ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাফল্য

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৩ মার্চ ২০১৫

মাতৃস্বাস্থ্য সুরক্ষায় সাফল্য

মা হচ্ছেন তাঁর শিশুর জন্য নিরাপদ আশ্রয়। এই আশ্রয় কেবল ভূমিষ্ঠ হওয়ার পরই নয়, মায়ের গর্ভে থাকাকালে শিশুর সম্পূর্ণ পুষ্টি চাহিদা মেটাতে সক্ষম একজন সুস্থ ও স্বাস্থ্যবতী মা। কিন্তু মা নিজেই যদি পুষ্টি তথা স্বাস্থ্য সমস্যার শিকার হন তাহলে তার শিশুর অবস্থা কী হবে তা সহজে অনুমেয়। মা যেন সুস্থ ও নিরোগ সন্তান জš§ দিতে পারেন সেজন্য পরিবারে খাদ্যের সুষম বণ্টন নিশ্চিত করা দরকার এবং পুষ্টি ও খাদ্য সম্পর্কে মায়েদের আরও সচেতন করা জরুরী। এতে একটি কর্মক্ষম ও সুস্থ জাতি হিসেবে আমাদের গড়ে ওঠার সুযোগও বাড়বে। এক সময় মা ও তার শিশুর মৃত্যুসহ নানা স্বাস্থ্যগত সমস্যার বিষয়টি সঙ্কট হিসেবে দেখা হতো। তাই নিরাপদ মাতৃত্বের বিষয়টি বার বার উঠে এসেছে। বিভিন্ন সময়ে নানা প্রচেষ্টায় মা ও শিশুর স্বাস্থ্যসেবায় ব্যাপক সফলতা দেখিয়েছে বাংলাদেশ। মাতৃস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি ও মাতৃমৃত্যু রোধকল্পে ১৯৯৭ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ২৮ মে নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালনের ঘোষণা দেন। সেই ধারাবাহিকতায় প্রতিবছর নিরাপদ মাতৃত্ব দিবস পালিত হয়ে আসছে। এক পরিসংখ্যানে জানা গেছে, বাংলাদেশে শতকরা ৬৮ ভাগ গর্ভবতী মহিলা একটি প্রসব পূর্ব (এএসসি) সেবা এবং ২৬ ভাগ মহিলা চারটি প্রসব পূর্ব সেবা গ্রহণ করে থাকেন। গর্ভকালীন শতকরা ১৫ জন মহিলাই নানাবিধ ঝুঁকিপূর্ণ জটিলতায় ভোগেন, যা মাতৃমৃত্যুর জন্য দায়ী। তবে স্বস্তির কথা হলো সেই মা ও নবজাতকের মৃত্যুঝুঁকির ব্যাপারে দেশের ব্যাপক উত্তরণ ঘটেছে। এই ব্যাপারে দেশী-বিদেশী মিডিয়ায়ও বাংলাদেশের সফলতার বিষয়টি প্রকাশিত ও প্রশংসিত হয়েছে। মাতৃ ও নবজাতক শিশুমৃত্যু হ্রাসে বাংলাদেশ অভাবনীয় সাফল্য পেয়েছে। এই ক্ষেত্রে জোরালো ভূমিকা রাখছে জাতীয় অনুপুষ্টি উপাদানের (মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট) পর্যাপ্ত ব্যবহার, যা বিশ্বের সকল দেশের জন্য উদাহরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাংলাদেশের এ সাফল্য বিবেচনায় নিয়ে মা ও শিশু স্বাস্থ্যের ওপর বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার বিদ্যমান গাইড লাইনের সংস্কার আনা দরকার। সম্প্রতি ‘দ্য গার্ডিয়ানে’ প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। গত ১৫ বছরে দেশের মাতৃমৃত্যুর হার প্রায় ৬০ শতাংশ এবং শিশু মৃত্যুর হার প্রায় অর্ধেক কমেছে। ১৯৯০ সালে সন্তান জন্ম দেয়ার সময় প্রতি ১ লাখ নারীর মধ্যে ৫৭৪ জন মারা গেছে! এই সংখ্যা কমে ২০০১ সালে ৩২২ এবং ২০১১ সালে ১৯৪ জনে নেমে এসেছে? ২০১৫ সালের মধ্যে ১৪৩-এ নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করেছে? অন্যদিকে এক বছর বয়সী শিশুমৃত্যু (প্রতি হাজারে) ৮৭ থেকে ৫২ এবং নবজাতকের মৃত্যুহার ৫২ থেকে ৩৭-এ নেমে এসেছে। তবে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অনুযায়ী ২০১৫ সালের মধ্যে দেশের মাতৃমৃত্যুর হার (প্রতি হাজার ) ১.৪৩-এ নামিয়ে আনা প্রয়োজন। আসলে মায়ের বয়স, প্রজনন স্বাস্থ্য এবং গর্ভকালীন খাদ্যের সঙ্গে মা ও শিশুমৃত্যুর প্রত্যক্ষ সম্পর্ক রয়েছে। খাদ্যের বেলায় আর্থিক সঙ্গতি যতটা দায়ী, তার চেয়ে কম দায়ী নয় খাদ্যের পুষ্টিগুণ সম্পর্কে অজ্ঞতা। মাতৃগর্ভে ভ্রƒণের যথাযথ পরিপুষ্টি প্রয়োজন। ভ্রƒণের বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে পুষ্টির প্রয়োজনীয়তাও বাড়বে। তাই গর্ভবতী মায়ের সুষম খাদ্য ও পুষ্টিমানের বাড়তি খাবারের দরকার। বিশেষ করে, গর্ভধারণের শেষের তিন-চার মাস থেকে বাড়তি খাবারের প্রয়োজন। এ জন্য সুস্থ ও সবল শিশুর জন্য গর্ভাবস্থায় মাকে ্প্রয়োজনীয় পুষ্টিকর খাদ্য খেতে দিতে হবে। এতে মা ও শিশু অপুষ্টি এবং মৃত্যুঝুঁকি কমে আসবে।
×