ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ওবামা প্রশাসনের নজিরবিহীন হুমকি

ইসরাইলের পক্ষে ভেটো নয়

প্রকাশিত: ০৫:১১, ২১ মার্চ ২০১৫

ইসরাইলের পক্ষে ভেটো নয়

ওবামা প্রশাসন বৃহস্পতিবার রাতে জাতিসংঘে ইসরাইলের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহার করে নেয়ার এক নজিরবিহীন হুমকি দিয়েছে। এর আগে ইসরাইলী প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু দুইরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার সমর্থন নিয়ে সন্দেহের সৃষ্টি করে। খবর টেলিগ্রাফ ও নিউইয়র্ক টাইমস অনলাইনের। হোয়াইট হাউস আমেরিকার ভেটো দেয়ার বিষয়টি পুনর্মূল্যায়ন করবে বলে ঘোষণা করেছে। দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকার ভেটোই দুইরাষ্ট্র সমাধানের পক্ষে জাতিসংঘের স্বীকৃতি পেতে আন্তর্জাতিক প্রচেষ্টাকে ঠেকিয়ে এসেছে। মার্কিন ঘোষণা প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা এবং নেতানিয়াহুর মধ্যকার সম্পর্কের গভীর ফাটল ধরারই আভাস। হোয়াইট হাউসের মুখপাত্র জোশ আর্নেস্ট বলেন, দুইরাষ্ট্র সমাধানই সর্বোত্তম পরিণতিÑএ ধারণার ভিত্তিতেই যুক্তরাষ্ট্র জাতিসংঘের পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করে এসেছে। এখন আমাদের মিত্র বলেছে যে, তারা ঐ সমাধানের প্রতি আর অঙ্গীকারাবদ্ধ নয়। এর অর্থ হলো, এ বিষয়ে আমাদের অবস্থান পুনর্মূল্যায়ন করা প্রয়োজন, আর আমরা আগামীতে এটাই করব। যদি যুক্তরাষ্ট্র এর হুমকি বাস্তবায়ন করে তা হলে সেটি হবে নির্বাচনী বিজয়ের পর নেতানিয়াহুর প্রতি গুরুতর এক আঘাত। এতে ইসরাইলী কূটনীতিকরা নিরাপত্তা পরিষদে ঐ পরাশক্তির সমর্থনের ওপর সাধারণভাবে নির্ভর করতে পারেন বসে তাদের নিজস্ব ধারণা নিয়ে নতুন করে ভাবতে বাধ্য হবেন। নেতানিয়াহু কোন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গঠন রোধ করবেন বলে তার নির্বাচনের আগ মুহূর্তে ব্যক্ত প্রতিশ্রুতি নরম করার চেষ্ট করা সত্ত্বেও ওবামা প্রশাসন ওই হুমকি দিল। বৃহস্পতিবার হোয়াইট হাউস জানায় যে, ওবামা নেতা নিয়াহুকে তার বিজয় উপলক্ষে অভিনন্দন জানাতে ফোন করেন। হোয়াইট হাউস উল্লেখ করে যে, তারা ইসরাইলী-ফিলিস্তিনী সংঘাত নিরসনের কঠিন পথসহ কতক আঞ্চলিক ইস্যুতে পরামর্শ করে যাবেন। ওবামা দুইরাষ্ট্র সমাধানের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। হোয়াইট হাউস আরও জানায় যে, ইরানকে কোন পরমাণু অস্ত্র অর্জন করা থেকে নিবৃত্ত করবে ইরানের সঙ্গে এমন এক ব্যাপকভিত্তিক চুক্তি করার আশা ওবামা পুনর্ব্যক্ত করেন। ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু তার চোখের সামনে কোন ফিলিস্তিনী রাষ্ট্র গঠিত হবে না বলে তার প্রাক-নির্বাচন ঘোষণা থেকে সরে যাওয়ার চেষ্টা করেন, কিন্তু তার নতুন কথাবার্তা বিক্ষুব্ধ ওবামা প্রশাসনকে শান্ত করতে কোনই কাজে আসেনি বলে মনে হয়। আমেরিকার সম্প্রচার কেন্দ্রগুলোর সঙ্গে কয়েক দফা সাক্ষাতকারে নেতানিয়াহু একথাও বলেন যে, তিনি নির্বাচনের দিন এক ভিডিও সতর্ক বার্তায় আরব নাগরিকদের ভোটের প্রভাব রোধ করার চেষ্টা করেননি। আবরদের দলে দলে বাসে করে ভোট কেন্দ্রগুলোতে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে তিনি ঐ বার্তায় মন্তব্য করেছিলেন। এ মন্তব্য হোয়াইট হাইস ও বিশ্বজুড়ে বিক্ষোভের সৃষ্টি করে। নেতানিয়াহু বলেন, তিনি ইসরাইলী-ফিলিস্তিনী সংঘাতের দু’রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি তার অনুমোদন পাল্টাতে চাননি, তিনি কেবল ঠিক এখন এটি অসম্ভব এ কথাই বলতে চেয়েছেন। বারলান বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৯ সালে দেয়া এক ভাষণে তিনি ওই সমাধান অনুমোদন করেছিলেন। তিনি ইসরাইলকে এক ইহুদী রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে ফিলিস্তিনী নেতৃবৃন্দের অস্বীকৃতি জঙ্গী ইসলামপন্থী হামাস দলের সঙ্গে তাদের চুক্তি এবং মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে ইসলামী সন্ত্রাসবাদের উত্থানের কথা উল্লেখ করেন। নেতানিয়াহু বৃহস্পতিবার এমএসএনবিসির সঙ্গে এক সাক্ষাতকারে বলেন, আমি আমার নীতি বদলাইনি। তিনি বলেন, যা বদলেছে তা হলো বাস্তবতা। তিনি মঙ্গলবারের নির্বাচনে বিরাট বিজয় অর্জনের পর এটিই ছিল তার প্রথম সাক্ষাতকার। এ বিজয়ের ফলে তিনি চতুর্থবারের মতো তার দেশের প্রধানমন্ত্রী হবেন। তিনি বলেন, আমি এক স্থায়ী শান্তিপূর্ণ দু’রাষ্ট্র সমাধান চাই, কিন্তু সেজন্য পরিস্থিতিরও পরিবর্তন ঘটতে হবে।
×