ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ক্রিকেট আনন্দের উৎস

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

ক্রিকেট আনন্দের উৎস

আবেগপ্রবণ না হলে মানুষ বা জাতি কেউই বড় কোন কাজ করতে পারে না। সে পর্যন্ত আবেগের প্রয়োজন আছে। কিছু অর্জিত হয়ে গেলে সে অর্জনকে সংহত ও ফলপ্রসূ করতে হলে পরিমিত আবেগ আর কৌশলের বিকল্প নেই। ক্রিকেট যখন আমাদের প্রেরণা ও শক্তির উৎস মনে করছি তখন এর পেছনে সাহসের পাশাপাশি যুক্তি আর কৌশলের এস্তেমালও জরুরী। মন, আত্মা আর চিন্তা বাদে সে অবলোকনে যাই থাক সুদূরপ্রসারী কোন ভাবনা বা সামনে যাবার আগ্রহ থাকে না। মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি যে সম্ভাবনা ও আশাবাদের উৎস হয়ে এসেছিল বাজে আম্পায়ারিং আর ভুল সিদ্বান্ত তাকে এমন এক খাতে প্রবাহিত করেছে, যাতে শঙ্কিত হওয়ার বিকল্প দেখছি না। সোশ্যাল মিডিয়া যেহেতু আন এডিটেড এবং বাস্তবে জবাবদিহিতাহীন এর ভেতর দিয়ে উস্কে দেয়ার কাজও সারা হয়ে যায়। আগে খেলার কথায় আসি। ভারত এখন তাবত দুনিয়ার ক্রিকেটের পাওয়ার হাউস। ফলে আলিম দার বা গোল্ড তারা যে দেশের, যে জাতির হোক না কেন, ভারতকে চটাতে পারবে না। তার হাতে ক্রিকেটের যাবতীয় অর্থ ও সমর্থনের যোগান আছে বলেই জুয়া বেটিং বা ম্যাচ ফিক্সিং থাকার পরও কেউ কাউকে কিছু বলতে পারে না। ভারতের ক্রিকেটে জুয়ার আগমন নিয়ে সবার আগে কথা বলেছিলেন ঋষি অরবিন্দ। তিনি এ নিয়ে সাবধান বাণীও করে গিয়েছিলেন। আজ এটা এমন এক পর্যায়ে চলে এসেছেÑ গোটা কয়েক জাতির এ খেলা হলেও ক্রিকেট হিরোরাই ভারতের সবকিছু। আমি যদি একটা শিশুকেও প্রশ্ন করি যে, অলিম্পিক খেলা বড় না ক্রিকেট খেলা? সেও উত্তর দিতে এক মিনিট বিলম্ব করবে না। অথচ দুনিয়ার সেরা ক্রীড়ানুষ্ঠান অলিম্পিকে সোনার মেডেল জেতা ভারতীয় খেলোয়াড়রা দেশে ফিরে এয়ারপোর্টের সামনে দাঁড়িয়ে থাকে, তাদের কেউ নিতে আসে না। আর কোহলি জাদেজা ধোনি বা কাল সকালের উদিত বোলার যাদবের জন্যও মানুষ পাগল হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। মিডিয়া ও প্রচারের পাশাপাশি টাকা-পয়সা আর জুয়ার কারণে ক্রিকেট ভারতে এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে তাতে সততা বলে অবশিষ্ট কিছুই নেই। কোয়ার্টার ফাইনালে ইন্ডিয়ান এক ভদ্রমহিলাকে ফলো করা টিভি ক্যামেরার ভাষা দেখে আমার মতো অনেকেরই আত্মারাম খাঁচা ছাড়া হওয়ার যোগাড়। ভদ্রমহিলা ইংরেজীতে লিখে এনেছিলেনÑ কোহলি আমি আমার স্বামীকে বাড়িতে ফেলে মাঠে এসেছি তোমাকে খেলতে দেখব বলে...! যে কথা বলছিলাম, কোয়ার্টার ফাইনালে আমাদের দলের প্রতি, আমাদের জাতির প্রতি যে অন্যায় আচরণ করা হয়েছে তার সমুচিত জবাব কি কথার তোড়ে ভেসে যাবে? এই সেদিনও ভারত কোন শক্তি ছিল না। ভারতের ক্রিকেটও তেমন কোন উচ্চ আসনে ছিল না। বরং সে সময় পাকিদের জয়জয়কার ছিল দেখার মতো। হানিফ মোহাম্মদ আসিফ ইকবাল জহির আব্বাসদের কালে পাক ক্রিকেটের যে জৌলুস ও রমরমা আজ তা অস্তমিত। অস্তমিত সোর্বাস কালীচরণ আর ক্লাইভ ভিভ রিচার্ডস বা লারারা দেশের গৌরব। আজ সে জায়গাটা ভারতের দখলে। আমাদের ধারণা, চেতনা আর অতীতের কথা বললেই সবাই আমদের কোলে তুলে নেবে। সে দিন এখন শেষ। ভারতীয় ক্রিকেটের যে শক্তি তা যদি কোথাও কাজ না করে তবে তারা এ জাতীয় কৌশলের আশ্রয় নিতেই পারে। আশ্রয়ও নিতে হয় না এখন আর। আনুষঙ্গিক বিষয়গুলোও কাজ করে দেয়। যেমন ধরুন অস্ট্রেলিয়ায় ক্রিকেট নাম্বার ওয়ান গেম না। এর ওপরে আছে রাগবি ফুটবল (যেটা অবশ্য সকার নয়) বা টেনিস, সে জায়গায় ক্রিকেটে দর্শক টানার ব্যাপারে তারা কি দেখছে? ভারতের খেলা মানেই হাজার হাজার দর্শক। মাঠভর্তি। মাঠভরা মানেই খাবারের দোকান বিয়ার চা কফির রমরমা ব্যবসা। সঙ্গে বাসে ট্রেনে বাড়তি উপর্জনের সরকারী সুযোগ। বলা হচ্ছে, তা না হলে সাউথ আফ্রিকা পাকিদেরও শ্রীলঙ্কার মতো উড়িয়ে দিতে পারত। বাংলাদেশের সৌভাগ্য আমাদেরও একটা ভাল দর্শক বেজ আছে। আস্তে আস্তে সেটা এখন সবার চোখেও পড়ছে। সিডনি মেলবোর্নে বা যে কোন শহরে বাংলাদেশের খেলা মানে কয়েক হাজার সরব দর্শকের সপ্রাণ উপস্থিতি। বলা বাহুল্য, এটা আগামীবার আরও বেশি কাজে আসবে। কারণ ইংল্যান্ডে আমাদের লোকবল আর অবস্থান বেশ পুরনো। বাঙালী সেখানে আর্থিকভাবেও সচ্ছল। ফলে আগামীবার আমাদের উচিত হবে সে জায়গাটা কাজে লাগানো। কেন আমরা ভবিষ্যত ভাবি না? কেন একটি খেলা শেষ হলেই এই জাতীয় ভাগাভাগি আর আত্মপীড়ন? আমি তো দেখেছি খেলার নামে কী বিপুল ঐক্য আর ভালবাসা গড়ে ওঠে। সেখানে আওয়ামী লীগ বা বিএনপি বলে কিছু থাকে না। সবাই বাংলাদেশী, সবার হাতে জাতীয় পতাকা, কণ্ঠে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালবাসি। খেলায় ভুলচুক বা আম্পায়ারের ভুল সিদ্ধান্ত অতীতে হয়েছে বা ভবিষ্যতেও হবে। আইসিসি সভাপতি লোটাস কামাল ঠিক কথাই বলেছেন। কথা ও কাজে সমন্বয় ঘটাতে পারলে দুনিয়ার সব ক্রিকেট জাতিতে তাঁর কথার প্রতিফলন দেখা যাবে। খোলা মিডিয়া নামে পরিচিত সামাজিক নেটওয়ার্কে সাবধানতার বিকল্প নাই। আমাদের ন্যায্য বেদনা আর রাগ যেন অন্য খাতে প্রবাহিত হতে না পারে। আর একটা জরুরী বিষয়, খেলবে খেলোয়াড় তৈরি করাবে কোচ মাঠে থাকবে আম্পায়ার বা অন্যরা। এগুলো ভুলে মিডিয়ার নামে আমাদের সামাজিক নেটওয়ার্কের মানুষরা ভাবছে তারাই নিয়ন্ত্রক। যার জন্য শুভ বাতাবরণ আজ বিনষ্টের মুখে। আমরা যেন আমাদের পায়ে দাঁড়াতে শিখি। ক্রিকেট হোক তার ভিত্তি। রাগ, ক্রোধ বা অধৈর্যের পরিবর্তে হয়ে উঠুক আনন্দ আর শক্তির উৎস।
×