ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

আড়াই মাসের ক্ষতি কাটাতে আড়াই বছর লাগবে

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২৪ মার্চ ২০১৫

আড়াই মাসের ক্ষতি কাটাতে আড়াই বছর লাগবে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ রাজনৈতিক অস্থিরতায় টানা হরতাল-অবরোধে চলে গেছে ৭৫ দিন। এ সময়ে পেট্রোলবোমা ও জ্বালাও-পোড়াও ধ্বংসাত্মক কার্যক্রমে মারাত্মক ক্ষতির মুখে পড়েছে দেশের আর্থিক খাত। ব্যবসায়ীদের হিসাবে প্রতিদিন ২ হাজার ২৭৭ কোটি টাকা গড়ে দেড় লাখ কোটি টাকার উপরে ক্ষতি হয়ে গেছে। আর গবেষকরা বলছেন, টানা হরতাল-অবরোধে অর্থনীতির স্বল্প, স্বল্প-মধ্য, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতি হয়েছে। পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলেও এক মাসে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে দিতে কমপক্ষে ২ মাস থেকে বছরের অধিক সময় লাগবে। অর্থাৎ ৭৫ দিনে বা আড়াই মাসে যে ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে ৫ মাস থেকে আড়াই বছরের অধিক সময় লাগবে। তাদের মতে, দীর্ঘমেয়াদে ক্ষতির মুখে পড়েছে পরিবহন খাত। এ খাতের এক মাসের সমপরিমাণ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে বছরের অধিক সময় লাগবে। তবে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সহজ শর্তে ঋণ অথবা বিশেষ প্রণোদনার মতো বিকল্প ব্যবস্থার মাধ্যমে মধ্য মেয়াদে অর্থাৎ ৬ মাস থেকে এক বছরে ক্ষতি কাটিয়ে উঠা যেতে পারে। পোশাক, কৃষি, পর্যটন, আবাসন, উৎপাদন, সিরামিক, প্লাস্টিক দ্রব্য প্রস্তুত ও রফতানি এবং বীমা খাতে মধ্য ও স্বল্প-মধ্য মেয়াদে ক্ষতির প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন গবেষকরা। অর্থাৎ এই খাতগুলোর এক মাসের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কমপক্ষে ৩ থেকে ৬ মাস লাগবে। সে হিসাবে আড়াই মাসের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে এ খাতগুলো সংশ্লিষ্টদের ৭ মাসে থেকে দেড় বছর সময় লাগবে। তবে উৎপাদন খাতে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্ষতি হলে তা দীর্ঘমেয়াদে প্রভাব ফেলবে। এছাড়া হিমায়িত খাদ্য, স্থলবন্দর, পোল্ট্রি, পাইকারি বাজার, শপিং মল, শো-রুম, ক্ষুদ্র ও ছোট দোকান এবং হকার্স খাতে স্বল্প মেয়াদী প্রভাব পড়বে। তবে এরইমধ্যে যে ক্ষতি হয়েছে তা ৫ মাসের আগে পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। বাংলাদেশ ব্যাংকের গর্বনর ড. আতিউর রহমানের মতে, যে মুহূর্তে দেশের অর্থনীতি এগিয়ে যাচ্ছিল ঠিক সেই মুহূর্তে রাজনৈতিক অস্থিরতা সৃষ্টি হয়েছে। চলমান হরতাল-অবরোধে অর্থনীতিতে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। অস্থিরতা দীর্ঘ হলে অর্থনীতির এ রক্তক্ষরণ আরও বেড়ে যাবে। সহিংস কর্মসূচীর বিষয়ে জাতিসংঘ উন্নয়ন তহবিলের (ইউএনডিপি) এক জরিপ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের ৯৫ শতাংশ মানুষ হরতাল পছন্দ করেন না। হরতালের কারণে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষতি হচ্ছে এমটা মনে করেন ৪৪ শতাংশ। আর হরতালে জাতীয় অর্থনীতির ক্ষতি হচ্ছে এমনটা মনে করে ২০ শতাংশ মানুষ। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষণা পরিচালক জায়েদ বখত বলেন, হরতাল-অবরোধে সরবরাহ চেইন ভেঙ্গে পড়ে। ব্যবসা না হওয়ার কারণে ব্যবসায়ীরা ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের টাকা পরিশোধ করতে পারেন না। এতে ব্যাংকসহ সার্বিক আর্থিক খাত ক্ষতির মুখে পড়ে। তবে সব থেকে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় গরিব মানুষরা। তিনি বলেন, এরইমধ্যে যে ক্ষতি হয়ে গেছে তা রাজনৈতিক পরিস্থিতি স্থিতিশীল হলে হয়ত কিছুটা পুষিয়ে নেয়া যাবে। তবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ব্যবসায়ীদের বছরের অধিক সময় লাগবে। আর খেটে খাওয়া গরিব মানুষগুলোর ক্ষতি কিছুতেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব হবে না। বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়লগ’র (সিপিডি) অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, হরতাল-অবরোধে যে ক্ষতি হয়েছে তা পুষিয়ে নিতে কত সময় লাগবে তা নিশ্চিত করে বলা কঠিন। তবে দীর্ঘ, মধ্য ও স্বল্প মেয়াদে প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে যে সমস্ত ক্ষেত্রে মূলধনজনিত ক্ষতি হয়েছে তা কাটিয়ে উঠতে দীর্ঘ সময় লাগবে। তবে উৎপাদন প্রক্রিয়ায় ক্ষতি না হলেও, উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এমন ক্ষেত্রে হয়ত স্বল্প মেয়াদে দুই থেকে তিন মাসে ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া যেতে পারে। আর যে ক্ষেত্রে পুঁজির ক্ষতি হয়েছে সেক্ষেত্রে মধ্য মেয়াদী প্রভাব পড়বে। ব্যাংক ও অব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠানের বিষয়ে সিপিডির এই অতিরিক্ত গবেষণা পরিচালক বলেন, মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠান হওয়ায় ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া ব্যাংকের পক্ষে তুলনামূলক কিছুটা সহজ হয়।
×