ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোয়ার্টার ফাইনালে মুখোমুখি আজ দু’দল

সেমিতে অস্ট্রেলিয়া না পাকিস্তান?

প্রকাশিত: ০৬:১৫, ২০ মার্চ ২০১৫

সেমিতে অস্ট্রেলিয়া না পাকিস্তান?

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ প্রথমবার অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ডের মাটিতে অনুষ্ঠিত বিশ্বকাপে শিরোপা জিতে নিয়ে গিয়েছিল পাকিস্তান। এবারও আছে তারা লড়াইয়ে। তবে কঠিনতম পরীক্ষায় অবতীর্ণ হতে হবে পাকদের আজ। আয়োজক অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে তৃতীয় কোয়ার্টার ফাইনালে আজ মুখোমুখি পাকিরা এ্যাডিলেড ওভালে। বিশ্বকাপে আগের মুখোমুখি ৮ লড়াইয়ে সমানে সমান অসি-পাক লড়াইয়ের ফল, চারবার করে জিতেছে উভয় দল। আর এ্যাডিলেড একমাত্র ভেন্যু যেখানে ২০১১ সালের পর অস্ট্রেলিয়া ঘরের মাঠে অন্য যে কোন ভেন্যুর চেয়ে বেশি হেরেছে। এ মাঠে দুটি জয়ের বিপরীতে চারটি পরাজয় দেখেছে অসিরা। এ দুটি কারণে আশাবাদী হতেই পারে মিসবাহ-উল-হকের দল। তবে ম্যাচের জন্য তৈরি করা এ্যাডিলেডের ঘাসের উইকেটে অসি পেসারদের বিরুদ্ধে ভাল করাটা হবে অনেক বড় চ্যালেঞ্জ। বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৯টায় ম্যাচটি শুরু হবে। শুরুটা বাজে হলেও পরে ঠিকই দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে নিজেদের সামর্থ্যরে প্রমাণ দিয়েছে ইনজুরি সমস্যায় শক্তিতে ঘাটতি পড়া পাকিস্তান। অপরিহার্য ক্রিকেটার মোহাম্মদ হাফিজ, গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচের পর পেস বোলিং স্তম্ভ মোহাম্মদ ইরফান না থাকায় অনেকখানিই দুর্বল হয়ে গেছে ’৯২ বিশ্বকাপজয়ী পাকিস্তান। এরপরও দলের বোলিংয়ের ওপরই মূল ভরসা অধিনায়ক মিসবাহর। কারণ, শেষ গ্রুপ ম্যাচে আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দলের ব্যাটিং কিছুটা উন্নতির ছাপ দেখালেও পুরো আসরে বেশ বেহাল দশা ছিল পাকদের ব্যাটিংয়ে। শুধু অধিনায়ক মিসবাহই ছিলেন ধারাবাহিক। আজকের ম্যাচেও তাই অন্যতম ভরসা তিনি দলের ব্যাটিংয়ে। অভিজ্ঞ ইউনুস খান তেমন সুবিধা করতে পারেননি। টপঅর্ডার প্রথম ৫ ম্যাচে ব্যর্থ হলেও অবশ্য শেষ ম্যাচে টপঅর্ডার রান পেয়েছে, এটিই হতে পারে পাকিস্তানের জন্য অনুপ্রেরণা। পাকরা ১৯৯২ বিশ্বকাপের স্মৃতিতে বেশ উজ্জীবিত। সেই অনুপ্রেরণা কাজে লাগিয়েই শেষ পর্যন্ত শেষ চার ম্যাচ টানা জিতে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রেখেছে দলটি। হারিয়েছে ইতোমধ্যেই সেমি নিশ্চিত করে ফেলা দক্ষিণ আফ্রিকার মতো শক্ত দলকেও। তাই নতুন করে বেশ আত্মবিশ্বাসী ও উজ্জীবিত পাকরা। দলের বোলিংয়ে ইরফান না থাকলেও আরেক পেসার ওয়াহাব রিয়াজ বেশ ছন্দে আছেন এবং তিনিই নিশ্চিতভাবে আজ পাকিস্তানের বোলিং বিভাগকে নেতৃত্ব দেবেন সামনে থেকে। পাকিস্তানের চেয়ে খুব বেশি ভাল ছিল অস্ট্রেলিয়ার অবস্থা তা বলা যাচ্ছে না। গ্রুপ পর্বের শুরুটা ইংল্যান্ডকে হারিয়ে হলেও দুর্ভাগ্য সঙ্গী হয়েছিল অসিদের। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পয়েন্ট খুঁইয়ে বসে বৃষ্টির কারণে পরিত্যক্ত হওয়ায়। তৃতীয় ম্যাচে ট্রান্স-তাসমান শত্রু নিউজিল্যান্ডের কাছে শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে ১ উইকেটের পরাজয়। তবে অসিদের শক্তিমত্তা বোঝানোর বাকি ছিল তখনও। পরের তিন ম্যাচে প্রতিপক্ষদের উড়িয়ে দিয়েছে দলটি। শেষ পর্যন্ত ‘এ’ গ্রুপ থেকে রানার্সআপ হিসেবেই তারা পা রাখে কোয়ার্টার ফাইনালে। এবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে লড়াই। নিয়মিত অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক বিশ্বকাপের তৃতীয় ম্যাচ থেকে ফেরার পর দলটি আগাগোড়াই বেশ ব্যালান্সড হয়ে উঠেছে। দারুণ ফর্মে আছেন গ্লেন ম্যাক্সওয়েল, স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নাররা। তবে অসিদের মূল শক্তি দলের পেস বিভাগ। অন্যতম অভিজ্ঞ মিচেল জনসন তেমন ফর্মে না থাকলেও সব ম্যাচেই প্রতিপক্ষের জন্য আতঙ্ক ছিলেন মিচেল স্টার্ক। গতির ঝড় আর দারুণ সুইং ও বাউন্স দিয়ে তিনি ইতোমধ্যেই ৫ ম্যাচে ১৬ উইকেট নিয়ে শীর্ষে আছেন তিনি গ্রুপ পর্বের খেলা শেষে। তাকে অবশ্য তেমন সঙ্গ দিতে পারেননি অন্য কোন পেসার। তবে প্যাট কামিন্স শেষ কয়েকটি ম্যাচে দারুণ বোলিং করে স্টার্কের ভাল সঙ্গীতে পরিণত হয়েছেন নতুন বলে। এ্যাডিলেডের উইকেট নিয়ে এবার শুরু থেকেই বেশ কথা হয়েছে। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে বিশ্বকাপে এ ভেন্যুর উইকেট বেশ দ্রুত। আজকের ম্যাচে উইকেটে আবার বাড়তি ঘাসের উপস্থিতি দেখা যাবে। নিশ্চিতভাবেই সেটা পেসারদের জন্য সুবিধা দেবে। তাই পেস বিভাগ কিছুটা শক্ত করেই গড়বে অসিরা। কামিন্স ও জশ হ্যাজেলউডের মধ্যে সেক্ষেত্রে একাদশে ঢোকা নিয়ে একটা লড়াই হবে। তবে স্টার্ক-জনসনকে সমর্থন দিতে থাকছেন দুই পেস অলরাউন্ডার শেন ওয়াটসন ও জেমস ফকনার। ইরফান ছিটকে যাওয়ার পরও পাকিস্তানেরও দৃষ্টি পেস বোলিং মজবুত করে গড়া। ওয়াহাবের সঙ্গে তাই সোহেল খান ও রাহাত আলী থাকছেন। আর এ্যাডিলেডের সম্প্রতি অবস্থা বিবেচনা করে লেগস্পিনার ইয়াসির শাহের পরিবর্তে সিমার এহসান আদিলের সুযোগটাই বেশি। বিশ্বকাপে আটবার মুখোমুখি হয়েছে পাকিস্তান-অস্ট্রেলিয়া। চারবার করে জিতেছে উভয় দল। তবে এ্যাডিলেডই একমাত্র ভেন্যু যেখানে নিজেদের ঘরে ২০১১ সালের পর অন্য যে কোন মাঠের চেয়ে জয়ের চেয়ে পরাজয় বেশি দেখেছে অসিরা। এখানে ৬ ম্যাচ খেলে চারটিতেই পরাজিত হয়েছে স্বাগতিকরা। তবে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বেশ ভাল রেকর্ড আছে এখানেও। ছয়বারের মুখোমুখিতে ৫ বারই পাকিদের হারিয়েছে অসিরা। আগে ব্যাটিং করাটাই পাকিস্তানের জয়ের সম্ভাবনা বাড়িয়ে দেবে বলে মনে করছেন ক্রিকেট বিশ্লেষকরা। কারণ সর্বশেষ যে ৭ ম্যাচে ২৫০ বা তারচেয়ে বেশি রান তাড়া করতে নেমেছে পাকরা সবই হেরেছে। তবে গত বিশ্বকাপে অসিদের কলম্বোয় পরে ব্যাটিং করেও ৪ উইকেটে হারিয়েছিল পাকিস্তান। কিন্তু সর্বশেষ দেখায় একেবারেই বাজে পরিস্থিতির শিকার হয়েছিল পাকরা। গত সেপ্টেম্বরে আরব আমিরাতে ৫ ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে পাকদের ৪-১ ব্যবধানে বিধ্বস্ত করেছিল অসিরা। সবমিলিয়ে ওয়ানডে ইতিহাসে ৯২ বার মুখোমুখি লড়াইয়ে বেশ এগিয়ে অস্ট্রেলিয়াই। ৫৭ বার জয়ের বিপরীতে মাত্র ৩১ পরাজয় দেখেছে তারা। আর ঘরের মাঠে আজ বিশ্বকাপের উত্তাপে স্বাগতিক দর্শকদের অকুণ্ঠ সমর্থন নিয়ে অস্ট্রেলিয়াই আজও এগিয়ে থাকবে।
×