ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এই সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ছে

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৫ মার্চ ২০১৫

আগামী অর্থবছরের এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা বাড়ছে

হামিদ-উজ-জামান মামুন ॥ আগামী ২০১৫Ñ১৬ অর্থবছরের জন্য প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হচ্ছে। নতুন বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) এই পরিমাণ প্রকল্প সাহায্য (বৈদেশিক সহায়তা) ধরা হতে পারে বলে জানা গেছে। যা চলতি অর্থবছরের মূল এডিপিতে ছিল ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। তুলনামূলকভাবে চলতি অর্থবছরের চেয়ে আগামী অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা অংশ বাড়তে পারে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার আকার নির্ধারণের জন্য দু’দিনের খাতভিত্তিক বৈঠক শুরু করতে যাচ্ছে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)। বৈঠকে সভাপতিত্ব করবেন ইআরডির সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ মেজবাহ উদ্দিন। নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্যমাত্রা বিষয়ে অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) অতিরিক্ত সচিব (বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সচিব) কাজী শফিকুল আজম জনকণ্ঠকে বলেন, এ বৈঠকের মাধ্যমে নির্ধারণ করা হবে আগামী অর্থবছরের জন্য কি পরিমাণ বৈদেশিক সহায়তার লক্ষ্য ধরা হবে। মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে একটি আকার নির্ধারণ করে পরিকল্পনা কমিশনকে জানানো হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, চলতি অর্থবছরের সংশোধিত এডিপিতে যে পরিমাণ বরাদ্দ ধরা হয়েছে তা থেকে প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকা বাড়তে পারে। সে হিসেবে আগামী অর্থবছরের জন্য নতুন এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তার অংশ ৩০ হাজারের ওপরে যাবে না। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) সূত্র জানায়, আগামী ৫ এপ্রিল থেকে শুরু হতে যাচ্ছে দু’দিনের সিরিজ বৈঠক। চলবে ৬ এপ্রিল পর্যন্ত। প্রথম দিনে যে সব খাত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক করা হবে সেগুলো হচ্ছে, কৃষি, পানি সম্পদ, পল্লী প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা, বিদ্যুত, তৈল গ্যাস ও প্রাকৃতিক সম্পদ, পরিবহন এবং যোগাযোগ খাত। দ্বিতীয় দিন ৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত হবে ভৌত-পরিকল্পনা-পানি সরবরাহ ও গৃহায়ন, শিক্ষা ও ধর্ম, ক্রীড়া ও সংস্কৃতি, স্বাস্থ্য-পুষ্টি-জনসংখ্যা ও পরিবার কল্যাণ, গণসংযোগ, সমাজকল্যাণ, মহিলাবিষয়ক ও যুব উন্নয়ন, জনপ্রশাসন, বিজ্ঞান-তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং শ্রম ও কর্মসংস্থান খাতের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলোর সঙ্গে। চলতি অর্থবছরের জুলাই থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আট মাসের ব্যয় বা বাস্তবায়ন অগ্রগতি পর্যালোচনা করে তার ওপর ভিত্তি করেই আগামী ২০১৫Ñ৬ অর্থবছরের জন্য বরাদ্দ নির্ধারণ করা হবে বলে জানা গেছে। সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচীতে (এডিপি) বৈদেশিক সহায়তার বরাদ্দ ধরা হয়েছিল ২৭ হাজার ৭০০ কোটি টাকা। কিন্তু সম্প্রতি সেখান থেকে ২ হাজার ৮০০ কোটি টাকা ছেটে ফেলে সংশোধিত এডিপিতে (আরএডিপি) মোট ২৪ হাজার ৯০০ কোটি টাকা ধরা হয়েছে। তার আগের অর্থবছর (২০১৩Ñ১৪) মূল বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) ছিল ৭৩ হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে বৈদেশিক সহায়তা থেকে ২৪ হাজার ৫৬৩ কোটি টাকা। পরবর্তীতে কাঁটছাট করে সংশোধিত এডিপিতে বৈদেশিক সহায়তা অংশ করা হয়েছিল ২১ হাজার ২০০ কোটি টাকা। চলতি অর্থবছরে বৈদেশিক সহায়তা পুষ্ট প্রকল্পের প্রতি বিশেষ নজর দেয়া হচ্ছে। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সিনিয়র সদস্য ড. শামসুল আলম বৈদেশিক সহায়তার ক্ষেত্রে সরকার সফল বলে উল্লেখ করে জনকণ্ঠকে বলেন, সাম্প্রতিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বৈদেশিক সহায়তা প্রাপ্তিতে কোন ক্ষতিকর প্রভাব ফেলবে না। কেননা চলতি অর্থবছরে জুলাই থেকে জানুয়ারি পর্যন্ত বৈদেশিক সহায়তা অবমুক্ত হয়েছে ১ দশমিক ৭৪৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ে ছিল ১ দশমিক ৫৬৮ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। অন্যদিকে চলতি অর্থবছরে ঋণ ও অনুদান বৃদ্ধি পেয়েছে ১১ দশমিক ৪ শতাংশ, যা গত অর্থবছরে বৃদ্ধি পেয়েছিল শূন্য দশমিক ৯১ শতাংশ। রাজনৈতিক অস্থিরতায় দাতারা মুখ ঘুরিয়ে নিয়েছে এ কথা বলার উপায় নেই। সহায়তা বরং বাড়ছে। ড. আলম আরও বলেন, গত কয়েক বছরে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতি স্থিতিশীল ছিল, তারই ফল হচ্ছে বৈদেশিক সহায়তা বৃদ্ধি পাওয়া। এক্ষেত্রে মুডিস এর যে ক্রেডিট রেটিং তাতেও বলা হয়েছে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি ভাল। গত তিন বছর ধরে তাদের রেটিং এ সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার চিত্র ফুটে উঠছে। সূত্র জানায়, চলতি ২০১৪Ñ১৫ অর্থবছরের সাত মাসে (জুলাই ২০১৪ থেকে জানুয়ারি ২০১৫ পর্যন্ত ) বৈদেশিক অর্থছাড় ও প্রতিশ্রুতি উভয়ই বেড়েছে। রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে গত কয়েক মাস প্রতিশ্রুতি কমলেও সে অবস্থা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হয়েছে সরকার। এ সময়ে সবচেয়ে বেশি অর্থছাড় করেছে বিশ্বব্যাংক। অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সর্বশেষ হিসাব অনুযায়ী এ সব তথ্য জানা গেছে। বর্তমানে রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে যে সংশয়ের সৃষ্টি হয়েছিল সে আশঙ্কা কেটে গেছে। সরকারের দায়িত্বশীলদের তৎপরতা এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) সফল নেগোশিয়েশনের ফলেই উন্নয়নসহযোগীদের আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে বলে মনে করছে ইআরডি। ইআরডি সূত্র জানায়, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে দাতারা অর্থছাড় করেছে মোট ১৭৪ কোটি ৭১ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। গত অর্থবছরের একই সময়ে অর্থছাড় হয়েছিল ১৪৬ কোটি ৮৩ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার। পর্যালোচনা করলে দেখা যায় গত অর্থ বছরের একই সময়ের তুলনায় চলতি অর্থবছরে দাতাদের অর্থছাড় বেড়েছে। প্রতিশ্রুতির ক্ষেত্রে দেখা যায়, চলতি অর্থবছরের সাত মাসে দাতারা বাংলাদেশকে প্রতিশ্রুত দিয়েছে ২০৬ কোটি ৫৫ লাখ ৫০ হাজার মার্কিন ডলার।
×