ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে

প্রকাশিত: ০৩:৫৯, ২৩ মার্চ ২০১৫

মানুষের পিঠ দেয়ালে ঠেকে যাচ্ছে

২ মাসের অধিক হয়ে গেল বিএনপি-জামায়াত জোটের অবরোধ-হরতাল চলছে। এই অবরোধের মধ্যে সবচেয়ে দুঃখজনক হল বার্ন ইউনিটে মানুষ কাতরাচ্ছে, মারা যাচ্ছে। যে জীবনগুলো চলে গেল সেগুলো আর কোনদিন ফিরবে না। এই ঘটনাবহুল দেড় মাসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিদেশে সফর করেছেন। তিনি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। জাতিসংঘের মহাসচিবের সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের সদস্যরা বাংলাদেশ ঘুরে গেছেন। হরতাল-অবরোধে দেশের অর্থনীতি ক্রুশবিদ্ধ হচ্ছে। দেয়ালে মানুষের পিঠ ঠেকে যাচ্ছে। সাধারণ মানুষ অবরোধ হরতাল কিছুই মানতে চাচ্ছে না। তারা বেরিয়ে আসতে চাচ্ছে। অর্থনীতির চাকা যেন সচল থাকেÑ এক দাবি কৃষক, শ্রমিক, রিকশাওয়ালা, ফুটপাতের হকার থেকে পেশাজীবী, আমলা ব্যবসায়ী ও শিল্প উদ্যোক্তা সবার। অথচ যারা হরতাল অবরোধ দিচ্ছেন তারা কেবল বার বার মানুষকে পেছন থেকে টেনে ধরতে যাচ্ছেন। বলগাহীন গতিতে অর্থনীতি ধ্বংস করার চেষ্টা করছেন। দেশে পাঁচ কোটি ছাত্র-ছাত্রী ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। যার মধ্যে ১৫ লাখ এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষার্থী রয়েছেন। ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে যে ক্ষতি হয়েছে এবং হচ্ছে তা কাটিয়ে উঠতে হলে অবিলম্বে সব ধরনের সহিংসতা পরিহার করা উচিত। সহিংসতা, সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ কখনও ক্ষমতায় যাওয়ার সোপান হতে পারে না। ক্ষমতায় যেতে হলে একমাত্র সাধারণ মানুষের কাছে যেতে হয়। আজকে চরম দুর্দিনে সাধারণ মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে তাদের সুখ, দুঃখকে একাকার করে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে, সামাজিকভাবে যে অগ্রযাত্রা ছিল তা অব্যাহত থাকুক। দেশে নারীর যে ক্ষমতায়ন হয়েছে তা ভারত, পাকিস্তানসহ পার্শ¦বর্তী অনেক দেশের চেয়ে বেশি। আমাদের দেশ সন্ত্রাসমুক্ত, জঙ্গীবাদমুক্ত হোক, বীর বাঙালী কখনও ঔদ্ধত্য পছন্দ করে না। ইতিহাস সাক্ষী দেয় বাঙালি সব সময় দূরদৃষ্টি সম্পন্ন এবং সমঝোতাপূর্ণ আচরণ পছন্দ করে। সাধারণ মানুষকে বিপদে ফেলে কখনও রাজনীতি মানবকল্যাণকে অগ্রযাত্রার সম্মুখীন করতে পারে না। আর এই কারণেই অতীতের চেয়ে অবিলম্বে হরতাল, সহিংসতা প্রত্যাহার করে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচী দেয়া উচিত। পাশাপাশি আশা করব শুভবুদ্ধির উদয় হবে। যে সকল অসত্য ও অপপ্রচার ছড়ানোর হচ্ছে সেগুলোর কালো মেঘ কেটে যাবে। বাংলাদেশকে সামনে এগিয়ে নিতে হলে সবার মধ্যে একটা ঐক্য সৃষ্টি হতে হবে এবং ঐক্যের ভিত্তি হচ্ছে বাংলাদেশ, বাঙালী ও ক্ষুদ্র নৃতাত্ত্বিক গোষ্ঠীর সম-অধিকার ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা। এদেশের উন্নয়নে গ্রামীণ অর্থনীতি একটি শক্তিশালী বুনিয়াদ হিসেবে কাজ করছিল। সেখানে কৃষিখাত থেকে শুরু করে প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র শিল্পসহ বিভিন্ন খাতে বিপর্যয় নেমে এসেছে এবং গরিবের গগনবিদারী আহাজারিতে আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠছে তার ফল কিন্তু তাদেরই বহন করতে হবে যারা এ ধরনের বর্বরতা সৃষ্টি করছে। ব্যাংকিং খাতের সামনে দাঁড়িয়ে আছে একটি বিরাট প্রতিবন্ধকতা। তারা যেখানে যেখানে অর্থায়ন করছে সেই অর্থগুলো উঠে আসার সম্ভাবনা খুব কম। ফলে ঋণ খেলাপি সংস্কৃতি আবার বেড়ে যাওয়ারসমূহ সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় কিন্তু একবারও এই ধরনের সহিংসতা ও সন্ত্রাসকে সমর্থন করেনি। আমি মনে করি মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী জন কেরি দ্ব্যর্থহীন ভাষায় যেভাবে বন্ধুপ্রতিম বাংলাদেশের সহিংসতা ও হিংস্রতার নিন্দা করেছেন তা অত্যন্ত সাধুবাদ যোগ্য। এর পরও যারা এই পথ থেকে সরে আসছেন না তাদের কি ভুল ভাঙবে? বর্তমানে একবিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয় যুগে আমাদের দাঁড়িয়ে যখন ইউনিয়ন থেকে শুরু করে রাজধানী পর্যন্ত সর্বত্র ডিজিটাল বাংলাদেশ হচ্ছে সেই সময় এই ধরনের বর্বরোচিত ও কাপুরুষোচিত আক্রমণ আমাদের পেছনের দিকে ঠেলে দেয়ার অপচেষ্টা। আমাদের দেশে দীর্ঘদিন ধরে রেলপথ উন্নয়ন হচ্ছিল না। কিন্তু গত ছয় বছর ধরে রেলপথের সংস্কার শুরু হয়েছে। এখন রেলপথের ওপর যেভাবে আক্রমণ করা হচ্ছে তা মনে হয় রেলপথ যাতে জনযোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সেই জন্যই এই ধরনের অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এমনকি নৌপথও আজকাল আক্রমণের বাইরে যেতে পারছে না। বার্ন ইউনিটে দাঁড়িয়ে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কান্না আমাদের আপ্লুত করে। একই সঙ্গে প্রশ্ন জাগায়, স্বাধীন বাংলাদেশে এই নারকীয় ঘটনার অবসান কিভাবে ঘটবে? কেননা যারা তালেবানী স্টাইলে বিভিন্ন দুষ্কর্ম করে বেড়াচ্ছে তাদের প্রতিহত করতে হলে কেবল আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর পরিশ্রমই শুরু যথেষ্ট নয়, পাশাপাশি আমি একজন সাধারণ নাগরিক হিসেবে আশা করব, আমাদের সম্মানিত সংসদ সদস্য মহোদয়রা যাতে তাদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় গিয়ে জনগণের সঙ্গে থেকে জনগণকে সাহস যোগান এবং যারা দুষ্কর্ম করছেন তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করেন। বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা কেউ ঠেকাতে পারবে না। যেন দুর্বিনীতদের কারণে বা হটকারী সিদ্ধান্তের কারণে সাধারণ মানুষের ক্ষতি না হয় সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ এগিয়ে যাবে। এ ধরনের দুষ্কর্ম দিয়ে বাংলাদেশ দাবিয়ে রাখা যাবে না এটা যেমন ঠিক যারা এই ধরনের বর্বরোচিত ঘটনা ঘটাচ্ছে এবং যাদের পরিবারে অন্ধকার নেমে আসছে তাদের অপূরণীয় ক্ষতি কীভাবে রাষ্ট্রযন্ত্র দেবে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যথেষ্ট পরিশ্রম করছেন এটা যেমন ঠিক কিন্তু তার পাশেও দরকার জাতীয় সংসদ সদস্যদের নিজস্ব নির্বাচনী এলাকায় অবস্থান করে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে ঐক্যবদ্ধভাবে সমাধানের পথ খুঁজে বের করা এবং যারা এ ধরনের অপকর্ম ঘটাচ্ছে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করা। লেখক : ম্যাক্রো ও ফিন্যান্সিয়াল ইকোনমিস্ট ঢ়রঢ়ঁষনফ@মসধরষ.পড়স
×