ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা জেটি নির্মাণে এমওইউ স্বাক্ষরে অনীহা

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্প নিয়ে নৌ মন্ত্রণালয়ের গড়িমসি

রশিদ মামুন ॥ মাতারবাড়ি বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা খালাসের জন্য জেটি নির্মাণে প্রয়োজনীয় সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) স্বাক্ষরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে গড়িমসির অভিযোগ উঠেছে। সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্পে (ফাস্টট্র্যাক) গুরুত্বপূর্ণ এমওইউ এর বিষয়ে গত ১৭ মাস ধরে চেষ্টা করা হলেও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না। নিরুপায় হয়ে বিদ্যুত বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম গত ১৯ মার্চ লেখা এক চিঠিতে নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। ইতোপূর্বে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্রের কয়লা খালাসের জন্য বিদ্যুত এবং নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে একই পরিস্থিতির উদ্ভব হয়। ওই সময় সরাসরি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপে বিষয়টির সমাধান হয়। আর এবার শর্ত পালন না করতে পারায় দাতা সংস্থা জাপান ইন্টারন্যাশনাল কোঅপারেশন এজেন্সি (জাইকা) অসন্তোষ প্রকাশ করছে। দেশের একমাত্র বড় বিদ্যুত কেন্দ্র হচ্ছে মাতারবাড়ি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট যার অর্থায়ন নিশ্চিত হয়েছে। জাইকা বিদ্যুত কেন্দ্রটির অর্থায়ন করতে চেয়েছে। শুধু বিদ্যুত কেন্দ্র নয় এখানে দশ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কেন্দ্রের জন্য একটি পোর্টও নির্মাণ করা হবে। যা দিয়ে আমদানি করা কয়লা খালাস হবে। বিদ্যুত বিভাগের একজন কর্মকর্তা বলেন, বিদ্যুত কেন্দ্রের অর্থায়নের জন্য আগেভাগে সব কাজ করতে হয়। আর কেন্দ্রটি আমদানি করা কয়লাতে চলবে। তাই কয়লা খালাসের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সহায়তা প্রয়োজন। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর এবং অন্যান্য সংশ্লিষ্ট দফতরের সঙ্গে এ বিষয়ে একটি সমঝোতা থাকতে হবে। এসব কাজে যত দেরি হবে দাতা সংস্থার কাছে ততই আমাদের ভাবমূর্তি নষ্ট হবে। ইতোমধ্যে তারা একটি বৈঠকে আমাদের প্রতি অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। সরকারের অগ্রাধিকারে রয়েছে বিদ্যুত জ্বালানি। শীর্ষ পর্যায়ের নির্দেশ রয়েছে যাতে বিদ্যুত জ্বালানির কোন ফাইল একদিনও কোথাও পড়ে না থাকে। কিন্তু বারবার তাগাদা দেয়ার পরও নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এসব বিষয়ে গুরুত্ব দিচ্ছে না। বিদ্যুত বিভাগের সচিবের পাঠানো চিঠির বিষয়ে জানতে চাইলে নৌপরিবহন সচিব শফিক আলম মেহেদী জনকণ্ঠকে বলেন, এ বিষয়ে তার তেমন কিছু জানা নেই। তবে তিনি সংশ্লিষ্ট বিভাগে এ সংক্রান্ত বিষয়ে খোঁজ নেবেন বলে জানান। তাকে উদ্দেশ্য করেই চিঠিটি দেয়া হয়েছে উল্লেখ করলে তিনি বলেন, আমার কাছেই তো সব কিছু আসে। আমি তা সংশ্লিষ্টদের কাছে পাঠিয়ে দেই। গত ১৯ মার্চ বিদ্যুত বিভাগের সচিবের চিঠিতে বলা হয়েছে, ‘দেশের ক্রমবর্ধমান বিদ্যুত চাহিদা মোকাবেলায় কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (সিপিজিসিবিএল) কক্সবাজারের মহেশখালিতে একটি এক হাজার ২০০ মেগাওয়াটের বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ করছে। এজন্য একটি বিশেষায়িত জেটি নির্মাণের অনুমতি ও তা পরিচালনার কাজে সহযোগিতা চেয়ে বিদ্যুত বিভাগের পক্ষ থেকে দীর্ঘদিন ধরে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করা হচ্ছে। প্রকল্পের প্রয়োজনে গত ১১ নবেম্বর ২০১৩ থেকে একাধিকবার নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষকে অনুরোধ করা হয়েছে। এমওইউ এর বিষয়ে গত বছর ২৭ জুলাই নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের তৎকালীন সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুর ইসলাম উপআনুষ্ঠানিক পত্রের মাধ্যমে মতামত এবং স্বাক্ষরের বিষয়ে একমত পোষণ করেছিলেন। বিদ্যুত বিভাগের সচিব চিঠিতে আরও বলেন, বিদ্যুত বিভাগের প্রকল্পটি সরকারের অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিজেই এই প্রকল্প বাস্তবায়ন অগ্রগতি মনিটরিং করে থাকেন। জাইকা প্রকল্পের অর্থায়নে যেসব শর্ত দিয়েছে তার মধ্যে বিদ্যুত বিভাগ এবং সিপিজিসিবিএল-এর সঙ্গে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয় এবং সংশ্লিষ্ট বিভাগের সঙ্গে একটি সমঝোতার কথা বলা হয়েছে। দীর্ঘ দিনেও এমওইউ স্বাক্ষর করতে না পারায় জাইকা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। উল্লেখিত চিঠির শেষাংশে এমওইউটি দ্রুত স্বাক্ষরের জন্য নৌপরিবহন সচিবের হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়। একই সঙ্গে বলা হয় দেশে বড় কয়লাভিত্তিক বিদ্যুত কেন্দ্র বাস্তবায়নে আমাদের অভিজ্ঞতা নেই। দেশে গ্যাসের সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এজন্য কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ জরুরী। সে প্রেক্ষিতে জাইকার অর্থায়নে কয়লা বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মিত হলে শুধু সক্ষমতাই নয় দেশের বিদ্যুত সমস্যার সমাধান হবে এবং অর্থনীতি বেগবান হবে। সরকারের পরিকল্পনায় ২০২০ সাল নাগাদ সাত হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুত কয়লাভিত্তিক কেন্দ্র থেকে উৎপাদন করার কথা বলা হচ্ছে। এজন্য প্রতিদিন অন্তত ৭০ হাজার মেট্রিক টন কয়লার প্রয়োজন হবে। কিন্তু প্রতিদিন এই পরিমাণ কয়লা আমদানির জন্য সমুদ্রবন্দরের যে ক্ষমতা ও সুযোগ-সুবিধা দরকার তার কিছু এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি। অন্যদিকে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে এ বিষয়ে বিদ্যুত মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়হীনতাও রয়েছে। কয়লার জাহাজ সাধারণত ৩০ হাজার টনের কম ধারণক্ষমতার হয় না। এ ধরনের জাহাজ বন্দরে আসার জন্য পানির যে গভীরতা দরকার তা মংলা কিংবা চট্টগ্রামেও নেই। মূল জাহাজ বহির্নোঙরে রেখে লাইটারেজ করে কয়লা খালাস করতে হলে বন্দরে শুধু কয়লার জাহাজেরই জট লাগবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।
×