ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার

প্রকাশিত: ০৪:০৪, ২৫ মার্চ ২০১৫

আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার

পরিণত বয়সেই জীবনাবসান হলো আধুনিক সিঙ্গাপুরের রূপকার লি কুয়ান ইউয়ের। মানুষ নশ্বর, তাঁকে পৃথিবীর মায়া কাটিয়ে বিদায় নিতেই হবে। কিন্তু একটি মানবজীবনের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ হলো স্বদেশ ও স্বজাতির জন্য যথাযথ অবদান রেখে যাওয়া। দেশনায়ক হিসেবে সেটি তিনি রেখেছেন উত্তমরূপেই। তাই তাঁর দেশবাসী তাঁকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণে রাখবে। বিশ্ববাসীর কাছেও তিনি স্বগুণে সুপরিচিতি লাভ করেন। উন্নয়নশীল দেশগুলোর সচেতন নাগরিকদেরও শ্রদ্ধা তিনি পাবেন, এটা নিঃসংশয়ে বলা চলে। বিশ্বনেতারা তাঁর মৃত্যুতে শোক প্রকাশ করছেন। তাঁর পুত্র সিঙ্গাপুরের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লংয়ের প্রতি জানাচ্ছেন সমবেদনা। ইতিহাসের পাতা উল্টালে লি কুয়ান ইউয়ের অবদান সম্পর্কে সম্যক ধারণা মেলে। ব্রিটিশ উপনিবেশ থেকে মুক্ত হওয়ার পর ১৯৫৯ সালে স্বায়ত্তশাসিত সিঙ্গাপুরের প্রথম প্রধানমন্ত্রী হন লি কুয়ান। ৩১ বছর ধরে এই পদে ছিলেন তিনি। ১৯৯০ সালে প্রধানমন্ত্রীর পদ ছাড়েন। বিস্ময়করভাবে সিঙ্গাপুরকে বদলে দেন তিনি। অপরাধপ্রবণ ও দারিদ্র্যপীড়িত বন্দর-শহর থেকে সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার সমৃদ্ধ দেশে পরিণত করেন এই নেতা। উল্লেখ্য, ১৯৬৩ সালে মালয়েশিয়ার সঙ্গে যোগ দেয় সিঙ্গাপুর। কিন্তু আদর্শগত কারণে সেই মিলন বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। ১৯৬৫ সালে স্বাধীন হয় দেশটি। সিঙ্গাপুরের সংস্কারে নতুন করে উদ্যোগ নেন লি কুয়ান। উগ্র জাতীয়তাবাদ ও ধর্মীয় মৌলবাদের বিরুদ্ধে শক্ত অবস্থান নেন তিনি। বিভিন্ন জাতি-গোষ্ঠীর মধ্যে শান্তি, স্থিতিশীলতা ও ঐক্য বজায় রাখতে কড়া পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়। সিঙ্গাপুরকে পরিচ্ছন্ন ও সবুজ রাষ্ট্রে পরিণত করার লক্ষ্যে বিশেষ উদ্যোগী হন লি কুয়ান। নিষিদ্ধ করা হয় পর্নোগ্রাফি। তাঁর প্রচেষ্টাতেই সিঙ্গাপুর আজ বিশ্বের অন্যতম বাসযোগ্য সুন্দর শহর। বাজারবান্ধব নীতির জন্য ব্যাপক প্রশংসা কুড়ান এই নেতা। প্রাকৃতিক সম্পদ না থাকা সত্ত্বেও একটি রাষ্ট্র যে অর্থনৈতিকভাবে চূড়ান্ত সমৃদ্ধি অর্জন করতে পারে তার উদাহরণ সৃষ্টি করেন লি কুয়ান। সরকারী ও বেসরকারী পুঁজিবাদের মিশ্রণে সিঙ্গাপুরকে আন্তর্জাতিক বিনিয়োগের নিরাপদ তীর্থক্ষেত্রে পরিণত করেছেন তিনি। তাঁর নেতৃত্বের ঝলকে বিশ্বের বুকে অর্থনৈতিক বিস্ময় হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছে আধুনিক সিঙ্গাপুর। এখন অনেক দেশের কাছেই লি কুয়ানের সিঙ্গাপুর উন্নয়নের এক আদর্শ রাষ্ট্র। লি কুয়ান ইউ বিদেশী বিনিয়োগকারীদের জন্য ব্যবসা-বাণিজ্য উন্মুক্ত করে দিয়েছিলেন এবং তাদের নিরাপত্তার নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন। এখন সিঙ্গাপুর হলো বিশ্বের সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু আয়ের দেশ, সবচেয়ে বেশি মাথাপিছু রিজার্ভের দেশ আর একইসঙ্গে সবচেয়ে কম অপরাধের দেশ। এটা সহজেই অনুমেয় যে, একটি দেশে সবার জন্য কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধ কমে যায়। বাংলাদেশের সঙ্গে সিঙ্গাপুরের রয়েছে সুসম্পর্ক। সম্পর্ক জোরদার ও অর্থনৈতিক পরিধি বাড়ানোর আকাক্সক্ষাও দেশটির পক্ষ থেকে ব্যক্ত করা হয়েছে এর আগে। ছ’মাস আগে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে এদেশে নিযুক্ত সিঙ্গাপুরের অনাবাসিক হাইকমিশনার বাংলাদেশ থেকে আরও শ্রমিক নেয়ার বিষয়ে তাঁর সরকারের আগ্রহের কথা জানান। রাজধানীর পূর্বাচলে সকল আধুনিক সুযোগ-সুবিধাসহ একটি স্বতন্ত্র শহর গড়ে তোলার আগ্রহও প্রকাশ করেছে সিঙ্গাপুর। বাংলাদেশ তার অন্যতম সুহৃদ একজন কিংবদন্তি রাষ্ট্রনায়ককে হারিয়ে শোকাহত। শোকবার্তায় বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, লি কুয়ান সিঙ্গাপুরকে যে অবস্থায় এনেছেন তা বাংলাদেশের জন্যও প্রেরণা সৃষ্টিকারী।
×