ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পরিকল্পনা কমিশনের মূল্যায়ন

অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি

প্রকাশিত: ০৬:১২, ২৫ মার্চ ২০১৫

অর্থনীতিতে স্বাভাবিক গতি

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যেই স্বাভাবিক গতিতে এগিয়ে চলছে দেশের অর্থনীতি। সামষ্টিক ও ব্যাষ্টিক তথ্যাদি তুলে ধরে এমনই বার্তা দিয়েছে পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগ (জিইডি)। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলেছে, মূল্যস্ফীতি, বিদেশে শ্রমিক রফতানি, এডিপি বাস্তবায়ন, রফতানি আয়, আমদানি ব্যয়, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ, রাজস্ব আয়, বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান, এসএমই ঋণ বিতরণÑ এসব ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এ বিষয়ে প্রতিবেদন তৈরির দায়িত্বপ্রাপ্ত সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি ব্যাপকভাবেই এখন বাজার অর্থনীতি। বাজার সঙ্কেত (মূল্যে প্রতিফলিত) নির্ভুলভাবে বাজারের সরবরাহ ঘাটতি বা চাহিদার পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে থাকে। বাজারে সরবরাহ সমস্যা সৃষ্টি হলে পণ্যের দাম বেড়ে যায়, এটা একেবারেই যান্ত্রিকভাবে ঘটে। গত ৬ জানুয়ারি থেকে নজিরবিহীনভাবে দীর্ঘমেয়াদী ঘোষিত অবরোধ-হরতাল চলছে। আশ্চর্যজনকভাবে দুই কোটি লোকের আবাস এই ঢাকা শহরে জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম বাড়েনি। কোন পণ্য দুষ্প্রাপ্যও হয়নি। বরং কোন কোন ক্ষেত্রে কমেছে। অবরোধ-হরতাল চলার সময় শাকসবজি, ফলমূল, মাছ ও মাংস সরবরাহ ছিল সম্পূর্ণ স্বাভাবিক। ব্রয়লার মুরগির কেজি ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকার মধ্যে। ডিমের ডজন ৮৫ থেকে ৯০ টাকার মধ্যে। ফেব্রুয়ারি মাসে রাজধানীতে ফুল সরবরাহে কোন ঘাটতি হয়নি। সেদিক থেকে বলা যায়, এই সাধারণ মানুষ হত্যাকারী অবরোধ ও হরতাল ভয় ও শঙ্কা সৃষ্টি করতে পারলেও বাজারে এর কোন প্রতিক্রিয়া প্রতিফলিত হয়নি। জেলা-উপজেলার হাট-বাজারেও একই অবস্থা। মূল্যস্ফীতি ॥ প্রকাশিত প্রতিবেদনে সংস্থাটি বলছে, চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে দেশের সাধারণ মূল্যস্ফীতি ছিল ৬ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ, যা ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে ছিল ৭ দশমিক ৫০ শতাংশ। একই ভাবে খাদ্য মূল্যস্ফীতি চলতি বছরের জানুয়ারিতে হয়েছে ৬ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ, যা গত বছরের জানুয়ারিতে ছিল ৮ দশমিক ৮১ শতাংশ। ফেব্রুয়ারিতেও ছিল নিম্নমুখী। বিদেশে শ্রমিক রফতানি ॥ চলতি বছরের জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি দুই মাসে বাংলাদেশ থেকে বিদেশে শ্রমিক গেছে ৬৩ হাজার ৩৯০ জন, সেখানে গত বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে গিয়েছিল ৬২ হাজার ৭১৫ জন। চলতি অবরোধ ও হরতালে বিদেশে শ্রমিক পাঠানোর ক্ষেত্রে কোন নেতিবাচক প্রভাব পড়েনি। এডিপি বাস্তবায়ন ॥ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীর (এডিপি) আওতায় ব্যয় হয়েছে ৩০ হাজার ৯০০ কোটি টাকা। গত অর্থবছরের একই সময়ে ব্যয় হয়েছিল ২৫ হাজার ২২০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে উন্নয়ন প্রকল্পে টাকার অঙ্কে ৫ হাজার কোটি টাকা বেশি ব্যয় হয়েছে। রফতানি আয় ॥ রফতানি আয় অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি দুই মাসে রফতানি আয় হয়েছে ৫ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের একই সময়ে রফতানি আয় ছিল ৫ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, রফতানি আয় গত বছরের চেয়ে চলতি বছরের দুই মাসে ৩০ কোটি টাকা বেশি হয়েছে। আমদানি ব্যয় ॥ চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় হয়েছে ৩ দশমিক ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের জানুয়ারি মাসে আমদানি ব্যয় ছিল ৩ দশমিক ৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। আমদানি ও রফতানি উভয় অঙ্কের বৃদ্ধি বলে দেয় অর্থনীতি অন্তত এই দুই মাসে মন্থর হয়নি। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ॥ চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ হয়েছে যথাক্রমে ২২ বিলিয়ন ও ২৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ে হয়েছিল যথাক্রমে ১৮ দশমিক ১ এবং ১৯ দশমিক ১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। গত বছরের চেয়ে চলতি বছরে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বেড়েছে, যা আর্থিক বর্ধিত শক্তিমত্তার পরিচায়ক। রাজস্ব আয় ॥ চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত রাজস্ব আয় হয়েছে ৬৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ৫৯ হাজার ৮০০ কোটি টাকা। তুলনামূলক ১০ হাজার কোটি টাকা বর্ধিত রাজস্ব আয় হয়, যা নগন্য নয়। এ বৃদ্ধির হার ছিল ১১ শতাংশ। বৈদেশিক ঋণ ও অনুদান প্রাপ্তি ॥ সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তিতে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলতে পারেনি। কেননা, চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তা অবমুক্ত হয়েছে ১ দশমিক ৭৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৫৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে ঋণ ও অনুদান বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছিল শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দাতারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এ কথা বলার উপায় নেই। সহায়তা বরং বাড়ছে। এসএমই ঋণ বিতরণ ॥ চলতি বছরের জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি মাসে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পে (এসএমই) ঋণ বিতরণ হয়েছে ১৪ হাজার কোটি টাকা, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৮ দশমিক ২৭ শতাংশ বেশি। বিনিয়োগ ॥ দেশে বেসরকারী বিনিয়োগের গতি মন্থর। তা গতি পাচ্ছে না। এটি হয়েছে মূলত অর্থনীতির অবকাঠামোগত দুর্বলতার কারণে। হরতাল বা অবরোধের কারণে নয়। দাবিমতো গ্যাস, বিদ্যুত ও জমি দেয়া গেলে অবশ্যই বেসরকারী বিনিয়োগ উজ্জীবিত হবে।
×