ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

গাপটিলের বিশ্বরেকর্ড

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২২ মার্চ ২০১৫

গাপটিলের বিশ্বরেকর্ড

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ ‘রেকর্ডের সৃষ্টিই হয় ভাঙ্গার জন্য’- পুরনো অপ্তবাক্য। তবু মাঝে মধ্যে ক্রিকেট এমন সব রেকর্ডের জন্ম দেয়, যা দেখে বিস্ময়ে ঘোর লেগে যায়। চার্লস কভেন্ট্রি যখন সাইদ আনোয়ারকে ছুঁয়ে রেকর্ড ১৯৪ রানের ইনিংস খেলেছিলেন, অনেকেরই তা মেনে নিতে কষ্ট হচ্ছিল, তার আগে যে কভেন্ট্রির নামই শোনেননি তারা! সে তুলনায় গাপটিল প্রতিষ্ঠিত, তাই বলে ক্রিকেটীয়-কাণ্ডে সতীর্থদের ছাড়িয়ে যাওয়ার মতো? যেখানে ব্রেন্ডন ম্যাককুলাম-কোরি এ্যান্ডারসনরা আছেন। কেবল সতীর্থদেরই নয়, ব্যাট হাতে কাল ইতিহাসটাকেই ওলট-পালট করে দিলেন ২৮ বছরের অকল্যান্ড প্রতিভা। কোয়ার্টার ফাইনালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে খেললেন ২৩৭ রানের অপরাজেয় ইনিংস, গড়লেন বিশ্বকাপে ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের নতুন রেকর্ড! অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড বিশ্বকাপে যেন চলছে রেকর্ডের খেলা। চার-ছক্কার ফুলঝুরি ছুটিয়ে আজই একজন গড়ছেন অনন্য কীর্তি, কালই তাকে ছাড়িয়ে যাচ্ছেন অন্য কেউ। গাপটিলের অবিশ্বাস্য ব্যাটিং-কা-ের মধ্য দিয়ে শেষ আটেও অব্যাহত থাকল সেটি। গ্রুপ পর্বে জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ২১৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ক্যারিবিয়ান ‘ড্যাশিং হিরো’ ক্রিস গেইল। সেটি ছিল বিশ্বকাপ ইতিহাসের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি ও ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস। ওয়েলিংটনে কাল গেইলকে ছাড়িয়ে গেলেন গাপটিল। গড়লেন বিশ্বকাপের সর্বোচ্চ রানের নতুন রেকর্ড। ১৬৩ বলে ২৪ চার ও ১১ ছক্কায় ২৩৭ রানে অপরাজিত থাকেন কিউই ওপেনার। বিশ্বকাপের দ্বিতীয় ও ওয়ানডে ইতিহাসের ষষ্ঠ ডাবল সেঞ্চুরি এটি। যার ওপর ভর করে ৩৯৩ রানের পাহাড় গড়ে তার দল। এরপর উইন্ডিজকে ২৫০-এ গুড়িয়ে দিয়ে ১৪৩ রানের বিশাল জয়ে সেমিফাইনালে নিউজিল্যান্ড। গাপটিল ক্রিকেট বিশ্বে খুব বড় কোন তারকা কখনই ছিলেন না। বিশেষ করে এবি ডি ভিলিয়ার্স-ক্রিস গেইলদের মতো ‘খুনে’ হিসেবে তো নয়ই। অথচ গেইল-ভিলিয়ার্সদের মতো এক অসাধারণ ইনিংস খেলে ক্রিকেট বিশ্বে তাক লাগিয়ে দিলেন। অনেক বিচারে ‘খুনে’ সেই সব তারকাদেরও ছাড়িয়ে গেলেন। ইতিহাসে ছয় ডাবল সেঞ্চুরিরর দুটিই রোহিত শর্মার, সেটি তার জন্মস্থান ভারতের মাটিতে। ২০১০ সালে গোয়ালিয়রে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথম দুই শ’ (২০০*) রানের ইনিংস খেলেছিলেন কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকর। এরপর সাড়ে চার বছরে আরও পাঁচ ডাবল সেঞ্চুরি দেখে বিশ্ব, যেখানে তিনজনই ভারতীয়। ভারতীয়দের বাইরে কারও ডাবল সেঞ্চুরি গেইলেরই। আবার আগের দশ বিশ্বকাপে যেখানে এটি ছিল না, সেখানে এবার গেইল ও গাপটিলের সৌজন্যে দু-দুটি ডাবল সেঞ্চুরি দেখা হয়ে গেল ক্রিকেটপ্রেমীদের! ১১ ছক্কার বিপরীতে ২৪ চারই প্রমাণ করে গাপটিলের ইনিংসটি গেইল-রোহিতদের মতো ‘খুনে’ ছিল না। একেবারে ‘ব্যকরণসিদ্ধ’ খাঁটি ব্যাটিং বলতে যা বোঝায় তারই এক অনুপ প্রদর্শনী নিয়ে হাজির হন ডানহাতি ‘ক্লেসিক্যাল’ উইলোবাজ। ইনিংসের ৪৮তম ওভারে আন্দ্রে রাসেলের করা প্রথম বলেই চার হাঁকিয়ে ১৯৯ থেকে ডাবল সেঞ্চুরিতে পৌঁছান গাপটিল। শুরুতে বোঝা যায়নি শেষ অবধি এভাবে রেকর্ড ভাঙ্গার খেলায় মেতে ওঠবেন তিনি। প্রথম হাফসেঞ্চুরি পূরণে বল খেলেন ৬৪ (৭ চার)। এরপর রানের গতি বড়ানোর দিকে মনোযোগ দেন। ১২ চারের সাহায্যে সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন ১১১ বলে। ১৮ চার ও ৩ ছক্কায় ১৩৪ বলে দেড় শ’। ১৫২ বলে ২১ চার ও ৮ ছক্কায় ইতিহাস গড়া ডাবল সেঞ্চুরিতে (২০০*) পা রাখেন গাপটিল। ১৫০ থেকে ২০০- শেষ হাফসেঞ্চুরি আসে মাত্র ১৮ বলে। শুরু ও শেষের এই পার্থক্য থেকেই বোঝা যায় ‘ব্ল্যাক ক্যাপস’ ওপেনারের বিরল ইনিংসটি কতটা ‘ধৈর্য আর স্ট্যামিনার’ ফসল। এক বাক্যে ক্যারিবীয় বোলারদের সঙ্গে ‘মাইন্ড গেম’ই খেলেছেন গাপটিল! বিশ্বকাপ তো বটেই, কোন নিউজিল্যান্ড ব্যাটসম্যানের প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি এটিই। বিশ্বকাপে দেশটির হয়ে আগের ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ রানের ইনিংস ছিল গ্লেন টার্নারের অপরাজিত ১৭১- ১৯৭৫ সালে পূর্ব আফ্রিকার বিপক্ষে। ২০০৯-এ অভিষেক হওয়া গাপটিলের ১০৬তম ওয়ানডেতে সপ্তম সেঞ্চুরি এটি। আগের সর্বোচ্চ ছিল অপরাজিত ১৮৯- ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালে। চলতি বিশ্বকাপে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। বাংলাদেশের বিপক্ষে ১০৫ রানের ইনিংস খেলেছিলেন। দুই সেঞ্চুরি ও এক হাফসেঞ্চুরির সমন্বয়ে কুমার সাঙ্গাকারার (৫৪১) পর দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসা গাপটিলের মোট রান এখন ৪৯৮। ক্লেসিক্যাল ইনিংসের মতো নিজেও কতটা শান্ত সেটি ফুটে উঠেছে তার কথায়। ব্যাট হাতে ধীরে এগোনোর ব্যাখ্যায় দিয়ে বলেন, ‘বড় ম্যাচে চাপ থাকবেই, আপনাকে এটা পেছনে ফেলতে হবে এবং যথাসম্ভব ভাল বলে শট খেলতে হবে। আমি জানতাম উইকেটে থিতু হতে পারলে রান আসবে। সত্যি বলছি এটা খুব শান্ত একটা অনুভূতি!’
×