ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

বিদেশী গার্মেন্ট ক্রেতারা ভারতের দিকে ঝুঁকছে

প্রকাশিত: ০৫:২১, ২৩ মার্চ ২০১৫

বিদেশী গার্মেন্ট ক্রেতারা ভারতের দিকে ঝুঁকছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলাদেশের চলমান সঙ্কটময় পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে বিদেশী ক্রেতাদের টানছে ভারতের তৈরি পোশাক রফতানিকারকরা। ভারতীয় গণমাধ্যম ইকোনমিক টাইমসের ইন্টারনেট সংস্করণে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা আর চীনে তৈরি পোশাকের উৎপাদন খরচ বৃদ্ধির কারণে আন্তর্জাতিক ক্রেতারা ভারতের দিকে ঝুঁকছেন। ক্রেতারা এই দুই দেশ থেকে কার্যাদেশ প্রত্যাহার করে নিচ্ছেন। তা ভারতীয় রফতানিকারকদের দেয়া হচ্ছে বলে ইকোনমিক টাইমসের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়। প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, এতে করে ২০১৪-১৫ অর্থবছরের ১১ মাসে (এপ্রিল-ফেব্রুয়ারি) তৈরি পোশাক রফতানি থেকে ভারতের আয় ১৩ দশমিক ৪ শতাংশ বেড়েছে। কনফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান টেক্সটাইল ইন্ডাস্ট্রির সেক্রেটারি জেনারেল ডিকে নায়েরকে উদ্ধৃত করে প্রতিবেদনে বলা হয়, চলতি অর্থবছরে পোশাক রফতানি বৃদ্ধি খুবই আশাব্যঞ্জক। তিনি বলেন, রাজনৈতিক সহিংসতা ও নিরাপত্তা বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের জন্য একটি প্রধান সমস্যা হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ইকোনমিক টাইমস বলে, বাংলাদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের অনেক ক্রেতাই এখন ভারতীয় পণ্য কেনায় আগ্রহী। সংবাদ মাধ্যমটি বলে, ইতোমধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র তাদের চাহিদা বৃদ্ধি করেছে। তবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এখনও চুপচাপ রয়েছে। ২০১৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারত এক হাজার ৫৩৮ মিলিয়ন ডলারের তৈরি পোশাক রফতানি করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৮ দশমিক ৭ শতাংশ বেশি। ভারতের পোশাক রফতানি আয় ২০১৩Ñ১৪ অর্থবছরের ১৩ হাজার ৪৫৬ মিলিয়ন ডলার চলতি অর্থবছরের ১১ মাসেই ছাড়িয়ে গিয়ে দাঁড়িয়েছে ১৫ হাজার ২৬২ মিলিয়ন ডলারে। প্রতিবেদনটিতে ভারতের জয়ন্তী এ্যাপারেলসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এইচকেএল ম্যাগুকে উদ্ধৃত করে বলা হয়, মূলত চীনে পোশাক শিল্পে উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় ভারতের রফতানি বাড়ছে। তিনি বলেন, চীনে মজুরি বৃদ্ধি পাওয়ায় সেখানকার পোশাক শিল্প ঝুঁকিতে পড়েছে। প্রায় সব আন্তর্জাতিক ব্যান্ড এখন ভারতীয় রফতানিকারকদের সঙ্গে কাজ করছে। তবে, বাংলাদেশ অনেক সস্তায় পোশাক তৈরি করে। তাদের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় পারা সম্ভব নয় চীনে মজুরি বৃদ্ধিকে ভারতীয় রফতানিকারকরা সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করতে পারে। এদিকে বাংলাদেশে টানা দুই মাসের বেশি সময় ধরে বিএনপি-জামায়াত জোটের সহিংস হরতাল-অবরোধ চলছে। যাতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশের আমদানি-রফতানিসহ সব ধরনের ব্যবসা-বাণিজ্য। যদিও এখন দেশের রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি কমলেও ঋণাত্মক পর্যায়ে যায়নি। চলতি অর্থবছরের প্রথম আট মাসে (জুলাই-ফেব্রুয়ারি) রফতানি খাতে বাংলাদেশের আয় হয়েছে দুই হাজার ৩১ কোটি (২০ দশমিক ৩১ বিলিয়ন) ডলার, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ২ শতাংশের বেশি। বিরাজমান সমস্যাকে রফতানির জন্য বড় সমস্যা উল্লেখ বাংলাদেশ এক্সপোর্টার্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুস সালাম মুর্শেদী জনকণ্ঠকে বলেন, দুই মাসের বেশি সময় ধরে একটা অস্থিতিশীল অবস্থা চলছে। একটা সংকট কাটিয়ে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করি তখন আরেকটা সঙ্কট এসে পড়ে। তাজরীন আর রানাপ্লাজা ট্রাজেডি পর জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে একবছর আগেও এ ধরনের সঙ্কট ছিল প্রায় ৪ মাস। যা আমাদের ইমেজ সঙ্কট তৈরি করে। এমন পরিস্থিতি বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুন্নœ হচ্ছে। বায়াররা অর্ডার বাতিল করে দিচ্ছে। আর কয়েক মাস পর রফতানিতে এর ভয়াবহ প্রভাব দেখা যাবে। তিনি বলেন, এটা সত্য যে আমাদের প্রতিবেশী বন্ধু দেশ ভারতসহ অন্য প্রতিযোগী দেশগুলো সে সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে। আমাদের তুলনায় তাদের প্রবৃদ্ধি অনেক বেশি। তাদের কারও প্রবৃদ্ধি ৩০ শতাংশের বেশি। এছাড়া ভারতকে ‘টেক্সটাইল জায়েন্ট’ বলে অভিহিত করেন সালাম মুর্শেদী। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ছাড়াও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মুদ্রা ইউরোর দরপতন বাংলাদেশের পোশাক রফতানিতে প্রভাব রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ইউরো জোনে বাংলাদেশের মোট রফতানির ৬০ শতাংশ যায়।
×