ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

লক্ষ্য ৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য

মিয়ানমারের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

প্রকাশিত: ০৬:১৬, ২৪ মার্চ ২০১৫

মিয়ানমারের সঙ্গে অগ্রাধিকার বাণিজ্য চুক্তি হচ্ছে

এম শাহজাহান ॥ মিয়ানমারের সঙ্গে প্রায় সাড়ে ৫ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য গড়ে তোলার কৌশল নির্ধারণ করতে যাচ্ছে সরকার। এজন্য দেশটির সঙ্গে প্রিফারেন্সিয়াল ট্রেড এগ্রিমেন্ট (পিটিএ) বা অগ্রাধিকারমূলক বাণিজ্য চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এই চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ফার্মাসিউটিক্যাল, এমএস রড, সিমেন্ট, টিভি, ফ্রিজসহ গৃহস্থালি পণ্যের বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা পেতে পারে। এছাড়া চিংড়ি, ইলিশ মাছ, শুকনো মাছ, সুপারি এবং লবণ রফতানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা পাবে মিয়ানমার। এ কারণে চলতি বছরের মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের। জানা গেছে, প্রতিবেশী রাষ্ট্র হওয়ার পরও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের বাণিজ্য আশানুরূপ বাড়ছে না। যদিও এই দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্য বৃদ্ধির বড় সুযোগ রয়েছে। এ লক্ষ্যে দু’দেশের বাণিজ্য বাড়াতে ইতোমধ্যে একটি কর্মপন্থা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে এই বাণিজ্য বৃদ্ধি না পাওয়ার অন্যতম কারণ হচ্ছে, নৌ-ট্রানজিট না থাকা, এলসির মাধ্যমে বাণিজ্যের সুযোগ না থাকা। ইতোপূর্বে এসব সমস্যা সমাধানে বিষয়টি বাংলাদেশ-মিয়ানমারের যৌথ বাণিজ্য কমিশনের বৈঠকে (জেটিসি) আলোচনা হয়েছে। সেখানে দু’দেশের বাণিজ্য বাড়াতে সবাই একমত হয়েছেন। শুধু তাই নয়, বাণিজ্য বৃদ্ধির জন্য দু’দেশের মধ্যে নৌ ট্রানজিট চুক্তি, ব্যাংকিং খাতের সমস্যা দুরীকরণ, এলসির মাধ্যমে পণ্য আমদানির ব্যবস্থা, সীমান্ত হাট স্থাপন, কৃষি ও মৎস্য খাতে বিনিয়োগ এবং পিটিএ চুক্তি করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। বর্তমান দু’দেশের মোট বাণিজ্যের পরিমাণ হচ্ছে প্রায় ১০ কোটি মার্কিন ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশের রফতানির পরিমাণ ১ কোটি ৩৪ লাখ ডলার এবং মিয়ানমার থেকে আমদানি করা হচ্ছে ৮ কোটি ডলারের পণ্য। তবে পিটিএ করার পর বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে পণ্য রফতানি বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মনোজ কুমার রায় জনকণ্ঠকে বলেন, মিয়ানমারের সঙ্গে পিটিএ চুক্তি করার বিষয়ে কাজ করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে কয়েকটি আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা করা হয়েছে। মিয়ানমারের সঙ্গে পিটিএ হলে কি ধরনের বাণিজ্যিক সম্ভাবনা তৈরি হয় তা নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি বাংলাদেশের অনুকূলে নয়। কিন্তু পিটিএ করা হলে মিয়ানমারে রফতানি বাড়ানো সম্ভব। আর রফতানি বাড়লে দেশটির সঙ্গে বাণিজ্য ঘাটতি কমে আসবে। তিনি বলেন, গ্যাসসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ দেশটির সঙ্গে বিদ্যমান বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদার করা গেলে বাংলাদেশ লাভবান হবে। এ কারণে সীমান্ত বাণিজ্য, বিমান, স্থল ও নৌ-যাতায়াত ব্যবস্থা, মিয়ানমারে পতিত জমি ইজারা নিয়ে চাষাবাদ এবং প্রয়োজনে চাল আমদানির বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এজন্য অনেক বিষয় নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। আশা করা হচ্ছে, সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে চলতি বছরের মধ্যে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে পিটিএ চুক্তি করা সম্ভব হবে। জানা গেছে, দীর্ঘদিন মিয়ানমারে সামরিক শাসনের অধীনে থাকায় ব্যবসা-বাণিজ্যের ক্ষেত্রে খুব বেশি এগুতে পারেনি বাংলাদেশ। ফলে দেশটির সঙ্গে নতুন করে বাংলাদেশ বাণিজ্য বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্ব দিচ্ছে। পিটিএ করা হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের নতুন দিক খুলবে এমন আশা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়। তবে দেশটির সঙ্গে নৌ-ট্রানজিট না থাকায় মিয়ানমার থেকে পণ্য আনতে সিঙ্গাপুরের বন্দর হয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। এতে ব্যবসায়ীদের সময় ও পণ্য পরিবহন ব্যয় বৃদ্ধি পাচ্ছে। নৌ-ট্রানজিট হলে মিয়ানমার থেকে টেকনাফ দিয়ে সরাসরি পণ্য সরবরাহ এবং আনা-নেয়া সম্ভব হবে। এ বিষয়টি নিয়েও এখন আলোচনা চলছে। জানা গেছে, মিয়ানমারের আরাকান রাজ্যে বিপুল জমি অনাবাদী পড়ে আছে। কন্ট্রাক্ট ফার্মিংয়ের ভিত্তিতে ওই জমিতে ফসল চাষে বাংলাদেশ আগ্রহী হলেও রাজি নয় মিয়ানমার। তবে দেশটি বায়ার সেলার কন্ট্রাক্ট এ আগ্রহের কথা জানিয়েছে। এছাড়া দু’দেশের বাণিজ্যিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে প্রধান সমস্যা ব্যাংকিং লেনদেন। এই সমস্যা সমাধানে মিয়ানমারে সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক ও ন্যাশনাল ব্যাংকের নির্দিষ্ট শাখার বাইরে আরও শাখায় লেনদেন চালু করার প্রয়োজনীয়তা এবং একক ব্যাংক ড্রাফটের পরিবর্তে এলসির মাধ্যমে লেনদেন বিষয়গুলোও গুরুত্ব সহকারে নেয়া হয়েছে।
×