ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

তবু অনেক অর্জনের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের

প্রকাশিত: ০৬:১৭, ২০ মার্চ ২০১৫

তবু অনেক অর্জনের বিশ্বকাপ বাংলাদেশের

মোঃ মামুন রশীদ ॥ শেষটা ভাল হলো না। যদিও কথায় আছে ‘শেষ ভাল যার সব ভাল তার’, তবু বলা যাচ্ছে না বাজে হয়েছে এবার বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের বিশ্বকাপ অভিযান। স্বপ্ন পূরণ করেই এবার বিশ্বকাপ শেষ করেছে মাশরাফি বিন মর্তুজার দল। এবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশ দল গিয়েছিল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার স্বপ্ন নিয়ে। সেই দুরূহ স্বপ্ন পূরণের পথে ইংল্যান্ডের মতো শক্তিশালী দলকে হারিয়ে দিয়েছে টাইগাররা। তবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার পর আর অগ্রযাত্রা অব্যাহত থাকেনি। ভারতের কাছে হেরে বিদায় নিয়েছে দল চলতি একাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের সবচেয়ে বাজে ম্যাচ খেলে। তবে এবার দলগত প্রাপ্তি ও ব্যক্তিগত প্রাপ্তির বিষয় ছিল অনেক। সে সব নিয়ে মাথা উঁচিয়েই দেশে ফিরতে পারবেন মাশরাফিরা। শুরুটাই বেশ ভালভাবে হয়েছিল বাংলাদেশ দলের। অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের পরিবেশ ও উইকেটে বেশি খেলার অভ্যাস না থাকায় নানাবিধ শঙ্কা জেগেছিল দেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের মনে। এর পেছনে আবার যোগ হয়েছিল গত বছর জুড়ে শুধু হারের বৃত্তে বন্দী থাকার কারণে। তবে সবকিছুকেই যে জয় করল বাংলাদেশ প্রথম ম্যাচেই। সহযোগী সদস্য দেশ আফগানিস্তান ভয়ঙ্কর দল হিসেবে করতে পারে অনেক কিছুই। তবে তাদের ১০৫ রাানে হারিয়ে সব শঙ্কা উড়িয়ে দেয় টাইগাররা। এ ম্যাচে দেশসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান ৬৩ রানের ইনিংস খেলে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রান করার গর্বিত মালিক বনে যান। এদিন পঞ্চম উইকেটে মুশফিকুর রহীমের সঙ্গে ১১৪ রানের জুটি গড়ে বিশ্বকাপে নিজেদের রেকর্ড জুটি উপহার দেয় বাংলাদেশ। দ্বিতীয় ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে পরিত্যক্ত ম্যাচের সুবাদে ১ পয়েন্ট পেয়ে দারুণ সুবিধাজনক অবস্থানে চলে যায় দল। শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে গেলেও এরপর স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ ৩১৯ রানের লক্ষ্য তাড়া করে। বিশ্বকাপের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড স্থাপন করে এর মাধ্যমে। বিশ্বকাপে নিজেদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহও পায়। আর নিজেদের ওয়ানডে ইতিহাসে সর্বাধিক রান তাড়া করে জয়ের রেকর্ডও গড়ে ফেলে। ওই ম্যাচে ওপেনার তামিম ইকবাল বাংলাদেশের পক্ষে বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ৯৫ রানের ইনিংস উপহার দেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশী হিসেবে ওয়ানডেতে চার হাজার রান করার গর্বিত ক্রিকেটার হয়ে যান তিনি। ৬ উইকেটের জয় ছিনিয়ে নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠার স্বপ্নটা উজ্জ্বল করে দল। শেষ মুহূর্তে প্রত্যাশার চাপটা বেড়ে যায় টাইগারদের নিয়ে। চার ম্যাচে মাত্র এক পরাজয় এবং ৫ পয়েন্ট শেষ আটে ওঠার দারুণ সুযোগ তৈরি হয়। কিন্তু সে জন্য সামনে ছিল কঠিন দুই চ্যালেঞ্জ ইংল্যান্ড ও নিউজিল্যান্ড। আয়োজক হিসেবে এমনিতেও দুর্দান্ত খেলছিল এবার নিউজিল্যান্ড। চলতি বিশ্বকাপের অন্যতম হটফেবারিট দলটি নিজেদের মাঠে বরাবরই বিশ্বের যে কোন দলের কাছে কঠিন প্রতিপক্ষ। তাই ইংল্যান্ডকেই টার্গেট করা হয়েছিল বধের জন্য। ওই ম্যাচটি নিয়ে বিশ্বব্যাপী আলোচনার ঝড় ওঠে আগেভাগেই। কারণ বাংলাদেশ-ইংল্যান্ড ম্যাচে যে জিতবে সেই উঠবে কোয়ার্টারে। শ্বাসরুদ্ধকর সে ম্যাচে শেষ পর্যন্ত বিজয়ী টাইগাররা। পেসার রুবেল হোসেনের দুর্দান্ত এক স্পেলে মুখ থুবড়ে পড়া ইংলিশরা ১৫ রানের পরাজয় বরণ করে। তবে ম্যাচের শুরুতেই নতুন দিগন্তের নিশানা দেখিয়ে দিয়েছিলেন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। তিনি প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে বিশ্বকাপে সেঞ্চুরি করার গৌরব দেখান। ১০৩ রানের একটি ইনিংস খেলে দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে নতুন এক পাতার সংযোজন করেন তিনি। এক ম্যাচ হাতে রেখেই দেশের ক্রিকেট ইতিহাসে প্রথম কোন আইসিসির বড় আসরে কোয়ার্টাল ফাইনালে পা রাখে দল। অবিস্মরণীয় এ অর্জনটা নিয়ে বিশ্বকেই চমকে দেয় বাংলাদেশ। হিসেব-নিকেশের খাতায় নতুন করে ক্রিকেটবোদ্ধারা যোগ করেন টাইগারদের নাম। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে আরেকটা চমক দেখাবে নাত বাংলাদেশ? গ্রুপের শেষ ম্যাচে উভয় দল মুখোমুখি। টানা ৫ ম্যাচ জিতে দারুণ উজ্জীবিত কিউই শিবির একটা দিনও খারাপ দেখেনি। অপরদিকে, আগে ভাগে কোয়ার্টার নিশ্চিত করে দারুণ অবস্থানে বাংলাদেশও। কিউইদের বিরুদ্ধে সর্বশেষ ৭ ওয়ানডেতেই জিতে যাওয়া বাংলাদেশকে নিয়ে তাই দারুণ চিন্তিত স্বাগতিকরাও। দারুণ এক লড়াইয়ের পর অবশ্য শেষ পর্যন্ত ৩ উইকেটে পরাজিত হয় টাইগাররা। এ ম্যাচেও শতক হাঁকান মাহমুদুল্লাহ। বিশ্বকাপে টানা দ্বিতীয় শতক তিনি ছাড়া করেছেন আর মাত্র ৮ ব্যাটসম্যান। ১২৮ রানের ঝকঝকে এক ইনিংস খেলে অপরাজিত থাকেন তিনি। গ্রুপের চতুর্থ দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠা বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু সে সব নিয়ে কেউ মাথা ঘামালেন না। মর্যাদা আদায় করে নিয়েছে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিজেদের নৈপুণ্য দেখিয়ে। গ্রুপ পর্বে দুটি পরাজয়। ২০০৭ বিশ্বকাপে এবং ২০১২ এশিয়া কাপে ভারতকে হারিয়ে দেয়ার রেকর্ড আছে। তাই বাংলাদেশ দলকে নিয়ে বেশ আতঙ্কিতই ছিল ভারতের মতো ক্রিকেট পরাশক্তিরাও। শেষ পর্যন্ত অবশ্য নকআউট ম্যাচে অভিজ্ঞ এবং বিশ্বকাপের অন্যতম ফেবারিট হিসেবে ভারতীয় দলই জিতে গেল। তবে এ ম্যাচকে ঘিরে যে মর্যাদার আসনে বাংলাদেশ নিজেদের রাখতে পেরেছিল সেটা গর্বিত করেছে পুরো জাতিকে। সামনে এগিয়ে যাওয়ার রসদ পাওয়া গেছে এর মাধ্যমেই। ব্যাটিং নিয়ে যে দুশ্চিন্তা ছিল সেটাও কেটে গেছে এবার বিশ্বকাপে। তরুণ সৌম্য সরকার ও সাব্বির রহমানও আলো ছড়িয়েছেন ব্যাট হাতে। আর অভিজ্ঞ মুশফিকের ব্যাট হেসেছে নিয়মিতই। সার্বিকভাবে দারুণ সফল ছিল এবার বাংলাদেশ দলের বিশ্বকাপ অভিযান এবং মর্যাদা নিয়েই শেষ করতে পেরেছে এবারের বিশ্বকাপটা।
×