ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানী ভূত

প্রকাশিত: ০৩:৫২, ২৬ মার্চ ২০১৫

পাকিস্তানী ভূত

১৯৪৭ সালে সেই যে পাকিস্তানী ভূত বাংলাদেশের জনগণের ঘাড়ে চেপেছিল, তা থেকে আজও আমরা মুক্তি পাইনি। নানাভাবে, নানাপথে, ঘুরেফিরে আজও হরেক কিসিমের ভেল্কিবাজির খেল দেখাচ্ছে আমাদের। এটা হরহামেশাই বড্ড জ্বালাতন করছে! মুক্তিযুদ্ধের আগের তেইশ বছর, মুক্তিযুদ্ধের নয় মাস এবং স্বাধীনতার পরের প্রায় তেতাল্লিশ বছর ধরে চলছে এই ভানুমতির খেল। শুরুটা হয়েছিল লাহোর প্রস্তাবের মাধ্যমেই; ১৯৪০ সালে। কথা ছিল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ এলাকা নিয়ে গঠিত হবে কয়েকটি দেশ (ঝঃধঃবং)। তখন কোন নাম ঠিক হয়নি। পাকিস্তান নামটি পরে এসেছে। কিন্তু জিন্নাহ গংদের কূটতর্কে বলা হলো; ওটা ছিল নেহাত টাইপের ভুল। হাশিম, হক ও সোহরাওয়ার্দী তখন তা কেন মেনে নিয়েছিলেন তা ঐতিহাসিকগণই বলতে পারেন চুলচেরা বিশ্লেষণ করে। আমি সাধারণ মানুষ। সে আলোচনায় যাচ্ছি না। কারণ সেটা গবেষণার বিষয়। তবে সেই সময় নেতাদের যথাযথ দূরদৃষ্টির অভাবে বা আপোসকামী মনোভাবের খেসারত আমাদের আজও দিয়ে যেতে হচ্ছে; এতে কোন সন্দেহ নেই। পাকিস্তান এখনও মনেপ্রাণে বাংলাদেশকে মেনে নেয়নি। তারা এখনও বাংলাদেশকে দুর্বল করার নানাবিধ পাঁয়তারা করে যাচ্ছে; ওটা বাংলাদেশের সকল নাগরিকের মনে রাখা দরকার। বাংলাদেশ উন্নতি করে পাকিস্তানের চেয়ে ভাল হোক, এটা পাকিস্তান কখনই চায় না। তাই বাংলাদেশের জনগণ যখন বেশ জোরেশোরে নারীশিক্ষাসহ জীবনের সকল ক্ষেত্রে নারীদের উন্নয়নের অংশ করতে পেরেছে, তখন এটা পাকিস্তানীদের গাত্রদাহের অন্যতম কারণ। নোবেলবিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন যখন তথ্য-উপাত্ত দিয়ে দেখান যে বাংলাদেশ দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশ, এমনকি ভারতের চেয়েও নারীশিক্ষায় ও স্বাস্থ্যসেবায় এগিয়ে গেছে এবং অচিরেই শুধু এই কারণেই বাংলাদেশ আরও এগিয়ে যাবে; তখন পাকিস্তানের মনোবেদনা বাড়বে বই কমবে না; এটা বলাই বাহুল্য। বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থায় ও পৃথিবীব্যাপী শান্তিরক্ষায় বাংলাদেশের সেনাবাহিনী এবং পুলিশ বাহিনীতে নারীদের অংশগ্রহণ ও সুনামের জন্য পাকিস্তানের হিংসা তো হবেই। ইদানীং যুক্তরাষ্ট্র এক ডলারের বিনিময় মূল্য পাকিস্তানী রুপিতে প্রায় এক শ, আর বাংলাদেশী টাকায় তা সাতাত্তর। প্রায় পঁচিশ শতাংশ বেশি। অর্থনৈতিক উন্নয়নের এটা একটা বড় সূচক। বাংলাদেশ কিভাবে এতটা এগিয়ে গেল তা পাকিস্তানীদের কাছে এক বিরাট বিস্ময়। তারা কোনভাবেই এটাকে মেনে নিতে পারছে না। এমনকি তরুণ প্রজন্মের পাকিস্তানীরাও এটা মেনে নিতে পারছে না। আমাদের তরুণ ক্রিকেট খেলোয়াড়দের আন্তর্জাতিক বিজয়ের সময় আমরা যখন ভীষণভাবে গর্বিত, তখন পাকিস্তানী তরুণ ক্রিকেটাররা অত্যন্ত নোংরাভাবে আমাদের তরুণদের এই বিজয়কে হেয় করে সামাজিক মাধ্যমে মন্তব্য করে। কী জঘন্য এদের মনোভাব। ভেবেছিলাম তরুণ প্রজন্ম পুরনো আবর্জনা ঝেরে ফেলে কিছুটা সাফ সুতরো হবে। কিসের কি? সেই খাড়া-বড়ি-থোড় আর থোড়-বড়ি-খাড়া এবারে একটি ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার কথা বলি। অতি সম্প্রতি এক অবসরপ্রাপ্ত পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর ডাক্তারের সঙ্গে আলাপ হলো। আলাপের পাঁচ মিনিটের মাথায় তিনি বলে বসলেন, বাঙালী মুসলমানরা নিচু জাতের মুসলমান। কারণ তারা বেশিরভাগ নমঃশূদ্র থেকে মুসলমান হয়েছে। আর পাকিস্তানীরা উঁচুজাতের মুসলমান। আমি তাকে খুব শক্তভাবে জানিয়ে দিলাম যে, তার সঙ্গে আমি একমত নই। কারণ একজন মুসলমান হিসেবে এটা বিশ্বাস করা গোনাহ্র কাজ। সেই ডাক্তার সাহেব কিছুই বলতে পারেননি। কারণ তিনি জানেন, এটি ঐতিহাসিক সত্য। তবে তার আচরণে বুঝতে পারি তিনি কতটা অখুশি হয়েছেন। এখানে সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো যে, ওই ডাক্তার সাহেব আমার চেয়ে বেশ ছোটখাটো আকারে ছিলেন। তাই তিনি কোনভাবেই নিজেকে উঁচু ও আমাকে নিচু ভাবতে পারেন না। আমি নগণ্য সাধারণ দশজন বাঙালীর মতো; উচ্চতায় পাঁচ ফুট ছয় ইঞ্চি, গায়ের রং ‘মায়ে কয় উদুল শ্যাম, বন্ধুরা কয় শ্যামলা’ গোছের। কিন্তু ওই যে মনের গহিনে ধারণা জন্মে গেছে বাঙালী মানেই নিচু; সে ধারণা থেকে আর বের হতে পারেননি। এটাই হলো সত্যিকারের পাকিস্তানী ভূত। পাকিস্তানের রন্ধ্রে রন্ধ্রে এটা মিশে আছে। প্রশাসন বলুন, সামরিক বাহিনী বলুন বা জাতীয় সংসদই বলুন; কেউই এ থেকে আলাদা নয়। পাকিস্তানী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী নিসার সাহেবের সাম্প্রতিক চরম বাংলাদেশবিরোধী গলাবাজি থেকেই তা স্পষ্ট বোঝা যায়। বাংলাদেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রায়, নারী উন্নয়নে, স্বাস্থ্য পরিসেবায় জাতিসংঘের মানদ-ে বেশ উঁচুতে অবস্থান করায় পাকিস্তানীরা বেশ আশাহত। তারা ভেবেছিল বাঙালী মুসলমানরা হচ্ছে নিচু জাতির, এরা কখনই পাকিস্তানের উঁচু জাতির মুসলমানদের সমান হতে পারবে না। এই ধারণা যখন প্রতি পদে পদে ভুল প্রমাণিত হতে লাগল, তখন তাদের গাত্রদাহ সেইসঙ্গে বাড়তে থাকল। তাই আমাদের দেশের মাঝে নানাবিধ সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের এরা বড় সমর্থক। এদের দূতাবাসের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা অত্যন্ত জঘন্যভাবে জালমুদ্রা ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ও সন্ত্রাসীদের মদদদাতা বোমা তৈরির কারিগর ও বোমা তৈরির সরঞ্জামসহ নানাবিধ সহায়তা করাই মনে হয় এদের আসল কাজ। অবশ্য এ কথা তখন সর্বজনবিদিত যে, বর্তমান পেট্রোলবোমা সন্ত্রাসের শিরোমণি খালেদা জিয়া, তাঁর প্রধান উপদেষ্টা ও পরিকল্পনাকারী সন্ত্রাসী নেতা তারেক রহমান ও গায়েবি সন্ত্রাসী সালাহউদ্দিন এবং বুলু, সবাই এই পাকিস্তানী ভূতির ক্রীড়নক হিসেবে পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা আইসিসের হুকুম মোতাবেক বাংলাদেশে মানুষ পুড়িয়ে হত্যা করছে। এটা হচ্ছে আমাদের স্বাধীনতার মাস। এ মাসে শপথ নিতে হবে এই পাকিস্তানী ভূতকে আমাদের ঘাড় থেকে নামাতে হবে। যত দ্রুত আমরা এটা করতে পারব, ততই আমাদের মঙ্গল। শেখ হাসিনাসহ বাংলাদেশ সরকারের সকল পর্যায়ের দায়িত্বপ্রাপ্তদের স্মরণ করিয়ে দিতে চাই- পাকিস্তানী ভূতকে নরম ভাববেন না। আমি গ্রামের ছেলে। তাই মনে করিয়ে দিতে চাই। সাবধান! পচা শামুকে পা কাটবেন না। [email protected]
×