ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

রুবেল এখন দারুণ ‘হ্যাপি’

প্রকাশিত: ০৫:৪৭, ২৩ মার্চ ২০১৫

রুবেল এখন দারুণ ‘হ্যাপি’

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ বিশ্বকাপের আগে যে রুবেল ছিলেন ভীষণ ‘দুখি’, সেই রুবেল এখন দারুণ ‘হ্যাপি’! বিশ্বকাপ মাতিয়ে যে দেশে ফিরেছেন। বিশ্বকাপের দল ঘোষণা হবে, ঠিক এর আগে বাংলাদেশ পেসার রুবেল হোসেনের বিরুদ্ধে অভিনেত্রী নাজনীন আক্তার হ্যাপি শিশু ও নারী নির্যাতন মামলা ঠুকে দেন। রুবেলের বিশ্বকাপ খেলাই অনিশ্চিত হয়ে পড়ে। তিনদিন জেলও খাটেন রুবেল। অবশেষে রুবেল শুধু বিশ্বকাপ দলেই থাকেননি, অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপেও খেলেছেন এবং বিশ্বকাপও মাতিয়েছেন। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে জিতে যে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠেছে, সেটিত রুবেলের করা শেষ তিন বলে ২ উইকেট নেয়াতেই সম্ভব হয়েছে। রুবেল তাই সেই থেকেই দেশের ‘হিরো’ হয়ে গেছেন। এমন নৈপুণ্য করে কী আর কেও খুশি না হয়ে পারেন। রুবেলও তাই বলেছেন, ‘আমি দারুণ খুশি।’ সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডকেও (বিসিবি) ধন্যবাদ দিতে ভুলেননি। বোর্ডের প্রতি কৃতজ্ঞতাও প্রকাশ করেছেন। বলেছেন, ‘একটা সময় বিশ্বকাপের আশা ছেড়েই দিয়েছিলাম। বিশ্বকাপে বুঝি খেলতে পারব না, এমনটা ধরে নিয়েছিলাম। বিসিবি এবং নির্বাচকম-লী আমার ওপর আস্থা রেখেছে বলেই বিশ্বকাপে খেলার সুযোগ পেয়েছি। সে জন্যই বিসিবির প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। দলে থাকার সুযোগ পেয়ে বলেছিলাম, দেশের জন্য কিছু একটা করতে চাই। পারফর্ম করে প্রতিদান দিতে পেরেছি।’ নাজনীন আক্তার মামলা করতেই প্রথমে পালিয়ে বেড়িয়েছেন ৩ দিন। এরপর হাইকোর্ট থেকে অন্তর্বর্তীকালীন জামিনে বেরিয়েও ছিলেন। কিন্তু ছিলেন না স্বস্তিতে। এতটাই অস্বস্তি জেঁকে ধরেছিল যে প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লীগের শেষ ২ ম্যাচও খেলতে পারেননি। একটা সময় মামলা থাকায় চূড়ান্ত দলেও জায়গা পাবেন কি না, তা অনিশ্চিত হয়ে পড়েছিল। কিন্তু বিসিবি রুবেলকে চেয়েছিল। এমন দ্রুতগতির বোলার যে ছিল না। সঙ্গে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের কন্ডিশন বিবেচনায় রুবেলের মতো ফিট একজন পেসারকে কোনভাবেই হাতছাড়া করতে চায়নি বিসিবি। তাই চূড়ান্ত দলেও রুবেলের স্থান হয়েছে। তবে নিম্ন আদালত থেকে জামিন নিতে যেয়ে তিনদিনের জেলবাস হয়েছিল রুবেলের। সেই জেলবাস শেষে যখন বের হন, তখন বিশ্বকাপ খেলার অনুমতিও মিলে যায়। এখনত নাজনীন আক্তার হ্যাপিও জানিয়ে দেন আর মামলা চালিয়ে যেতে চান না। বিশ্বকাপে নৈপুণ্য করার সঙ্গে জেলা-হাজতের হাত থেকে বাঁচার বিষয়টিও আরও সুখী করে তুলেছে রুবেলকে। বিশ্বকাপে ৬ ম্যাচে ৮ উইকেট পেয়ে নিজেকে মেলে ধরতে পেরেছেন। তবে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে যে দুর্দান্ত বোলিং করে দলকে জিতিয়েছেন, সেটিই রুবেলকে ‘নায়ক’ তকমা দিয়েছে। এ রকমটি রুবেল করতে পেরেছেন পেস বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিকের জন্যই। এমনটিই জানিয়েছেন বিশ্বকাপে অনবরত ১৪০ গতিতে বল করা এ পেসার। বলেছেন, ‘হিথ স্ট্রিক কিছু কাজ করেছেন, এই যেমন ডেড বলে ইয়র্কার ডেলিভারি এবং রিভার্স সুইং। এ্যাডিলেডের উইকেট থেকে বাউন্স পাওয়ায় আমার জন্য লাভই হয়েছে। ইয়র্কার এবং রিভার্স সুইং দিতে পেরেছি।’ রুবেল এখন তাই দারুণ খুশি। শুধু দেশের মানুষের কাছেই রুবেল ‘হিরো’ নন; প্রবাসী বাংলাদেশীরাও রুবেলকে মনে জায়গা দিয়েছেন। রুবেল সেটি উপলব্ধিও করতে পেরেছেন। তাইত বলেছেনও, ‘প্রবাসী দর্শকরা কতটা ভালবাসে আমাকে, তা দেখলাম। তাদের ভালবাসার প্রতিদান দিতে চেষ্টা করব।’ দেশে ফিরে এখন কয়েকদিন বিশ্রাম কাটিয়ে আবার মাঠে ফিরতে হবে রুবেলসহ সব ক্রিকেটারকে। এর মাঝেই পাবেন রাষ্ট্রীয় সংবর্ধনা। শুভেচ্ছায় সিক্ত হতেই থাকবেন। রুবেল অবশ্য এরই মধ্যে সেই শুভেচ্ছা শুধু দেশবাসীর কাছ থেকেই নয়, বিদেশী, সাবেক ক্রিকেটারদের কাছ থেকেও শুভেচ্ছা পাচ্ছেন। যেই পেস বোলারদের নিয়ে কথা বলছেন, রুবেলের নাম তাদের কণ্ঠে থাকছেই। ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে রোহিত শর্মাকে করা ফুলটস বলটি আম্পায়ার ‘নো’ না দিলে এ ম্যাচের নির্ধারকও রুবেল হতে পারতেন। তাই রুবেলত ‘হ্যাপি’ হবেনই।
×