ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

অপহরণ প্রাণহরণ

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২৩ মার্চ ২০১৫

অপহরণ প্রাণহরণ

অপহরণকারীরা জঘন্য অপরাধী, একের পর এক তারা মড়ার ওপর খাঁড়ার ঘা দিয়ে চলেছে। প্রতি সপ্তাহেই দেশের কোথাও না কোথাও মুক্তিপণ আদায়ের লক্ষ্যে অপহরণের ঘটনা ঘটছে। মুক্তিপণ না পেলে তারা প্রাণ হরণেও দ্বিধা করছে না। মানুষটি শিশু না বয়স্ক, নারী না পুরুষ, সে বিবেচনা নেই তাদের। মাত্র ক’দিন আগে সিলেটে শিশু স্কুলছাত্র আবু সাঈদ অপহরণের পর খুন ও লাশ গুমের মর্মান্তিক এবং অত্যন্ত উদ্বেগজনক ঘটনাটি ঘটেছে। বৃহস্পতিবার ঢাকার উত্তরা থেকে অপহৃত এক ব্যবসায়ীকে শ্রীমঙ্গলের একটি পাহাড়ের উঁচু টিলার ওপর পরিত্যক্ত ঘর থেকে উদ্ধার করা হয়। শিশু সাঈদের ঘটনাটি চরম পৈশাচিক ও নিষ্ঠুরতাকেও হার মানিয়েছে। নৃশংসতা ও অমানবিকতা সমাজের কোন্ পর্যায়ে গিয়ে ঠেকেছে সে দৃষ্টান্ত দেখাল ঘাতকরা। সাধারণ মানুষের পাশাপাশি কোমলমতি নিষ্পাপ শিশুরাও মানুষরূপী শ্বাপদের নৃশংসতা থেকে রক্ষা পাচ্ছে না। দুর্বৃত্তরা টাকার জন্য হত্যা করেছে শিশু আবু সাঈদকে। দুঃখজনক হলো, এই ঘটনাটির সঙ্গে জড়িত আছে পুলিশ, রাজনৈতিক দলের কর্মী ও পুলিশের সোর্স। অপরদিকে অপহৃত ব্যবসায়ী ওসমান গনিকে কৌশল খাটিয়ে উদ্ধারে সক্ষম হয় পুলিশ। অপহরকারী চক্রের কয়েক সদস্যকে পাকড়াও করতে সমর্থ হয় তারা। অসভ্যতা, নিষ্ঠুরতা ও অমানবিকতার ঘেরাটোপে এই সমাজ যেন দুর্বৃত্তদের হাতে বন্দী হয়ে পড়ছে। শিশু অপহরণের বিষয়টি অনেক সময়েই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অগোচরে রাখা হয় শিশুটির পরিবারের পক্ষ থেকে। এমন উদাহরণ বিরল নয় যে দুষ্কৃতকারীরা অপহৃতকে হত্যা করে লাশ হয় নদীতে ভাসিয়ে দেয়, না হলে রাস্তা বা জঙ্গলের মধ্যে ফেলে রাখে। অপহরণ এবং অপহরণের পর প্রাণহরণের ঘটনা বেড়ে যাওয়ার কী কারণ? এ ব্যাপারে আইন ও বিচারসংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের মত হচ্ছে, অপরাধীদের অধিকাংশ ধরা না পড়া এবং কিছু কিছু ধরা পড়লেও দ্রুত বিচার না হওয়ার ফলে এ জাতীয় অপরাধ বেড়ে চলেছে। জনমনে এমন প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক তাহলে রাষ্ট্রের বিশাল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী করছে কী? অপহরণের ঘটনা এমনই, এ অপরাধ রোধ করতে গঠিত হয়েছে পুলিশের বিশেষ সেল (এ্যান্টি কিডন্যাপিং স্কোয়াড)। যারা মোবাইল ট্র্যাকিং করে অপহরণকারীদের শনাক্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। ওই সেলের লোকবল ও দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে নাগরিকদের সতর্কতা ও সচেতনতারও কোন বিকল্প নেই। শিশুদের সুরক্ষা পরিবার ও সমাজ থেকে নিশ্চিত করার ব্যবস্থা থাকা কাম্য। অপহরণের বিরুদ্ধে সামাজিক সচেতনতা ও প্রতিরোধ গড়ে তোলাও জরুরী। সাধারণত রাজধানীতেই অপহরণের মাত্রা বেশি। তাই প্রাথমিকভাবে ঢাকায় অপহরণরোধে বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার। প্রতিটি থানা এলাকায় তালিকাভুক্ত অপরাধীদের ওপর নজরদারি এবং বাস টার্মিনাল, রেলস্টেশন ও লঞ্চঘাটে আরও বিশেষ টহল ব্যবস্থা চালু রাখা হলে অবস্থার উন্নতি ঘটবে বলে ধারণা করা যায়।
×