ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

চলচ্চিত্র শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ॥ রাজ্জাক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২১ মার্চ ২০১৫

চলচ্চিত্র শিল্পে পৃষ্ঠপোষকতার অভাব ॥ রাজ্জাক

চলচ্চিত্রাঙ্গনের জীবন্ত কিংবদন্তি নায়করাজ রাজ্জাক। জীবদ্দশায় নিজের অবস্থান নিজ চোখে দেখে যেতে পারছেন। কয়েক প্রজন্ম তাঁকে নায়ক থেকে শুরু করে এই সময়ের এক সফল অভিনেতা হিসেবেও দেখছেন। ভক্তদের শ্রদ্ধা আর ভালবাসাকে সব সময়ই মূল্যায়ন করার চেষ্টা করেছেন বাঙালীর প্রিয় এই অভিনেতা। সকল চরিত্রেই তিনি নিজেকে প্রমাণ করেছেন নায়করাজ হিসেবে। চলচ্চিত্র জীবনে তিনি যেমন নায়ক, প্রযোজক, কিংবা পরিচালক হিসেবে সফলতার চূড়ান্ত শিখরে পৌঁছেছেন, ঠিক তেমনি ব্যক্তি জীবনেও নায়করাজ সফল হয়েছেন। দেশীয় চলচ্চিত্রাঙ্গনে নায়করাজ এমনই একজন ব্যক্তিত্ব যার নাম শ্রদ্ধার সঙ্গে উচ্চারণ করেন সব শিল্পী কলাকুশলী। সংস্কৃতি ক্ষেত্রে অবদানের জন্য এবার ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ পাচ্ছেন তিনি। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগামী ২৫ মার্চ ঢাকার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ২০১৫ সালের এ পুরস্কার প্রদান করবেন। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান পাওয়ার অনুভূতি ও এবং সমসাময়িক চলচ্চিত্র নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা হয়। রাষ্ট্রীয় সর্বোচ্চ সম্মান পাচ্ছেন অনুভূতি কেমন? রাজ্জাক : পুরস্কার অনেক পেয়েছি। এর মধ্যে রয়েছে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার, আজীবন সম্মাননাসহ আরও অনেক পুরস্কার। তবে এবারের ‘স্বাধীনতা পুরস্কার’ আমার জন্য ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। যে কোন শিল্পীর জন্য এ ধরনের পুরস্কার বিশেষ মর্যাদা বহন করে। খুব ভাল লাগছে আমার। আমাকে যারা সম্মানিত করছেন তাদের প্রতি আমি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করছি। আগে বা পরের কথা নয়, প্রত্যেক শিল্পীর কাজের একটা পরিণত সময় আসে। আমি মনে করি, আমাকে ঠিক সময়েই এ পুরস্কার দেয়া হচ্ছে। আমি আজীবন সম্মাননা পেয়েছি ঠিকই, এর অর্থ এই নয়, আমার সব কিছু কাজ করা শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি কিন্তু এখনও কাজ করছি। দেশের খুব কম সংখ্যক ব্যক্তির মধ্যে আপনি একজন যে ৭৪ বছর বয়সেও চলচ্চিত্র তথা অভিনয়কে আঁকড়ে ধরে আছেন... রাজ্জাক : অভিনয় আমার হৃদয়ের সঙ্গে মিশে আছে। চলচ্চিত্রকে আমি মনে-প্রাণে ভালবাসি বলেই আমার ৩ ছেলের মধ্যে দুই জনই এতে কাজ করছে। তারা অন্য ব্যবসার কথা বললেও আমি বলেছি, এটাই চালিয়ে যাও। দেশে এখন চলচ্চিত্রের ব্যবসা ভাল যাচ্ছে না, তার পরেও আমার ভাল লাগা ও ভালবাসা থেকে তারা এখনও কাজ করে যাচ্ছে। আমাদের চলচ্চিত্র কোন দিকে যাচ্ছে? রাজ্জাক : চলচ্চিত্র নিয়ে আমরা কোনদিকে যাচ্ছি, আমি নিজেও বুঝতে পারছি না। অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। কোন এক সময়ে বারো-তেরোশ সিনেমা হল ছিল, এখন নেমে এসেছে আড়াইশ-তিনশ’তে। ঢাকা ও ঢাকার আশপাশেও অনেক সিনেমা হল বন্ধ হয়ে গেছে। আমাদের দেশের মতো গণহারে এত সিনেমা হল বন্ধ পৃথিবীর অন্য কোন দেশে হয়নি। আমরা যারা এই অঙ্গনের সঙ্গে আছি, তারা নিজেরাও শঙ্কিত যে সিনেমা বন্ধ হয়ে যাবে কিনা। একমাত্র সরকারই পারে সিনেমাকে টেনে তুলতে। সরকার যদি বলে, ঠিক আছে, তুমি মার্কেট করও কিন্তু সেখানে সিনেপ্লেক্স থাকতে হবে। ইন্ডিয়াতে যেটা করেছে। তা হলে হয়ত সিনেমাকে বাঁচিয়ে রাখা সম্ভব। বর্তমানে পৃথিবীর অনেক দেশেই চলচ্চিত্রের উন্নয়ন হচ্ছে আমাদের দেশে কেন নয়? রাজ্জাক : আমাদের গার্ডিয়ান নেই বলেই এই দুর্দশা। পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে আমাদের চলচ্চিত্র পিছিয়ে পড়ছে। ভাল চলচ্চিত্র নির্মাণের পাশাপাশি হল বাড়াতে হবে এবং হলকে আরও উন্নত করতে হবে। যেখানে সপরিবারে চলচ্চিত্র দেখতে যাওয়ার পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের দেশে আগের দিনের চলচ্চিত্র আর এখনকার চলচ্চিত্রের মধ্যে ফারাক কোথায়? রাজ্জাক : আগের দিনের চলচ্চিত্র আর এখনকার চলচ্চিত্রের মধ্যে ফারাক অনেক। আগের দিনে আমরা যারা অভিনয় করতাম, চলচ্চিত্রের গল্প ও গান লিখতাম তারমধ্যে শিল্প ছিল। তখনকার পরিচালকগুলো শিক্ষিত ছিল। তারা সবাই শিখে এসে চলচ্চিত্রে কাজ করত। এখন যারা আসছেন বেশিরভাগ এফডিসিতে ঘুরে বেড়াতে বেড়াতে তাঁরা পরিচালক হয়ে যাচ্ছেন। রাস্তায় ঘুরে বেড়ানো ছেলেমেয়েদের নায়ক-নায়িকা বানানো হচ্ছে। তারা চলচ্চিত্রে কি দেবে? এখন গোটা দেশটাতে বিরাজ করছে এক ধরনের অস্থিরতা। আমরা চলচ্চিত্রে এসেছি পয়সার দিকে লক্ষ্য না করে। এখনকার ছেলেমেয়েরা এসেই পয়সা চাচ্ছে। শিল্পের কিছু না বুঝেই এ লাইনে এসে দর্শকদের বিরক্ত করে তুলেছে। তবে ভাল কাজ যে একেবারেই হচ্ছে না তা নয়, কিছু কিছু ভাল চলচ্চিত্র হচ্ছে, তবে প্রয়োজনের তুলনায় একেবারেই কম। চলচ্চিত্রে যা ইচ্ছে তাই করার কারণে দর্শক চলচ্চিত্র থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। সম্প্রতি ভারতীয় চলচ্চিত্র এ দেশের সিনেমা হলে প্রদর্শন নিয়ে আপনার বক্তব্য কি? রাজ্জাক : বঙ্গবন্ধুর সময়ে আমরাই এদেশে হিন্দি চলচ্চিত্র চালানো বন্ধ করেছিলাম। মাঝে কারা কিভাবে আবার এটাকে নিয়ে আসতে চাচ্ছে জানি না। আমরা এর বিরোধিতা করেছি। সরকার থেকে বর্তমান তথ্যমন্ত্রী আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, কয়েকটা ছবি এসেছে, এরপর আর কোন চলচ্চিত্র আর আমাদের দেশে চলবে না। সবার উদ্দেশে আপনার বক্তব্য কি? রাজ্জাক : আল্লাহ্ আমাকে যা দিয়েছেন ছোট্ট এই জীবনে আমি তাতেই সন্তুষ্ট। এক জীবনে সব মানুষ কি এত যশ-প্রতিপত্তি পায়? পায় না। কিন্তু আমি পেয়েছি। আমি আমার চলচ্চিত্র জীবনের প্রতিটি কাজের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকটি মানুষকে শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করছি, যে যেখানেই থাকুক না কেন ভাল থাকুক, সুস্থ থাকুক। সেই সঙ্গে সবার কাছে দোয়া চাই যেন ভাল থাকি সুস্থ থাকি। -গৌতম পাণ্ডে
×