ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

পর্দায় ছবি থাকে তো আওয়াজ নেই, আওয়াজ আছে তো ছবি নেই, কারিগরি ত্রুটি লেগেই আছে ;###;কয়েক কোটি টাকায় নির্মিত স্টুডিও অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। নষ্ট হচ্ছে যন্ত্রপাতি ;###;নিজস্ব কোন জনবল নেই, চলে বিটিভির দয়ায়

সংসদ টেলিভিশনের হ য ব র ল অবস্থা ॥ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

প্রকাশিত: ০৫:৩৪, ২৪ মার্চ ২০১৫

সংসদ টেলিভিশনের হ য ব র ল অবস্থা ॥ চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ বেহাল দশা সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনের। জাতীয় সংসদের কার্যক্রম সরাসরি দেশবাসীর কাছে তুলে ধরতে ২০১১ সালে যাত্রা শুরু হওয়া চ্যানেলটি চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। প্রায়শই দেখা যায় কারিগরি ত্রুটি। হরহামেশাই শব্দ থেমে যায়। টিভির পর্দায় ছবি থাকে কিন্তু শব্দ শোনা যায় না। কখনও শব্দ শোনা গেলেও ছবি থাকে না। আবার কখনও কাঁপতে থাকে পর্দার ছবি। দর্শকদের পোহাতে হয় চরম বিড়ম্বনা। জাতীয় গুরুত্বসম্পন্ন চ্যানেলটির এই বেহাল দশা দেখার যেন কেউ নেই। এক ধরনের পরিকল্পনাহীন ভাবেই চলছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ জাতীয় সংসদের এই চ্যানেলটি। দেশে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা ও জাতীয় সংসদকে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করতেই টেরিস্ট্রিয়াল সুবিধায় চ্যানেলটি ওই বছরের ২৫ জানুয়ারি সম্প্রচার শুরু করে। নবম জাতীয় সংসদের অষ্টম অধিবেশনের প্রথম দিনে রাষ্ট্রপতির ভাষণের মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় এই টেলিভিশন চ্যানেলটির উদ্বোধন হয়। সংসদের নিয়ন্ত্রণাধীন চ্যানেলটি পরিচালনার জন্য কোনো সুচারু কাঠামো গড়ে ওঠেনি। বাংলাদেশ টেলিভিশনের (বিটিভি) সঙ্গে সমঝোতা চুক্তির ভিত্তিতে চলছে এই চ্যানেলটি। একজন মহাপরিচালকসহ দু-একজন কর্মকর্তাকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়া হলেও মূলত বিটিভির প্রেষণে নিযুক্ত জনবলের সাহায্যে চলছে সংসদ টেলিভিশন। অথচ সংসদ অধিবেশন বা অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য নেই কোন প্রযোজক। নেই চ্যানেলটি সঠিকভাবে চালানোর জন্য উপযুক্ত জনসম্পদ গড়ার উদ্যোগ। তাই পৃথক রাষ্ট্রীয় টিভি চ্যানেল হলেও বিটিভির সহায়তা ছাড়া এক অর্থে অচল সংসদ টেলিভিশন। অনুসন্ধানে জানা যায়, চ্যানেলটির পৃথক স্টেশনের জন্য ২০১৩ সালে সংসদ ভবনের উত্তর ফটকের কাছে সংসদ টেলিভিশনের একটি কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর ফলে লুই কানের নকশাকৃত বিশ্বের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী স্থাপনা হিসেবে সংসদের মূল নকশার পরিবর্তন ঘটে। তবে এই পরিবর্তন ঘটলেও শেষ পর্যন্ত সংসদ টেলিভিশনের স্বয়ংসম্পূর্ণ কেন্দ্রটি আর গড়ে ওঠেনি। কয়েক কোটি টাকা বাজেটে একটি স্টুডিও নির্মাণ করা হলেও বর্তমানে তা অকার্যকর হয়ে পড়ে আছে। অযতেœ-অবহেলায় পড়ে আছে স্টুডিওটি। নষ্ট হচ্ছে ক্যামেরাসহ নানা মূল্যবান যন্ত্রপাতি। ফলে ভ্রাতৃপ্রতিম প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিটিভির সহায়তায় চলছে প্রতিষ্ঠানটি। পুরনো স্টেশনটি চালু করার পরিবর্তে বর্তমানে সংসদ হাসপাতালের নিকটবর্তী স্থানে নতুন করে আরেকটি কেন্দ্র স্থাপনের চিন্তা করছে সংসদ কর্তৃপক্ষ। সংসদ অধিবেশন চলাকালে ক্যামেরা, এডিটিং প্যানেলসহ কারিগরি প্রযুক্তিসম্পন্ন বিটিভির একটি ভ্যানগাড়ির সাহায্যে চলে সম্প্রচার। দুই পদ্ধতিতে সংসদ টিভির কার্যক্রম প্রচার হয়। ভাড়াভিত্তিক স্যাটেলাইটের মাধ্যমে প্রচারের পাশাপাশি সারাদেশের মানুষের কাছে সম্প্রচারের জন্য বিটিভির টেরিস্ট্রিয়াল স্টিসেম ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও ব্যবহার করা হচ্ছে বিটিভির উন্নয়ন চ্যানেলের স্যাটেলাইট। বেসরকারী স্যাটেলাইট ব্যবহারের জন্য বছরে কমপক্ষে দেড় কোটি টাকা প্রদানের পাশাপাশি বিটিভিকেও একটি নির্দিষ্ট খরচ দেয় সরকারী এই চ্যানেলটি। নিয়ম অনুযায়ী সংসদ অধিবেশন না থাকলে তিন ঘণ্টার অনুষ্ঠান প্রচারের নিয়ম রয়েছে সংসদ টিভির। শুরুতে এই সময়সীমা ছিল দুই ঘণ্টা। তথ্যচিত্র প্রদর্শনী, সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকা- প্রচার, দেশাত্মবোধক সঙ্গীতানুষ্ঠান বা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কোন অনুষ্ঠান প্রচার করা হয়। তবে এই অনুষ্ঠান প্রচারের জন্য দক্ষ জনবলের অভাবে কোন অনুষ্ঠানসূচী নেই। উদাহরণস্বরূপ, ২০১৩ সালে রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের মৃত্যুর পর শোক প্রকাশ হিসেবে সংসদ থেকে হামদ-নাত প্রচারের কথা বলা হয় সংসদ টিভির তৎকালীন কর্মকর্তাদের। অথচ এই টিভির নিজস্ব কোন অনুষ্ঠান বা অনুষ্ঠানের ব্যাকআপ না থাকায় সেটি সম্প্রচার করা সম্ভব হয়নি। ফলে পুরোটা দোষ গিয়ে পড়ে সেই সময়ের দায়িত্বরত চ্যানেলটির কর্তাব্যক্তিদের ওপর। সংসদ টেলিভিশনের সূচনালগ্নে গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে কর্মরত ছিলেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এমন এক ব্যক্তি বলেন, স্বতন্ত্র টেলিভিশন হলেও সংসদ টিভিকে প্রথম থেকেই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে গড়ে তোলা হয়নি। বর্তমানে ট্রান্সমিশনসহ কিছু কারিগরি ঝামেলা থাকলেও মূল সমস্যা হচ্ছে দক্ষ জনবলের অভাব। কখনই এর নিজস্ব কাঠামো গড়ার উদ্যোগ নেয়া হয়নি। সেই সূত্রে কোন প্রযোজক পদে কাউকে নিয়োগ দেয়া হয়নি। চ্যানেলটির সুইচিং কিংবা এডিটিংয়ের জন্য অস্থায়ী ভিত্তিতে একজন করে লোক নিয়োগ দেয়া হলেও তাঁদের দিনভিত্তিক পারিশ্রমিক প্রদান করা হয়। নিমকোর মতো সরকারী প্রতিষ্ঠান থাকলেও সেখান থেকে প্রশিক্ষণ দিয়ে দক্ষ জনবল গড়ার কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি। ফলে পূর্ণোদ্যমে চলতে পারছে না চ্যানেলটি। একটি স্বয়ংসম্পূর্ণ চ্যানেল চালাতে কমপক্ষে ২৫ জন দক্ষ লোক লাগে। কিন্তু এই লোক নিয়োগ বা উপযুক্ত জনসম্পদ তৈরি করার বিষয়ে কখনই কোন প্রয়াস নেয়নি চ্যানেলটির উদ্যোক্তা সংসদ কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে পুরনো স্টেশনে ৭ কোটি টাকার বেশি মূল্যের যন্ত্রপাতি থাকলেও সেগুলো অব্যবহারের কারণে ধীরে ধীরে নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। অথচ পুরনো স্টেশনটি যথাযথভাবে চালু না করে নতুন করে কেন্দ্র নির্মাণের পথে চলছে সংসদ টেলিভিশনের কর্তৃপক্ষ জাতীয় সংসদ। অন্যদিকে দক্ষ জনবল নিয়োগ নিয়েও নেই কোন ভাবনা। সংসদ বাংলাদেশ টেলিভিশনে বর্তমানে মহাপরিচালকের (ব্রডকাস্টিং) দায়িত্ব পালন করছেন যুগ্মসচিব এমএ হালিম। চ্যানেলটির সমস্যা এবং এর উত্তরণের বিষয়ে মন্তব্যের জন্য কয়েক দফা যোগাযোগ করেও কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
×