ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যক্তি অধিকারের চেয়ে ইসলামী অনুশাসন অনুসরণে জোর দেয়া হয়েছে

সৌদি বিচার ব্যবস্থা কঠোর, তবে ফাঁকফোকর রয়েছে

প্রকাশিত: ০৪:০১, ২৫ মার্চ ২০১৫

সৌদি বিচার ব্যবস্থা কঠোর, তবে ফাঁকফোকর রয়েছে

একজন ঘনিষ্ঠ বন্ধুর কাছে অনেকদিন ধরে ঋণগ্রস্ত বান্দার আল-ইয়াহিয়া সে বন্ধুকে হত্যার দায়ে তার মাথাটা প্রায় খোয়াতেই বসেছিলেন। মরিয়া হয়ে ঋণ শোধের অর্থ সংগ্রহের এক পর্যায়ে ইয়াহিয়া তার বন্ধুকে তার বাড়িতে আমন্ত্রণ জানান এবং অর্থ পরিশোধ হিসেবে তাকে তার রাইফেলটি দিতে চান। বন্ধু সেটি নিতে অস্বীকার করলে ইয়াহিয়া তার বুকে গুলি করেন। বন্ধু বসার ঘরে সোফায় লুটিয়ে পড়ে প্রাণ হারান। নিহত ব্যক্তির জবানিতে একথা জানা যায়। খবর নিউইয়র্ক টাইমসের। ইয়াহিয়া হত্যার অভিযোগ স্বীকার করেন। তখন সৌদি আরবের কঠোর ইসলামী আইনের ব্যাখ্যা অনুযায়ী তার এখন সেই শাস্তি পাওয়ার কথা যার জন্য সৌদি বিচার ব্যবস্থা বিশ্বজুড়ে কুখ্যাত উন্মুক্ত স্থানে প্রকাশ্যে তার শিরñেদ। কিন্তু সেই প্রাণদ- কখনও কার্যকর হয়নি। মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো যথাযথ আইনী প্রক্রিয়া লঙ্ঘন, স্বচ্ছতার অভাব এবং শিরñেদ ও অঙ্গকর্তনের মতো শাস্তির জন্য সৌদি বিচার ব্যবস্থার নিয়মিতভাবে নিন্দা জানিয়ে থাকে। সৌদি মামলাগুলোর খবর বিদেশে ব্যাপক সমালোচনার জন্ম দিয়েছে : ধর্মীয় নেতাদের সমালোচনার দায়ে মুক্তমনা ব্লগারের বেত্রাঘাতের শাস্তি, সংস্কারের পথে কথা বলায় মানবাধিকার কর্মীর কারাদ- এবং গাড়ি চালানোর দায়ে একজন নারীকে বিনা অভিযোগে দুই মাসের বেশি আটক রাখা। এ ধরনের রায় ইসলামিক রাষ্ট্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বলে দ্রুত ব্যাখ্যা দেয়া হয়- যে রাষ্ট্র নিয়মিতভাবে তার শত্রুদের শিরñেদ করে এবং সেখানে শরিয়া আইন প্রয়োগ করা হয়েছে বলে দাবি করা হয়। তবে ইয়াহিয়ার প্রাণ রক্ষা পেয়েছে কঠোর শাস্তি প্রয়োগে সৌদি বিচার ব্যবস্থায় যে নিয়ন্ত্রণ আরোপিত হয়েছে তার সুবাদে। তার মামলাটিকে আইন এবং ঐতিহ্যের কয়েক বছরব্যাপী যাত্রায় নানা বাঁক অতিক্রম করতে হয়েছে। ইয়াহিয়াকে কারাগারে চরিত্র সংশোধন করতে হয়েছে। শেখরা এবং রাজপরিবারের সদস্যগণ তার প্রাণ রক্ষার জন্য আবেদন করেছেন। চূড়ান্তভাব যে লোকটিকে ইয়াহিয়া গুলি করে হত্যা করেছে তার মেয়ে তার প্রাণ রক্ষা করেছে। ইয়াহিয়ার প্রাণদ- রদ এমন একটি বিচার ব্যবস্থার ফসল রাজতন্ত্রের বাইরে তা সামান্যই প্রণিধান করা হয়। ওই ব্যবসা শত শত বছরের ইসলামী ঐতিহ্যের ভিত্তিতে গড়ে উঠেছে এবং যা ব্যক্তির অধিকার ও স্বাধীনতার চেয়ে স্থিতিশীলতা এবং ইসলামী অনুদানের কঠোর অনুকরণকে অগ্রাধিকার দিয়ে থাকে। কাসিম প্রদেশের প্রিন্স ফয়সাল বিন মিশাল বিন সউদ-বিন-আবদুল আজিজ বলেন, ‘এই শাস্তি কোরান থেকে উদ্ভূত পরম করুণাময় ও সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে এসেছেÑ এ দেশের নিরাপত্তা সুরক্ষিত করার জন্য।’ প্রিন্স ফয়সালের বাণী ইয়াহিয়ার অপরাধ যেখানে সংঘটিত হয়েছে সেই একই স্থানে। প্রিন্স ফয়সাল বলেন, ‘অন্যায়ের শাস্তি না হলে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে।’ তবে, সৌদি বিচার ব্যবস্থা যেভাবে গড়ে উঠেছে তার মধ্যে ক্ষমারও অনেক পথ খোলা রাখা হয়েছে। কোন কোন অপরাধও তাদের শাস্তির বিচার সৌদি ব্যবস্থায় পরিষ্কার উল্লেখ আছে। যেমন হত্যার জন্য মৃত্যুদ-, বড় ধরনের চুরির জন্য অঙ্গñেদ, বিয়ের আগে যৌন সংসর্গের জন্য কিংবা মদ পানের জন্য চাবুক মারা।
×