ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৯ মার্চ ২০২৪, ৫ চৈত্র ১৪৩০

ছাত্রছাত্রীরা ভুগছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায়

বান্দরবানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাকের আগ্রাসন

প্রকাশিত: ০৩:৩৩, ২৩ মার্চ ২০১৫

বান্দরবানে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তামাকের আগ্রাসন

নিজস্ব সংবাদদাতা, বান্দরবান, ২২ মার্চ ১৫ ॥ বান্দরবান পার্বত্য জেলায় ব্যাপক হারে বেড়েছে ক্ষতিকর তামাক চাষ। তামাকের আগ্রাসন থেকে বাড়ির আঙিনা, মাঠ-ঘাট, ফসলি জমি, নদীর চর, সরকারী প্রতিষ্ঠানের জমি, স্কুলের মাঠ, আশপাশের জমি কিংবা সংরক্ষিত বনাঞ্চল কোন কিছুই বাদ যাচ্ছে না। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন দেশী কোম্পানির পৃষ্ঠপোষকতায় উত্তরাঞ্চলের পর পাহাড়ে শুরু হয়েছে মাত্রাতিরিক্ত তামাকের চাষ। এতে হুমকির মুখে জনস্বাস্থ্য, সবুজ পাহাড়ের পরিবেশ, মাটি-নদী-খালে প্রভাব পড়ছে। নদীর পাড়ে তামাক চাষ করার ফলে একই সঙ্গে নদীর নাব্যতা সঙ্কট, নদীতে মাছ সঙ্কটসহ বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে জীববৈচিত্র্যে। বান্দরবান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেব মতে, ২০১৩-১৪ অর্থবছরে জেলায় ২ হাজার ৮শ’ ১৪ হেক্টর তামাক চাষ করা হলেও ২০১৪-১৫ অর্থবছরে তামাক চাষ করা হয় ২ হাজার ৭শ’ ৩৫ হেক্টর ভূমিতে। কিন্তু প্রকৃতপক্ষে তামাক চাষ আরও বেড়েছে বলে মনে করছে স্থানীয়রা। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, লামার উপজেলার উপজেলা পরিষদ, লামা থানা, আনসার ভিডিপি কার্যালয় থেকে ভূমি লিজ গ্রহণ করে তামাক চাষ করছে চাষীরা। লামার শিলের তোয়া মারমা পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, নুনার বিল সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, সাবেক বিলছড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, লাইনঝিড়ি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছাগল খাইয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাইল্যা চর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, ম্যাওলা চার সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে তামাক চাষ হচ্ছে। অন্যদিকে আলিকদম উপজেলার নয়াপাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাংতাই হেডম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, মাং চিং হেডম্যান পাড়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, চক্ষ্যং ইউনিয়ন পরিষদের পাশে গড়ে উঠেছে তামাকের বাগান। এর বাইরেও অনেক সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে ঘিরে আছে একরের পর একর তামাকের বিশাল বাগান। নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার বাইশারী ইউনিয়নের মিরঝিরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের জমি বর্গা দিয়ে তামাক চাষ করছেন বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি মোঃ আনিসুর রহমান। তিনি জানান, তামাক চাষে স্কুল শিক্ষার্থীদের অসুবিধা হচ্ছে না, আগামীতে স্কুলের জমি বর্গা না দিয়ে আমি নিজেই তামাক চাষ করব। মিরঝিরি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিশু শিক্ষার্থীদের তামাকের বিষের গন্ধে ক্লাস করতে সমস্যা হয়। বিদ্যালয়টির কয়েকজন শিশু শিক্ষার্থী জানান, ক্লাসে বসলেই অনেকেরই মাথা ঝিম ঝিম করে, আবার অনেকেই করছে বমি। বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর ছাত্রী মুর্শেদা আক্তার ও রেশমা আক্তার বলেন, বিষাক্ত তামাকের গন্ধে বিদ্যালয়ে বসে পড়ালেখা করা খুব কষ্ট হচ্ছে, অনেক সময় মাথাব্যথা ও বমি হয়। শুধু এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রী নয়, বিদ্যালয়ের পাশে তামাক চাষের কারণে সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্রছাত্রীরা ভুগছে বিভিন্ন শারীরিক সমস্যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন পরিবেশবিদ জানান, একই জমিতে পর পর তামাক চাষের ফলে মাটির প্রাণশক্তি ফুরিয়ে গিয়ে সে জমিতে অন্য ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের হিসেবমতে, প্রতি বছর তামাক পোড়াতে ব্যবহার করা হচ্ছে ৯০ হাজার টন জ্বালানি কাঠ। বান্দরবান কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক আলতাফ হোসেন বলেন, লাভজনক হওয়ায় ও প্রণোদনা দেয়ার কারণে চাষীরা তামাক চাষে ঝুঁকেছে। তামাক চাষের কারণে শিশু শিক্ষার্থী ছাড়াও তামাকচাষী এবং তামাক বাগানের আশপাশে বসবাসকারীরা হাঁপানি, কাশি, ক্যান্সারসহ নানা জটিল রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। এছাড়া তামাক চাষে অতিমাত্রায় ইউরিয়া ও বিষাক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে দিন দিন কমছে মাটির উর্বরতা। বান্দরবানের সিভিল সার্জন অনুপ দেওয়ান বলেন, তামাকে শ্বাসকষ্ট, ফুসফুসের ক্যান্সার হয়ে থাকে, তামাক প্রক্রিয়াজাতকরণের কারণে মারত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে থাকে মানুষ।
×