ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

যুদ্ধাপরাধী বিচার;###;সালেহা বেগমের জবানবন্দী

ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকাররা আমার শ্বশুরকে হত্যা করে

প্রকাশিত: ০৫:৪৯, ২৪ মার্চ ২০১৫

ফোরকান মল্লিক ও তার সঙ্গী রাজাকাররা আমার শ্বশুরকে হত্যা করে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার মোঃ ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী সালেহা বেগম জবানবন্দীতে বলেছেন, আসামি ফোরকান রাজাকার ও তার সঙ্গীরা আমার শ্বশুর হাফেজ খলিফাকে গুলি করে হত্যা করে লাশ নদীতে ফেলে দেয়। জবানবন্দী শেষে সাক্ষীর জেরার জন্য আজ দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। কিশোরগঞ্জের রাজাকার কমান্ডার হাসান আলীর বিরুদ্ধে ২৪ ও ২৫তম সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করেছেন। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার জবানবন্দী প্রদান করবেন ৩০ মার্চ। অন্যদিকে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে বাগেরহাটের কসাই সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ, আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে জেরা করেন আসামি পক্ষের আইনজীবী। আজ আবারও তাকে জেরা করা হবে। আরেক মামলায় চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জের দুই রাজাকার মাহিদুর রহমান, মোঃ আফসার হোসেন চুটুর বিরুদ্ধে তদন্ত কর্মকর্তা জেডএম আলতাবুর রহমানের জেরা করেছেন আসামিপক্ষের আইনজীবী। আজ অসমাপ্ত জেরার দিন নির্ধারণ করা হয়েছে। সোমবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ ও ২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। এদিকে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামালপুর জেলার বদর বাহিনীর কমান্ডারসহ ৮ বিরুদ্ধে আজ সেফ হোমে এক সংবাদ সম্মেলনে তদন্ত সংস্থা চূড়ান্ত রিপোর্ট প্রদান করবেন। যাদের বিরুদ্ধে তদন্ত শেষে রিপোর্ট প্রদান করা হবে তারা হলেন আলবদর কমান্ডার আশরাফ হোসেন, অধ্যাপক শরীফ আহাম্মেদ ওরফে শরীফ হোসেন, মোঃ আব্দুল মান্নান, মোঃ আব্দুল বারী, হারুন, মোঃ আবুল হাশেম, এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হক ও এসএম ইউসুফ আলী। গ্রেফতারি পরোয়ানা জারির পর জামালপুর পুলিশ এসএম ইউসুফ আলী ও এ্যাডভোকেট মোঃ শামসুল হককে গ্রেফতার করেছে। পটুয়াখালীর রাজাকার কমান্ডার মোঃ ফোরকান মল্লিকের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনের ১২তম সাক্ষী সালেহা বেগম জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আজ আসামিপক্ষের আইনজীবী সাক্ষীকে জেরা করবেন। চেয়ারম্যান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শাহীনের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি মোঃ মুজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মোঃ শাহিনুর ইসলাম। সাক্ষী তার জবানবন্দীতে বলেন, আমার নাম সালেহা বেগম, স্বামীর নাম মোসলেম খলিফা (মৃত), পিতা মৃত মুকিম মুন্সী, গ্রাম-কাকড়াবুনিয়া, থানা-মির্জাগঞ্জ, জেলা পটুয়াখালী। আমার বর্তমান বয়স ৫৯/৬০ বছর। ১৯৭১ সালে বাংলা শ্রাবণ মাসের শেষের দিকে আমার শ্বশুর হাফেজ খলিফা, আমার চাচা শ্বশুর আক্কেল খলিফা ও সুরেন চৌকিদার সকাল ১০টার দিকে বাড়ি থেকে বের হয়ে সুবিদখালী বাজারের দিকে যায়। সন্ধ্যার দিকে আমার চাচা শ্বশুর ও সুরেন চৌকিদার এসে বলেন, তোমার শ্বশুর হাফেজ খলিফাকে রাজাকার ফোরকান মল্লিক গানে বোটে নিয়ে গেছে। ২ দিন পর সুরেন চৌকিদার ও আমার চাচা শ্বশুররা অনেক খোঁজাখুঁজির পর চরে তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে। এরপর এরা নৌকায় করে আমার শ্বশুরের লাশ কাকড়াবুনিয়াতে নিয়ে আসে। আমি তখন কাকড়াবুনিয়ার বাড়িতেই ছিলাম। আমি আমার শ্বশুরের লাশ দেখি উনার মাথায় এবং বুকে গুলির ক্ষত ছিল। সাক্ষী আরও বলেন, আমার চাচা শ্বশুর ও সুরেন চৌকিদার আমাকে বলেন যে, ফোরকান রাজাকার ও তার সঙ্গীরা আমার শ্বশুরকে গুলি করে হত্যা করে নদীতে ফেলে দেয়। আমার শ্বশুরকে যখন ধরে নিয়ে যায় তখন আমার শ্বশুরের সঙ্গে আমার চাচা শ্বশুর ও সুরেন চৌকিদার ছিল। এলাকার অনেক লোক আমার শ্বশুরের লাশ দেখে এবং এর পর আমার শ্বশুরকে কাকড়াবুনিয়া আমাদের বাড়িতে দাফন করা হয়। তিন রাজাকার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত বাগেরহাটের কসাই সিরাজুল হক সিরাজ মাস্টার, আব্দুল লতিফ, আকরাম হোসেন খাঁনের বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মোঃ হেলাল উদ্দিন জবানবন্দী প্রদান করেছেন। জবানবন্দী শেষে আসামিপক্ষের আইনজীবী তদন্ত কর্মকর্তাকে আংশিক জেরা করেছেন। আজ অসমাপ্ত জেরা করা হবে। চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বে তিন সদস্য বিশিষ্ট আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ এ আদেশ প্রদান করেছেন। ট্রাইব্যুনালে অন্য দুই সদস্য ছিলেন বিচারপতি জাহাঙ্গীর হোসেন সেলিম ও বিচারপতি আনোয়ারুল হক।
×