ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

চার মাস পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালা ভাঙলেন ম্যাজিস্ট্রেট

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ২৩ মার্চ ২০১৫

চার মাস পর রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের তালা ভাঙলেন ম্যাজিস্ট্রেট

স্টাফ রিপোর্টার, রংপুর ॥ দীর্ঘ প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং উর্ধতন পুলিশ কর্মকর্তার নেতৃত্বে রবিবার রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক ও প্রশাসনিক ভবনের তালা খুলে দেয়া হয়েছে। আজ সোমবার থেকে একাডেমিক ও প্রশাসনিক কার্যক্রম যথারীতিভাবে পরিচালিত হবে বলে জানিয়েছেন উপাচার্য প্রফেসর ড. একেএম সদস্যরা অলিখিত স্ট্যাম্প ও কার্টিজ পেপারে বেশ কয়েকটি নূর-উন-নবী। অন্যদিকে সমন্বিত অধিকার বাস্তবায়ন পরিষদের ব্যানারে আন্দোলনকারী শিক্ষক-কর্মকর্তারা জানিয়েছেন উপাচার্য অপসারণ না হওয়া পর্যন্ত তারা তাদের ধারাবাহিক আন্দোলন চালিয়ে যাবেন। এদিকে তালা খোলার এই ঘটনাকে কেন্দ্র করে রবিবার সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে চরম উত্তেজনা বিরাজ করে। পক্ষে বিপক্ষে চলতে থাকে বিক্ষোভ মিছিল সভা-সমাবেশ। তবে ম্যাজিস্ট্রেটের উপস্থিতিতে বিপুলসংখ্যক পুলিশ থাকার কারণে কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। এর আগে রবিবার ভোর রাতে উপাচার্যের বাসভবন লক্ষ্য করে দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় কে বা কারা। জানা গেছে, পদোন্নতি, বকেয়া বেতনসহ নানামুখী দাবিতে গত সেপ্টেম্বরে প্রথম আন্দোলনে নামেন শিক্ষকরা। এরপর তাদের সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে যোগ দেন বেশকিছু কর্মকর্তা এবং কিছু সাধারণ শিক্ষার্থীরা। ধারাবাহিক আন্দোলনের অংশ হিসেবে গত ৩ ডিসেম্বর তারা প্রথম প্রশাসনিক ভবনে তালা লাগিয়ে দেয়। ফলে সে সময় থেকেই প্রশাসনিক কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। এরপর ৪ ফেব্রুয়ারি তালা দেয়া হয় সব একাডেমিক ভবনে। এ সময় তাদের আন্দোলন উপাচার্যের অপসারণ দাবিতে এক দফায় রূপ নেয়। চলমান এই আন্দোলনের কারণে ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম যা গত ৪, ৫, ৬ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল তাও আজ পর্যন্ত হয়নি। এতে করে সৃষ্টি হবে ভয়ানক সেসন জট পরিস্থিতির। এ অবস্থায় পুরোপুরি অকার্যকর হয়ে পড়ে মাত্র ৭ বছর বয়সী রংপুরের এই বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়টি। আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ আমরণ অনশন, অবস্থান কর্মসূচী অব্যাহত রাখেন। এ নিয়ে উপাচার্যপন্থী এবং আন্দোলনকারীদের সঙ্গে কয়েক দফা অপ্রীতিকর ঘটনাও ঘটে যায়। এদিকে চলমান এ অচলাবস্থা নিরসনে স্থানীয় সংসদ সদস্য এইচএন আশিকুর রহমান, সিটি মেয়র সরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টুসহ অনেকেই নানামুখী পদক্ষেপ নিলেও আন্দোলনকারীরা তাদের দাবি আদায়ে অনড় থাকায় কার্যত চার মাস ধরেই অকার্যকর হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়। উপাচার্য প্রফেসর ড. নূর-উন-নবী জানান, তাদের সব দাবি আমার পক্ষে মেনে নেয়া সম্ভব নয়। তাছাড়া ইউজিসি কিংবা মন্ত্রণালয় সাড়া না দিলে তার পক্ষে কিছুই করার নেই। তাদের কিছু দাবিকে অযৌক্তিক আখ্যায়িত করে তিনি বলেন, চলমান এই সঙ্কট দূরীকরণে তিনি প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, স্পীকার, জাপা চেয়ারম্যান এরশাদসহ বিভিন্ন মহলে আলোচনা করেছেন। তারা তাকে স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন যে, বিশ্ববিদ্যালয়ের সুষ্ঠু শিক্ষার পরিবেশ ফিরিয়ে আনতে যা করা দরকার আপনি তাই করেন। আর এ কারণেই তিনি জেলা প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে তালা খোলার এই উদ্যোগ নেন। তিনি জানান, আজ সোমবার থেকে ক্লাস এবং প্রশাসনিক কার্যক্রম আগের মতোই পরিচালিত হবে। একই সঙ্গে তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ বজায় রাখতে অতীতের সব ভেদাভেদ ভুলে গিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে নিজ নিজ দায়িত্ব পালনের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছেন।
×