ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

স্বাস্থ্যমন্ত্রীর উদ্বোধন

টিকাদান কর্মসূচীতে যুক্ত হলো নিউমোনিয়া ও পোলিও ভ্যাকসিন

প্রকাশিত: ০৫:২৯, ২২ মার্চ ২০১৫

টিকাদান কর্মসূচীতে যুক্ত হলো নিউমোনিয়া ও পোলিও ভ্যাকসিন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ সম্প্রসারিত টিকাদান কর্মসূচীতে পিসিভি ও আইপিভি টিকা সংযোজন করেছে সরকার। শনিবার এ দু’টি টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। এ সময় তাঁর উপস্থিতিতে কয়েকজন শিশুকে পিসিভি ও আইপিভি টিকা দেয়া হয়। শিশুদের নিউমোকক্কালজনিত নিউমোনিয়া রোগ প্রতিরোধ এবং দেশে পোলিওমুক্ত অবস্থা বজায় রাখতে এ কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। শনিবার থেকে এ দুটি টিকা সারাদেশে নির্দিষ্ট বয়সী শিশুদের দেয়া শুরু হয়ে গেছে। শনিবার ঢাকা শিশু হাসপাতাল মিলনায়তনে এই দুটি টিকাদান কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। স্বাস্থ্য অধিদফতরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. দীন মোঃ নূরুল হকের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম। বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম, পরিবার পরিকল্পনা অধিদফতরের মহাপরিচালক মোঃ নূর হোসেন তালুকদার, ঢাকা শিশু হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. মনজুর হোসেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রতিনিধি ডা. এন পারানিথারান, ইউনিসেফের প্রতিনিধি মিঃ এ্যাডওয়ার্ড বিগবিদার প্রমুখ। উদ্বোধন করা দু’টি টিকার গুরুত্ব তুলে ধরে স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম বলেন, বাংলাদেশে মা ও শিশু মৃত্যুর হার অনেক কমেছে। স্বাস্থ্য সেক্টরের ব্যাপক উন্নয়নের বিষয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রশংসিত হয়েছে। উন্নয়নের এ ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে নানা কার্যক্রম বাস্তবায়িত হচ্ছে। নেয়া হচ্ছে নতুন নতুন উদ্যোগ। বাংলাদেশে ৫ বছরের কম বয়সী শিশুমৃত্যুর প্রধান কারণ নিউমোনিয়া। প্রতি বছর মোট শিশুমৃত্যুর শতকরা ২২ ভাগ এ রোগে মৃত্যুবরণ করে। নিউমোনিয়ার বিভিন্ন কারণগুলোর মধ্যে নিউমোকক্কালজনিত নিউমোনিয়া অন্যতম। পিসিভি টিকা দেয়ার ফলে এ রোগ থেকে শিশুদের রক্ষা করা যাবে। একই সঙ্গে শিশুমৃত্যুও অনেক কমে যাবে। স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমানে দেশ পোলিওমুক্ত হলেও আমাদের পোলিওমুক্ত অবস্থা বজায় রাখতে হবে। সরকারের নেয়া এ পদক্ষেপে সকলের সহযোগিতা এবং এ কার্যক্রমের সফলতা কামনা করছি। নির্দিষ্ট বয়সী সকল শিশুই যেন এই টিকা নিতে পারে, সেজন্য ব্যাপক প্রচারের মাধ্যমে সকলকে সচেতন করার আহ্বান জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। দেশের সকল রাজনৈতিক দলকে আসন্ন সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, দেশের রাজনৈতিক অবস্থা ভাল হলে উন্নয়ন কর্মকা- আরও ত্বরান্বিত হবে। দেশে রাজনীতি ও গণতন্ত্রের সুবাতাস বইছে। নির্বাচনী আমেজ অনুভূত হচ্ছে। প্রতিটি রাজনৈতিক দলের এই সুযোগ গ্রহণ করা উচিত। নির্বাচনে অংশ নিয়ে জনগণের সঙ্গে সংলাপ করুন। জনগণকে স্বাধীন মতামত প্রদানের সুযোগ দিন। নির্বাচনে অংশগ্রহণ এবং জনগণকে অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়াটাই গণতন্ত্রে বিশ্বাসীদের দায়িত্ব ও কর্তব্য বলে জানান স্বাস্থ্যমন্ত্রী। এদিকে, আয়োজকরা জানান, এক বছরের কম বয়সী শিশুদের নিউমোকক্কাল নিউমোনিয়ার জন্য ‘নিউমোকক্কাল কনজুগেট ভ্যাকসিন (পিসিভি)’ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। পিসিভি টিকা ছাড়াও দেশে পোলিওমুক্ত অবস্থা বজায় রাখতে সরকার বর্তমান ইপিআই কর্মসূচীর মাধ্যমে প্রদত্ত ওপিডি টিকার পাশাপাশি শিশুদের ইকে ডোজ ‘ইনএ্যাকটিভেটেড পোলিও ভ্যাকসিন (আইপিডি) দেয়া হবে। পিসিভি টিকা শিশুর ছয় সপ্তাহ বয়স থেকে দেয়া হবে। এরপর এই টিকার প্রথম ডোজ প্রাপ্ত শিশুদের ১০ সপ্তাহ ও ১৮ সপ্তাহ বয়সে দেয়া হবে। অর্থাৎ পিসিভি টিকা এক বছরের কম বয়সী শিশুরা ইপিআই-এর নির্দিষ্ট সময়সূচী অনুযায়ী মোট ৩ বার পাবে। বর্তমানে ইপিআই কর্মসূচীতে শিশুর ৬ সপ্তাহ, ১০ সপ্তাহ, ১৪ সপ্তাহ ও ৯ মাস বয়সে মোট ৪ বার ওপিডি টিকা দেয়া হচ্ছে। ওপিডি টিকা আগের মতোই শিশুর ৬, ১০ ও ১৪ সপ্তাহ বয়সে দেয়া হবে। তবে ১৪ সপ্তাহ বয়সে ওপিডি টিকার সঙ্গে এক ডোজ আইপিডি টিকা দেয়া হবে। আইপিডি টিকা দেয়ার ফলে ৯ মাস বয়সে ওপিডি টিকার ৪র্থ ডোজটি শিশুদের আর নেয়ার প্রয়োজন হবে না। আইপিডি টিকা শিশুকে ইনজেকশনের মাধ্যমে দেয়া হবে। আয়োজকরা আরও জানায়, বাংলাদেশ দীর্ঘ ৭ বছরের অধিক সময় পোলিওমুক্ত থাকার পর ২০১৪ সালের ২৭ মার্চ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলের ১১টি দেশের সঙ্গে একত্রে পোলিওমুক্ত সনদপত্র লাভ করে। ওপিডি টিকা ব্যবহারে সারাবিশ্বে পোলিও আক্রান্তের সংখ্যা ১৯৮৮ সালের তুলনায় ৯৯ ভাগেরও বেশি কমে গেছে। তবে বিশ্বের কয়েকটি দেশে এখনও পোলিও রোগ বিদ্যমান থাকায় কিছুসংখ্যক দেশ দীর্ঘদিন পোলিওমুক্ত থাকার পরও ওই সকল দেশে পোলিও রোগের পুনর্সংক্রমণ ঘটেছে। আইপিডি টিকা দেয়ার ফলে এই পুনর্সংক্রমণের ঝুঁকি আর থাকবে না। সিটি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করুন Ñ স্বাস্থ্যমন্ত্রী ॥ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে অংশগ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য মোহাম্মদ নাসিম। তিনি বলেন, সিটি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা দেয়ায় দেশে নির্বাচনী হাওয়া বইতে শুরু করেছে। গণতন্ত্রের প্রধান উপাদান নির্বাচন। সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা দেশে বজায় রাখতে বিএনপিসহ সকল রাজনৈতিক দলকে সিটি নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করার আহ্বান জানাচ্ছি। শনিবার জাতীয় জাদুঘরের বেগম সুফিয়া কামাল মিলনায়তনে স্বাধীনতা ফিজিও চিকিৎসক পরিষদ আয়োজিত জাতীয় ফিজিওথেরাপি সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান। সংগঠনের সভাপতি ডাঃ হারুন-অর-রশিদের সভাপতিত্বে আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডা. বদিউজ্জমান ভূঁইয়া ডাবলু, বাংলাদেশ হোমিওপ্যাথি বোর্ডের চেয়ারম্যান ও মহানগর আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য বিষয়ক সম্পাদক ডাঃ দিলীপ রায় প্রমুখ বক্তব্য রাখেন।
×