ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

‘ইসলামিক লায়ন ফোর্স অব হিন্দুস্থান’ যুদ্ধ করবে আইএস স্টাইলে

প্রকাশিত: ০৫:৩৮, ২৫ মার্চ ২০১৫

‘ইসলামিক লায়ন ফোর্স অব হিন্দুস্থান’ যুদ্ধ করবে আইএস স্টাইলে

হাসান নাসির ॥ আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরির সেই ঘোষণা যে স্রেফ বায়বীয় কোন হুমকি নয়, তা-ই প্রমাণ হলো চট্টগ্রামে আটক জেএমবি (জামা’আতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ) নেতা এরশাদ হোসেনের স্বীকারোক্তির মধ্য দিয়ে। ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের একাংশ নিয়ে একটি ইসলামী স্টেট গড়ার স্বপ্ন নিয়ে বিভোর সংঘবদ্ধ এ জঙ্গীগোষ্ঠী। আর এ লক্ষ্যে কর্মকা- চালাতে চট্টগ্রামকে ঘিরেই তাদের রীতিমতো মহাপরিকল্পনা। জেএমবি নেতা এরশাদ হোসেন পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, তাদের উদ্দেশ্য একটি ইসলামিক স্টেট প্রতিষ্ঠা করা। এ লক্ষ্যে তারা পরিকল্পিত ছক ধরেই অগ্রসর হচ্ছে। চট্টগ্রাম নগরীর আকবর শাহ থানার বাগানবাড়ি মনছুরাবাদ এলাকার একটি বাসা থেকে গত সোমবার সকালে পুলিশ গ্রেফতার করে জেএমবি চট্টগ্রামের আঞ্চলিক নেতা এরশাদ হোসেন ওরফে জয় ওরফে বিজয় ওরফে মামুনকে। একই অভিযানে উদ্ধার হয় কয়েকটি গ্রেনেড জাতীয় শক্তিশালী বোমা, গান পাউডার, ডেটোনেটরসহ বিস্ফোরক তৈরির বিপুল পরিমাণ সরঞ্জাম ও বেশকিছু জিহাদী পুস্তক। তাকে জিজ্ঞাসাবাদে বেরিয়ে আসে জঙ্গীদের গোপন পরিকল্পনা। বন্দরনগরী চট্টগ্রামের দোকান মালিক ও দোকান কর্মচারীর ছদ্মবেশে অত্যন্ত একনিষ্ঠভাবে কাজ করে যাচ্ছে অন্তত ৮শ’ জঙ্গী। তারা মিশে আছে সাধারণের মাঝে। শিক্ষার্থী, পেশাজীবী, ব্যবসায়ী এমনকি সাংবাদিকদের মধ্যেও রয়েছে তাদের লোক। সাংগঠনিক তথা জঙ্গীবাদী কর্মকা- পরিচালনার জন্য আর্থিক যোগানও রয়েছে তাদের। নগরীতে দোকান বা দোকানে চাকরির সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকলেও ছদ্মবেশী এ গোষ্ঠীর মূল মিশন কিন্তু ব্যবসা বাণিজ্য নয়। বরং এর আড়ালে চলছে ভয়ানক এক স্বপ্ন বাস্তবায়নের গোপন কর্মকা-। সিএমপির আকবর শাহ থানার ওসি সুদীপ কুমার দাশ জানান, এরশাদ হোসেন জেএমবির চট্টগ্রাম অঞ্চলের দায়িত্বশীল একজন নেতা। বিভিন্ন প্রশ্নের জবাবে সে অত্যন্ত সাবলীলভাবে নানা তথ্য প্রদান করেছে। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসতে পারে আরও অনেক তথ্য। এজন্য পুলিশের পক্ষ থেকে আদালতের কাছে এ জঙ্গীর দশ দিনের রিমান্ড প্রার্থনা করা হয়েছে। এরশাদ হোসেনের বক্তব্যেই পরিষ্কার যে, দলটি এখন তার নাম পরিবর্তন করেছে। তারা এখন কাজ করছে ‘ইসলামিক লায়ন ফোর্স অব হিন্দুস্থান’ এর আদর্শিক যোদ্ধা হিসেবে। নামকরণেই বোঝা যায়, সংগঠনটি এখন অনেকটা একটি বাহিনীতে পরিণত হয়েছে। আন্তর্জাতিক জঙ্গী সংগঠন আল কায়দা ও মধ্যপ্রাচ্যের ইরাকভিত্তিক ইসলামিক স্টেট বাস্তবায়নের তৎপরতায় যুদ্ধে অবতীর্ণ আইএসের সঙ্গে তাদের রয়েছে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ। ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার নিয়ে জঙ্গী খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করাই ভবিষ্যত পরিকল্পনা। প্রসঙ্গত, আল কায়েদা নেতা জাওয়াহিরি ইতোপূর্বে ঘোষণা দিয়েছিলেন ভারত, বাংলাদেশ ও মিয়ানমার পর্যন্ত তাদের কর্মকা- বিস্তৃত করার। শুধু তাই নয়, বাংলাদেশে আক্রমণ চালানোর হুমকিও আসে তার কাছ থেকে। জাওয়াহিরির এ ঘোষণাকে অনেকটা বায়বীয় হুমকি আখ্যায়িত করে অনেকেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন। আবার অনেকের ধারণা, এ অঞ্চলে জঙ্গী তৎপরতা চালানো সম্ভব নয়। কিন্তু তলে তলে জঙ্গীরা যে তাদের জাল বিস্তার করে চলেছে তা মাঝেমধ্যেই ধরা পড়ছে। আটক জঙ্গীদের মুখ থেকেও বেরুচ্ছে পিলে চমকানো তথ্য। প্রশ্ন হলো, একটি খেলাফত রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে পরিকল্পনার ছকটি কেন বৃহত্তর চট্টগ্রামকে ঘিরে? এর কারণ হিসেবে বোদ্ধারা মনে করছেন, চট্টগ্রামে রয়েছে জঙ্গলময় দুর্গম পাহাড়ি এলাকা। এ সব স্থানে জঙ্গী প্রশিক্ষণ ও আস্তানা গড়া অপেক্ষাকৃত সহজ। তাছাড়া এখানে আশ্রিত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নামের একটি বিষফোঁড়া। মিয়ানমার থেকে বিতাড়িত অনেকেই আশ্রয় নিয়েছে কক্সবাজারের টেকনাফ, উখিয়া, রামুসহ বিরাট এলাকায়। এছাড়া বান্দরবানের পাহাড়ি এলাকা এমনকি চট্টগ্রাম শহর পর্যন্ত রোহিঙ্গাদের বসবাস রয়েছে। নির্দিষ্ট একটি এলাকায় রেখে এদের ওপর কড়া নজরদারি রাখা সম্ভব হয়নি। চেহারায় মিল থাকায় এরা বাঙালী জনগোষ্ঠীর সঙ্গে মিলেমিশে একাকার হয়ে গেছে। অনেকেই আবার আত্মীয়তার বন্ধনে আবদ্ধও হয়ে গেছে। পাহাড়ি অনেক এলাকা রয়েছে, যেখানে সাধারণ মানুষ এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নজরদারিও সম্ভবও নয়। ফলে বৃহত্তর চট্টগ্রামের দক্ষিণাঞ্চল ইতোমধ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী যে বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক তা উঠে আসছে নানা আলোচনায়। কারণ, তাদের নাগরিকত্বের স্বীকৃতি নেই মিয়ানমারে। বাংলাদেশে তারা রয়েছে আশ্রিত হিসেবে। মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাসকারী এ রোহিঙ্গারা সে দেশের ভোটার তালিকা থেকেও বাদ পড়েছে। সীমান্ত অঞ্চলে বসবাসকারী একটি গোষ্ঠী যদি কোন দেশেরই নাগরিক না হয়ে থাকে তাহলে তারা কতটা ভয়ঙ্কর হতে পারে তা সহজেই অনুমেয়। আর এ সুযোগটিই নিচ্ছে জঙ্গী সংগঠনগুলো।
×