ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

আমলা-গাপটিলের অন্যরকম লড়াই

প্রকাশিত: ০৫:৫৬, ২৪ মার্চ ২০১৫

আমলা-গাপটিলের অন্যরকম লড়াই

মোঃ মামুন রশীদ ॥ দারুণ কিছু করতে হলে ভাল একটা শুরুর খুব প্রয়োজন। গোড়াতেই গলদ হলে শেষ পর্যন্ত তা ভালভাবে কোনকিছু সমাপ্ত হয় না। আর ক্রিকেটের ক্ষেত্রে ব্যাটিং বা বোলিং উভয়ক্ষেত্রে দারুণ একটা শুরু পুরো দলকেই অনুপ্রাণিত ও উজ্জীবিত করে। আজ প্রথম সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকা ও নিউজিল্যান্ড মুখোমুখি হচ্ছে। নকআউট পর্যায়ে সেমি থেকেই বিদায় নেয়ার বাজে রেকর্ড আছে উভয় দলেরই। তবে এবারই প্রথম যেকোন একটি দল নিশ্চিতভাবে ফাইনালে উঠতে যাচ্ছে। সেজন্য প্রোটিয়া শিবির অন্যতম ওপেনার হাশিম আমলা এবং নিউজিল্যান্ড তাদের ওপেনার মার্টিন গাপটিলের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল। এ দুইজন আজ জ্বলে উঠলে তা দলের জন্যই ফলপ্রসূ হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এর আগে তিনবার সেমিফাইনাল খেলে বিদায় নিয়েছে। এবার দলটি দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ফাইনালে উঠার জন্য। চলতি বিশ্বকাপে বেশ ভালভাবে সেমি পর্যন্ত উঠে এলেও প্রোটিয়া শিবির শুরু থেকেই সব ম্যাচে টপঅর্ডারদের ব্যর্থতা বেশ সমস্যায় ফেলেছে দলকে। কারণ নির্ভরযোগ্য ওপেনার আমলা তেমন রানের মধ্যে নেই। ধারাবাহিকতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে আমলার ব্যাটে। আর অভিজ্ঞ ও নির্ভরযোগ্য এ ক্রিকেটারের ব্যর্থতার প্রভাব পড়েছে তাঁর উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী কুইন্টন ডি ককের ওপরও। তিনিও রানের মধ্যে নেই। কিন্তু প্রথমবার ফাইনাল খেলার জন্য আজ আমলার দিকে ভরসা নিয়ে তাকিয়ে আছে প্রোটিয়া শিবির। কারণ ৩১ বছর বয়সী এ ডানহাতি ওয়ানডে ক্যারিয়ারে করেছেন এখন পর্যন্ত ২০ সেঞ্চুরি। ওয়ানডে ক্রিকেটের ইতিহাসে তাঁর চেয়ে দ্রুত আর কেউ ২০ শতক হাঁকাতে পারেননি। মাত্র ১১১ ম্যাচে তিনি এই শতকগুলো হাঁকিয়েছেন। দক্ষিণ আফ্রিকার অধিনায়ক এবি ডি ভিলিয়ার্স আমলাকে অভিহিত করেছেন অন্যতম নির্ভরতা হিসেবে। যার ওপর নিশ্চিতভাবে আস্থা রাখা যায় যে তিনি এমন কিছু করবেন যাতে দলের ভিত মজবুত হয়। তবে টপঅর্ডারে দক্ষিণ আফ্রিকার হয়ে এখন পর্যন্ত চলতি আসরে একবারই সেটা করতে পেরেছেন আমলা। গ্রুপপর্বে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে ১৫৯ রানের দুর্দান্ত একটি ইনিংস খেলেছিলেন। অবশ্য এ ম্যাচটির আগেই খারাপ সময়টা কাটিয়ে উঠে তিনি ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে ৬৫ রানের একটি ইনিংস উপহার দেন। এ দুটি ম্যাচই মোটামুটি ভাল গেছে আমলার জন্য। আইরিশদের বিরুদ্ধে ম্যাচ খেলার পর আবারও নিজেকে হারিয়ে ফেলেছেন ক্রমান্বয়ে। পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ৩৮, আরব আমিরাতের বিরুদ্ধে ১২ করার পর কোয়ার্টার ফাইনালের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে হাসেনি আমলার ব্যাট। মাত্র ১৬ রানেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে সাজঘরে ফিরেছেন। এবার আমলার নিজেকে মেলে ধরার চ্যালেঞ্জ। অপরিহার্য সময়ে ভাল একটি ইনিংস খেলবেন আমলা এমন প্রত্যাশা নিয়েই তাকিয়ে আছে তাঁর দিকে পুরো দেশ। একবার না পারিলে দেখ ৭ বার! নিউজিল্যান্ডের জন্য এমন কথা বলা যেতেই পারে। কিন্তু এই সপ্তমবারে এসে কী সফল হতে পারবে কিউই শিবির? সাফল্যের চাবিকাঠি ইনিংসের গোড়াপত্তন। বিধ্বংসী ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম তো আছেনই, তাঁর সঙ্গে অভিজ্ঞ মার্টিন গাপটিলের ব্যাট হেসে ওঠা খুবই জরুরী ব্ল্যাক ক্যাপসদের প্রথম বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলার সুযোগ করে নিতে। আগে ৬ বার বিশ্বকাপ সেমি খেলেই বিদায় নিতে হয়েছে। এবার সেটা কোনভাবেই চায় না স্বাগতিক কিউইরা। এজন্য দলটি ভরসা করার মতো বেশ কয়েকজনকে পেয়েছে। তবে সবচেয়ে বড় পাওয়া গাপটিলের ব্যাটে ধারাবাহিকতা ফেরা। দুর্দান্ত ফর্মে ফিরেছেন তিনি। চিরাচরিত স্বভাব ধীরলয়ের ব্যাটিং হলেও তাঁতানো স্বভাবের বিন্দুমাত্র কমতি নেই তাঁর মধ্যেও সেটা করে দেখিয়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে। কোয়ার্টার ফাইনালে ক্যারিবীয় পেস আক্রমণকে একেবারেই বাজেরকম বানিয়ে দিয়েছেন ১৬৩ বলে ২৩৭ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংস। এর আগের ম্যাচেও বাংলাদেশের বিরুদ্ধে ১০৫ রানের একটি ইনিংস খেলেছিলেন। তার আগের ম্যাচে আফগানিস্তানের বিরুদ্ধে ৫৭ রান করে ফর্মে ফেরার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। সেটাকেই যেন ক্রমান্বয়ে আরও বড় করতে করতে এতটাই বিশাল করে ফেললেন যে গাপটিল হয়ে গেলেন ইতিহাসের অংশ। তাঁর ওপরই ভরসা করছেন অধিনায়ক ম্যাককুলাম। ২৮ বছর বয়সী এ শান্ত স্বভাবের ও ঠা-া মস্তিষ্কের খেলোয়াড় ফর্মে ফেরায় দারুণ সন্তুষ্ট তিনি। গ্রুপপর্বের প্রথম চার ম্যাচে গাপটিলের রান ছিল ৪৯, ১৭, ২২ ও ১১। ম্যাককুলাম বলেন, ‘তিনি আমাদের জন্য অনেক বড় একজন খেলোয়াড়। কিন্তু এখনও তাঁর কাজ শেষ হয়নি। আমরা প্রত্যাশা করছি আবারও বড় কিছু।’ মোট ৪৯৮ রান নিয়ে গাপটিল এখন চলতি বিশ্বকাপের দ্বিতীয় সর্বাধিক রান সংগ্রাহক।
×