ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

আবদুল মান্নান

বিএনপি’র গন্তব্য নিজেদেরই ঠিক করতে হবে

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২২ মার্চ ২০১৫

বিএনপি’র গন্তব্য নিজেদেরই ঠিক করতে হবে

বিএনপি চেয়ারপার্সন বেগম জিয়ার ডাকা অবরোধ, হরতাল ও আন্দোলনের নামে যে ভয়াবহ সহিংসতা চলছে তাতে জনজীবনে তেমন একটা প্রভাব না পড়লেও, সাধারণ মানুষ এক ধরনের আতঙ্ক আর অস্বস্তিতে আছে। এমনকি বিএনপি’র অনেক নীতিনির্ধারকও ব্যক্তিগত পর্যায়ে উষ্মা প্রকাশ করে বলেছেন, মা-ছেলে মিলে শহীদ জিয়ার দলটির যে তাঁরা বারোটা বাজাচ্ছেন তা যখন বুঝতে পারবেন, তখন অনেক দেরি হয়ে যাবে। তবে জামায়াত বেগম জিয়া আহূত এই সহিংস আন্দোলন নিয়ে বেশ খোশমেজাজেই আছে। কারণ তাদের ধারণা, দেশের মানুষকে জিম্মি করে তারা নিজ দলের একাত্তরের সাজাপ্রাপ্ত ঘাতকদের মুক্ত করে তাদের দলকে বাঁচাতে পারবে। বেগম জিয়া যখন ৬ জানুয়ারি থেকে দেশব্যাপী অবরোধ ডাকলেন, তখন অনেকেই মনে করেছিলেন হয়ত কয়েকদিনের মধ্যে তিনি তাঁর এই কর্মসূচী প্রত্যাহার করবেন। কিন্তু বেগম জিয়ার সেই কর্মসূচীর সঙ্গে পকেট গেটের মতো যোগ হলো হরতাল আর পেট্রোলবোমা মেরে মানুষ হত্যা। দেশের এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, সুশীল ব্যক্তি ও আন্তর্জাতিক মহল থেকে দাবি তোলা হলো, দু’দলের মধ্যে একমাত্র সংলাপ ও আলোচনাই দেশে শান্তি এনে দিতে পারে। কোন একটি সন্ত্রাসী ও জঙ্গীবাদী সংগঠনের সঙ্গে কখনও সংলাপ করে শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে, এমন নজির বিশ্বে কোথাও নেই। একবার যুক্তরাষ্ট্র আল কায়েদার সঙ্গে কাতারে এমন এক সংলাপ করার চেষ্টা করেছিল। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। পাকিস্তানের ইমরান খানও চেষ্টা করেছিলেন আল কায়েদার সঙ্গে সংলাপ করে খাইবার পাখতুন- খোওয়ায় শান্তি ফিরিয়ে আনতে। এতে তাদের সহিংসতার মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। তারা পেশোয়ারের স্কুলে ঢুকে ১৪৫ জন স্কুলছাত্রকে হত্যা করে এবং ঘোষণা দেয়, এমন হত্যাকা- আরও চলতে থাকবে। বিএনপির সঙ্গে সংলাপ হতে পারে, তবে তার আগে কিছু জাতীয় বিষয়ে সকল পক্ষকে একমত হতে হবে। তা না হলে সেই সংলাপে কোন লাভ হবে না। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে শক্তি প্রয়োগ করে মিত্রবাহিনী ইউরোপে নাৎসী মতবাদ ও ফ্যাসিজমের কবর রচনা করেছিল। একইভাবে জাপানের সম্প্রসারণ ও সাম্রাজ্যবাদের সমাপ্তি হয়েছিল। ভারত ভাগের পর ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে প্রধান যে অমীমাংসিত বিষয়টি নিয়ে অশান্তির সৃষ্টি হয়, তা হলো কাশ্মীর। দেশ ভাগের পরপরই ১৯৪৭-৪৮ সালে দু’দেশ প্রথমবারের মতো যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘের হস্তক্ষেপে সেবার যুদ্ধবিরতি হয়। ১৯৬৫ সালের সেপ্টেম্বর মাসে দু’দেশ পুনরায় একটি পূর্ণাঙ্গ যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। জাতিসংঘ ও যুক্তরাষ্ট্রের চাপে আর সোভিয়েত ইউনিয়নের সহায়তায় দু’দেশের সরকার প্রধানদের এক শান্তি সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয় তাসখন্দে। এই শান্তি সম্মেলনে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আইয়ুব খান ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী লাল বাহাদুর শাস্ত্রী অংশগ্রহণ করেন। দু’পক্ষের মাঝখানে মধ্যস্থতার ভূমিকা পালন করেন সোভিয়েত প্রধানমন্ত্রী এলেক্সি কোসিগিন। সম্মেলন শেষে উভয়পক্ষ একটি চুক্তিতে উপনীত হয়, যাতে বলা হয়, উভয় দেশ তাদের সেনাবাহিনীকে পূর্বাবস্থায় ফিরিয়ে নিয়ে যাবে। কিন্তু মূল কাশ্মীর সমস্যা নিয়ে কোন চূড়ান্ত সমাধানে পৌঁছানো যায়নি। এরপর আরও কয়েকবার বড় আকারের না হলেও নিয়মিতভাবে দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত যুদ্ধ চলেছে। সবচেয়ে বড়টি ছিল কারগিল যুদ্ধ। ফিলিস্তিন নিয়ে ইসরাইলের সঙ্গে নিরন্তর লড়াই করে যাচ্ছে ফিলিস্তিনীরা। পশ্চিমের বৃহৎ শক্তিসমূহ সব সময় ইসরাইলের জবরদখল ও সম্প্রসারণবাদকে সমর্থন করেছে। আরব বিশ্ব নির্লিপ্ত থেকেছে, পাছে তাদের পশ্চিমা প্রভুরা কিছু বলে। প্রেসিডেন্ট ক্লিন্টনের আমলে ২০০০ সালে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাম্প ডেভিডে ফিলিস্তিনী নেতা ইয়াসির আরাফাত ও ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী এহুদ বারাকের মধ্যে এক শান্তি আলোচনা শেষে একটি চুক্তিও হয়। তারপরও অন্যান্য স্থানে আরও একাধিকবার এমন বৈঠক হয়েছে। কিন্তু ফিলিস্তিনীদের আলাদা রাষ্ট্রের দাবি অধরাই থেকে যায়। যার ফলে ফিলিস্তিন বর্তমানে আগের যে কোন সময়ের চেয়ে অশান্ত। ভিয়েতনাম যুদ্ধ শেষ করার জন্য দীর্ঘদিন প্যারিসে শান্তি চুক্তি হয়েছে। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। শেষতক উত্তর ভিয়েতনাম ও ভিয়েতকংদের হাতে প্রচ- মার খেয়ে প্রকাশ্য দিবালোকে যুক্তরাষ্ট্রের পলায়নের মধ্য দিয়ে দীর্ঘদিনের এই রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের সমাপ্তি হয়। শ্রীলঙ্কায় তামিলদের সঙ্গে দীর্ঘদিনের চলমান গৃহযুদ্ধ বন্ধ করার জন্য নরওয়ের রাজধানী অসলো শহরে শান্তি বৈঠকের আয়োজন সত্ত্বে¡ও শেষ পর্যন্ত সেই বৈঠক হয়নি। শেষ পর্যন্ত শ্রীলঙ্কা সেনাবাহিনীর অভিযানের ফলে দেশটির জাফনা উপদ্বীপ মুক্ত করা হয়। সুতরাং মূল সমস্যা সমাধান আর মৌলিক কিছু বিষয়ে একমত না হলে বিএনপি’র সঙ্গে হাজার সংলাপ করেও কোন লাভ নেই। এই সংলাপে শুধু সাময়িক একটু শান্তি আনতে পারবে হয়ত, কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী কোন শান্তি আসবে না, বরং অশান্তির কিছু নতুন বীজ বপন করা হতে পারে। আমার কাছে বিএনপিকে তেমন একটা সমস্যা মনে হয় না। মূল সমস্যা হচ্ছে বিএনপি’র রক্তে এখন জামায়াত নামের দূষিত রক্তের সংমিশ্রণ। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে বিএনপি এখন আর তাদের রাজনীতি করে না। পরিণত হয়েছে জামায়াতের একটি আজ্ঞাবহ দলে। বেগম জিয়ার একটি বড় স্ট্যান্ডিং কমিটি আছে। তাদের অনেককে বলতে শোনেছি দলের যখন স্ট্যান্ডিং কমিটির সভা হয় সেখানে বেগম জিয়া যা বলেন দলের অন্যরা তা শুধু শুনেন এবং শেষ পর্যন্ত তাঁর ইচ্ছা অনুযায়ী সকল সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তবে সম্প্রতি বেগম জিয়াও কোন সিদ্ধান্ত নেন না। সকল সিদ্ধান্ত লন্ডনে বসে বেগম জিয়ার পুত্র তারেক রহমান নিয়ে থাকেন, যা তিনি তার মায়ের মাধ্যমে কার্যকর করেন। বেগম জিয়া এখন তারেক রহমানের হাতের পুতুলে পরিণত হয়েছেন। আর তারেক রহমান পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই’র পুতুল। লন্ডনে দীর্ঘ সাত বছর তারেক রহমানের বিলাসী জীবনের প্রয়োজনীয় অর্থের একটি বড় যোগানদাতা আইএসআই। তারা তার মাধ্যমে তাদের হারানো পূর্ব পাকিস্তান ফেরত পেতে চায়। এর জন্য তারা দেশের ভেতরে ও বাইরে এখন আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি সক্রিয় । ৬ জানুয়ারি থেকে বেগম জিয়া দেশ ও জনগণের বিরুদ্ধে যে যুদ্ধ ঘোষণা করেছেন, সে যুদ্ধে দলের স্ট্যান্ডিং কমিটির সদস্য থাক, কোন সিনিয়র নেতাকে, তো দেখা যায় না। ব্যতিক্রম সেলিমা রহমান আর নজরুল ইসলাম খান, যিনি ক’দিন আগে বেগম জিয়াকে সঙ্গ দিতে ভেতরে প্রবেশ করেছেন। সুতরাং কোন অর্থবহ আলোচনার সূত্রপাত করতে হলে প্রথমে তো বিএনপিকে জামায়াতের মতো এক ভয়ঙ্কর সন্ত্রাসী সংগঠনের সংশ্রব ত্যাগ করতে হবে। সেটি করতে পারলে তখন বিএনপি দল গঠনের দিকে নজর দিতে পারবে। এতদিন পরও বিএনপি একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে গড়ে উঠতে পারেনি। রয়ে গেছে একটি নানা মতের প্ল্যাটফরম হিসেবে। তাদের এখন একমাত্র ক্ষমতায় যাওয়া ছাড়া দলের আর কোন লক্ষ্য আছে বলে মনে হয় না। দলটির সৃষ্টি স্বার্থ উদ্ধারের জন্য, কোন আদর্শ বাস্তবায়নের জন্য নয়। বিএনপি’র সঙ্গে কোন অর্থবহ সংলাপ হতে হলে তাদের রাষ্ট্রের কিছু মৌলিক বৈশিষ্ট্য বা চিন্তাধারার সঙ্গে একমত হওয়া জরুরী। সংবিধানকে মেনে নিতে হবে। ধর্মনিরপেক্ষতা, বাঙালী জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র আর গণতন্ত্রকে স্বীকার করে নিতে হবে। এটি সত্য, বাহাত্তরের সমাজতন্ত্রের সঙ্গে ২০১৫ সালের সমাজতন্ত্র এক হবে না। এখন হবে সামাজিক ন্যায়বিচার, অর্থনৈতিক বৈষম্য দূরীকরণ, সম্পদের সুষম বণ্টন আর দারিদ্র্য বিমোচন। এইসব ক্ষেত্রে বাংলাদেশ অনেক দূর এগিয়ে গেছে। তাই যেতে হবে আরও অনেক দূর। শুরু থেকেই বিএনপি’র রাজনৈতিক পুঁজি দুটি। প্রথমটি ধর্ম আর দ্বিতীয়টি কারণে-অকারণে ভারত বিরোধিতা। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকেই এক শ্রেণীর রাজনীতিবিদ, যাঁদের অধিকাংশই স্বাধীনতাবিরোধী ছিলেন, তারা বলে বেড়াতে শুরু করলেন, বাংলাদেশ এখন হিন্দুদের দখলে চলে গেল। এখানে আর নামাজ-রোজা হবে না। জিয়া ক্ষমতা দখল করে সারা ঢাকা শহর পবিত্র কোরআনের বাণী সংবলিত বিলবোর্ড দিয়ে ঢেকে দিলেন। ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোরারজি দেশাই বাংলাদেশ সফরে আসবেন। জিয়ার হুকুমে রাতারাতি সেসব বিলবোর্ড গায়েব হয়ে গেল। জিয়া যে ধর্ম নিয়ে ভ-ামি করছেন, তা মানুষের বুঝতে বাকি রইল না। জিয়া এই ব্যাপারে কিছুটা রাখঢাক করলেও তাঁর স্ত্রী একদম খুল্লাম খুল্লা। নির্বাচন এলে বলেন, আওয়ামী লীগ জিতলে দেশের সব মসজিদে আজানের পরিবর্তে উলুধ্বনি শোনা যাবে। মসজিদে তালা পড়বে। আর নিজে নির্বাচনে বিজয়ী হলে হাজার হাজার ধর্মীয় সংখ্যালঘুকে দেশছাড়া করেন। পূর্ণিমারা হয় ধর্ষিত। তার দলের ডাঃ বদরুদ্দোজা চৌধুরী এক হাতে গীতা আর এক হাতে কোরান নিয়ে বলেন, এখন আপনাদের ঠিক করতে হবে কোরানের পক্ষে থাকবেন নাকি গীতার পক্ষে। জিয়ার হাতে বিএনপি’র সৃষ্টি। জিয়া একজন পেশাদার সৈনিক ছিলেন। তিনি স্বেচ্ছায় মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন, নাকি পরিস্থিতি তাঁকে মুক্তিযুদ্ধে ঠেলে দিয়েছিল, তা নিয়ে অনেকের মনে প্রশ্ন আছে। তবে যে ব্যক্তি ২৬ তারিখ রাত পর্যন্ত পাকিস্তানী সেনা অফিসারদের নির্দেশে চট্টগ্রাম বন্দরে অবস্থানরত সোয়াত জাহাজ হতে অস্ত্র খালাস করতে যাচ্ছিলেন, তখন স্বেচ্ছায় তাঁর মুক্তিযুদ্ধে যাওয়া নিয়ে প্রশ্ন জাগাটা অসম্ভব নয়। সত্য যা হোক তিনি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিলেন। তবে সেই নয় মাসে তিনি কি করেছিলেন, তা তাঁর সহকর্মীদের কাছ হতে নানা সময় শোনা গেছে। তিনি যখন বিএনপি গঠন করেন তখন তাঁকে সহায়তা করেছিল সেনা গোয়েন্দা সংস্থা। শুরুতে তাঁর সঙ্গে ছিলেন অনেক সামরিক ও বেসামরিক আমলা। আর নিয়েছিলেন অতি ডান ও অতি বামপন্থী রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের সহায়তা, যার মধ্যে ন্যাপ, জামায়াত ও মুসলিম লীগ অন্যতম। তিনি আমাদের মুক্তিযুদ্ধকে কখনও একটি জনযুদ্ধ বলে স্বীকার করেননি। বলেছেন, এটি ছিল একটি সামরিক অভিযান। স্বীকার করতে চাননি, এই যুদ্ধ পরিচালনা হয়েছিল একটি নির্বাচিত রাজনৈতিক সরকারের অধীনে। অথচ তিনি প্রজাতন্ত্রের একজন কর্মচারী হিসেবে মাসে চারশত টাকা বেতন নিতেন। এটি ছিল একটি প্রতীকী বেতন এবং তাঁর মতো অনেককে দেয়া হতো এটি বোঝানোর জন্য যে, তারা প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী। তাঁর দল বঙ্গবন্ধুকে কখনও জাতির পিতা বলে স্বীকার করতে চায়নি। তাঁর স্ত্রী তামাশা করার জন্য বঙ্গবন্ধু নিহত হওয়ার দিন ১৫ আগস্ট ভুয়া জন্মদিন পালন করেন। বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না বলে তিনি সংসদে ইনডেমনিটি আইন পাস করিয়ে তাদের বিদেশের দূতাবাসে চাকরির ব্যবস্থা করেছিলেন। তাঁর স্ত্রী বেগম জিয়া তাঁর স্বামীর সঙ্গে বঙ্গবন্ধুকে স্বাধীনতা পদক দিয়ে তাঁর সম্মানহানি করার চেষ্টা করেছেন। তিনি বঙ্গবন্ধুর তুলনায় এক খর্বাকৃতির বামনকে আকাশে তুলতে চেয়েছেন। যে কোন ধরনের সংলাপের পূর্বে এইসব শঠতার একটি চিরস্থায়ী সমাধান তো হতে হবে। স্বীকার করে নিতে হবে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে মুজিবনগর সরকারের অধীনে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে এবং তা ছিল একটি জনযুদ্ধ, কোন সামরিক অভিযান নয়। স্বীকার করে নিতে হবে অন্য কাউকে বঙ্গবন্ধুর সমতুল্য করা যাবে না। ভারতে সরকার আসে সরকার যায়, কিন্তু মহাত্মা গান্ধীর অবস্থান নিয়ে কেউ কোন প্রশ্ন করে না। পাকিস্তানে জিন্নাহ্র অবস্থান সব সময় একই স্থানে। Ÿাংলাদেশ একটি ধর্মনিরপেক্ষ রাষ্ট্র তা যদি স্বীকার করতে কুণ্ঠিত হয়, তা হলে দেশটারই অস্তিত্ব থাকে না। জামায়াত যে একটি যুদ্ধাপরাধীদের দল, তা স্বীকার করে নিলে বিএনপি’রই লাভ। পেট্রোলবোমা মারার জন্য বিএনপি’র ভেতরে অনেক বোমারুর জন্ম হয়েছে। জামায়াত-শিবিরের ওপর ভর করার প্রয়োজন নেই। সেনাবাহিনীর ক্ষমতা দখলকে সংবিধান অনুমোদন করে না। জিয়ার ক্ষমতা দখলকেও আদালত অবৈধ ঘোষণা করেছে। সেনাবাহিনী ক্ষমতা দখল করলে গণতন্ত্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়। এটি মানতে বিএনপি’র অসুবিধা কেন হবে? নতুন বিশ্ব পরিস্থিতিতে সমাজতন্ত্রের মূলমন্ত্রে বিএনপি’র অনেকেই হয়ত বিশ্বাস করেন। তাকে প্রাতিষ্ঠানিক স্বীকৃতি দেয়াটা জরুরী। দেশে থাকতে তারেক রহমান কথার দিক দিয়ে কিছুটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে থাকলেও, বর্তমানে তিনি বেপরোয়া। এক কথায় বাচাল। তার আচার-আচরণ একজন অর্বাচীন বালকের মতো। তাকে হয় শোধরাতে হবে, নয়তোবা রাজনীতি হতে বিদায় নিতে হবে। এইসব অতি আবশ্যক করণীয় যদি বিএনপি করতে পারে, তা হলে তাদের সঙ্গে যে কোন বিষয় নিয়ে আলোচনা হতে পারে, শুধু নির্বাচন আর ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য নয়। বিএনপি’র গন্তব্য তাদেরই ঠিক করতে হবে। ২১ মার্চ, ২০১৫ লেখক : গবেষক ও বিশ্লেষক
×