্রহণযোগ্য নয়। জনগণ ছাড়া নির্বাচিত প্রতিনিধিরদের বরখাস্ত করার কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন আলোচনায় নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমাদানের জন্য দু’তিনদিন সময় পেছানোর কথা বলা হয়েছে। কিন্তু তফসিল পিছিয়ে দেয়ার দাবি কোন জোরাল কোন দাবি নয়। বহু ভোটার আত্মগোপনের রয়েছে। নির্বাচনের সময় তারা যেন জামিন পেতে পারে। তবে এ নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে সুপ্রীমকোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি এ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে বিএনপি। আমরা বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়াকে বলেছি, নির্বাচন সুষ্ঠু হলে সে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত। নেত্রী বলেছেন, এ বিষয়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। এমাজউদ্দিন আহমেদ এ বিষয়ে বলেন, নির্বাচন হওয়া উচিত। হেরে গেলেও নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা উচিত এ বিষয়টি তিনি বিএনপি নেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে জানিয়েছেন। এদিকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিব উদ্দিন আহমেদ বিএনপির দাবির প্রেক্ষিতে বলেন, নির্বাচনে মনোণয়পত্র দাখিলের জন্য প্রার্থীদের যথেষ্ট সময় দেয়া হয়েছে। এছাড়া মনোনয়নপত্র উত্তোলন ও জমাদানের জন্য শুক্র ও শনিবার ব্যাংক খোলা রাখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এ প্রেক্ষিতে নির্বাচনের সময় পেছানোর কোন সুযোগ নেই। তিনি বলেন, হঠাৎ করেই নির্বাচন আয়োজনের ব্যবস্থা করেনি ইসি। এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত সুবিধাজনক সময়ে নির্বাচনের পরিকল্পনা ছিল। পারিপার্শ্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সুষ্ঠু নির্বাচনের আশ্বাস দিয়ে আরও বলেন, অতীতের মতো এবারও সুষ্ঠু নির্বাচন হবে। শত নাগরিক কমিটি বলেছে, সবার জন্য নির্বাচনের সমান সুযোগ নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছে। এক্ষেত্রে বিএনপির নেতাকর্মীদেরে পালিয়ে থাকা ও আত্মগোপনে থাকার বিষয়টি উঠে এসেছে। তিনি বলেন, কেউ যদি পালিয়ে বা আত্মগোপনে থাকে তাদের আমরা কিভাবে খুঁজে বের করব।
×