ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৫ মার্চ ২০১৫

নিউজিল্যান্ডের ইতিহাস

শাকিল আহমেদ মিরাজ ॥ একবার না পারিলে দেখ শতবার। ঘটনাটা কিউইদের জন্য শতবারের মতোই! সাতবারের চেষ্টায় সেমির বাধা টপকাতে সক্ষম হলো নিউজিল্যান্ড। অকল্যান্ডের বৃষ্টিবিঘিœত নাটকীয় ম্যাচে কাল দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৪ উইকেটে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠল ব্রেন্ডন ম্যাককুলামের দল! ৪৩ ওভারে নেমে আসা ম্যাচে ৫ উইকেটে ২৮১ রানের ফাইটিং স্কোর গড়ে প্রোটিয়ারা। ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে ৪৩ ওভারে ২৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা পুননির্ধারিত হয়! শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির জন্ম দিয়ে ১ বল বাকি (৪২.৫ ওভারে) থাকতে ছক্কা হাঁকিয়ে জয় নিশ্চিত করেন ম্যাচের নায়ক গ্রান্ট ইলিয়ট! সপ্তমবারের চেষ্টায় স্বপ্নের ফাইনালের টিকেট হাতে পায় নিউজিল্যান্ড। অন্যদিকে অল্পের জন্য প্রথমবারের মতো ফাইনালে ওঠা হলো না বার বার নকআউট ব্যর্থতায় ‘চোকার্স’ উপাধি পাওয়া দক্ষিণ আফ্রিকার! চতুর্থবারের মতো সেমি থেকে বিদায় নিল প্রোটিয়ারা। গ্রুপ পর্বে হাঁক ডাক করা বড় সব ম্যাচের পর কোয়ার্টারেও একের পর এক একপেশে লড়াই দেখার পর অনেকে বিশ্বকাপের আকর্ষণ নিয়ে সন্দিহান হয়ে উঠেছিলেন। প্রথম সেমিতে এক ম্যাচেই সব চাওয়া পূরণ করে দিল নিউজিল্যান্ড-দক্ষিণ আফ্রিকা! যেখানে টান টান উত্তেজনার জন্ম দিয়ে শিরোপার আরও কাছাকাছি পৌঁছে গেল মার্টিন ক্রো, স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের উত্তরসূরিরা। বৃষ্টি, ওভার কমে আসা, চার-ছক্কা, বড় স্কোর, উত্তেজনারবশে এবি ডি ভিলিয়ার্সের মতো নাম্বার ওয়ান ফিল্ডারের ব্যর্থতা, শেষ ওভারের নাটকীয়তাÑ অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে কাল একদিবসীয় ক্রিকেটের সকল রসদের পসরা সাজিয়ে বসেছিল দল দুটি! দলীয় ৩১ রানে সজঘরে ফেরেন দুই ওপেনার হাশিম আমলা (১০) ও কুইন্টন ডি’কক (১৪)। এমনকি তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে রাইলি রোসাউ (৩৯) যখন তৃতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন, টস জিতে ব্যাটিং নেয়া দক্ষিণ আফ্রিকার ২৭তম ওভারে রান মোটে ১১৪। তিন ফ্রন্টলাইনার প্রোটিয়া ব্যাটসম্যানকে তুলে নিয়ে শুরুতে দারুণ চাপ তৈরি করেন দুই কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্ট ও কোরি এ্যান্ডারসন। এরপরই শুরু হয় দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং-ঝড়। যেখানে নেতৃত্ব দেন ফ্যাফ ডুপ্লেসিস, কম যাননি ডি ভিলিয়ার্স আর ডেভিড মিলারও। তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১৮.২ ওভারে ৮৩ রান যোগ করেন রোসাউ-ডুপ্লেসিস। অবশ্য চ্যালেঞ্জিং স্কোরের পথে প্রোটিয়াদের বড় জুটিটা গড়ে ওঠে এরপরই। রোসাউ ফেরার পর চতুর্থ উইকেটে ১২.১ ওভারে ১০৩ রান জমা করেন ডুপ্লেসিস-ডি ভিলিয়ার্স। মনে হচ্ছিল তিন শতাধিক রানের বড় স্কোরই গড়তে যাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা। তখনই বৃষ্টির জন্য খেলা বন্ধ হয়ে যায়। ৩৮ ওভারে ৩ উইকেটে প্রোটিয়াদের রান তখন ২১৬। পুনরায় শুরু হলে খেলা ৪৩ ওভারে নেমে আসে। ১০৭ বলে ৭ চার ও ১ ছক্কায় সর্বোচ্চ ৮২ রান করে আউট হন ডুপ্লেসিস। ফেরার আগে ১৮ বলে ৬ চার ও ৩ ছক্কায় মিলারের ৪৯ রানের ঝড়। ৪৫ বলে ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৬৫ রান নিয়ে অপরাজিত থাকেন ডি ভিলিয়ার্স। ব্যক্তিগত ৩৮ রানে অবশ্য জীবন পান অধিনায়ক। কিউই অলরাউন্ডার কোরি এ্যান্ডারসনের বলে ক্যাচ মিস করেন কেন উইলিয়ামসন। ফল ৪৩ ওভারেই ৫ উইকেটে ২৮১ রান দক্ষিণ আফ্রিকার স্কোর বোর্ডে। ইতিহাসে অদ্ভুত সব কারণে বার বার খাড়ায় পড়লেও কালকের বৃষ্টিতে কিছুটা হলেও লাভাবান ছিল প্রোটিয়ারাই! ডার্কওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে জয়ের জন্য নিউজিল্যান্ডের সামনে ৪৩ ওভারে ২৯৮ রানের লক্ষ্যমাত্রা পুননির্ধারিত হয়! শুরুতেই ব্যাট হাতে ঝড় তোলেন দুই ওপেনার মার্টিন গাপটিল ও ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম। মাত্র ৬.১ ওভারে ৭১ রান তুলে নেন তারা। মনে হচ্ছিল আগে ভাগে ম্যাচ শেষ করে উৎসবে মাততে তর সইছিল না স্বাগতিক ব্যাটসম্যানদের! ২৬ বলে ৮ চার ও ৪ ছক্কায় ৫৯ রানের টর্নেডো ইনিংস খেলে অধিনায়ক ম্যাককুলাম মরনে মরকেলের বলে ডেল স্টেইনের হাতে ধরা পড়েন। এর পর অবশ্য শ্লথ হয়ে পড়ে রানের গতি। ১৭.১ ওভারে দলীয় ১২৮ রানের মধ্যে আরও দুই উইকেট হারায় কিউরা। সাজঘরে ফেরেন উইলিয়ামসন (৬) আগের ম্যাচের ডাবল সেঞ্চুরিয়ান মার্টিন গাপটিল (৩৪)। ৩০ রান করে চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে অভিজ্ঞ রস টেইলর যখন আউট হন ২১.৪ ওভারে দলের রান তখন ১৪৯। ২১.২ ওভারে চাই ঠিক আরও ১৪৯। হাতে ৬ উইকেট। দেখে শুনে খেলছেন ইলিয়ট-এ্যান্ডারসন। ম্যাচ তখন ফিফটি-ফিফটি। এরপর একাধিকবার রং বদলেছে খেলায়। মাত্র ১৬.২ ওভারে যখন শতরানের জুটি গড়ে ফেলেন তারা, মনে হচ্ছিল অনায়াস জয় পাবে কিউইরা। ৫৭ বলে ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৮ রান করা এ্যান্ডারসনকে তুলে নিয়ে প্রোটিয়াদের খেলায় ফেরান দিনের সফল পেসার মরনে মরকেল। ৮ রানে স্টেইনের বলে রোসাউর হাতে ক্যাচ দিয়ে রনকি যখন আউট হন ৪০.১ ওভারে ৬ উইকেটে ২৬৯ রান নিউজিল্যান্ডের! জয়ের জন্য ১৭ বলে চাই ২৯ রান। ইলিয়টের সঙ্গে যোগ দেন অভিজ্ঞ ড্যানিয়েল ভেট্টোরি। তবে ঝুঁকিতে ছিলেন তারা। শেষ ২ ওভারে ২৩, শেষ ওভারের ৬ বল থেকে চাই ১২ রান। ম্যাচ আবার ফিফটি-ফিফটি! স্টেইনের করা শেষ ওভারের প্রথম ২ বল থেকে আসে মাত্র ২ রান। অর্থাৎ ৪ বলে চাই ১০। ম্যাচ দক্ষিণ আফ্রিকার দিকে ঝুঁকে! তৃতীয় বলে চার হাঁকিয়ে প্রেসার কিছুটা রিলিজ করেন ভেট্টোরি। চতুর্থ বলে সিঙ্গেলস নিয়ে ইলিয়টকে স্ট্রাইক দেন তিনি। পঞ্চম বলে ছক্কা হাঁকিয়ে ১ বল বাকি থাকতেই শ্বাসরুদ্ধকর জয় নিশ্চিত করেন ইলিয়াট! ৭৩ বলে ৭ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৪ রানে অপরজিত থেকে জয় নিয়ে ফেরার পর ইলিয়টকে ম্যাচসেরা নির্বাচনে বেগ পেতে হয়নি ম্যাচ অফিসিয়ালদের। ৬ বলে ৭ রান নিয়ে সঙ্গী ভেট্টোরি। দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে মরনে মরকেল ৩, স্টেইন ও ডুমিনি নেন ১টি করে উইকেট। অবশ্য অধিনায়ক ডি ভিলিয়ার্স ও উইকেরক্ষক ডি’কক মিলে দু-দুটি রান আউট মিস করেন। প্রোটিয়া ফিল্ডাররা এদিন একধিক ক্যাচও ছাড়েন, যার খেসারত দিতে হয় তাদের।
×