ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান হবে

নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে তিন সিটি এলাকায় সন্ত্রাসী তালিকা তৈরি

প্রকাশিত: ০৬:১০, ২০ মার্চ ২০১৫

নিরাপত্তা ঝুঁকি এড়াতে তিন সিটি এলাকায় সন্ত্রাসী তালিকা তৈরি

শংকর কুমার দে ॥ ঢাকা উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রামÑ এই তিন সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে প্রার্থীদের নিরাপত্তা ঝুঁকির বিষয়টি মাথায় রেখে সিটি কর্পোরেশন এলাকায় আট শতাধিক সন্ত্রাসীর তালিকা তৈরি করা হয়েছে, যারা এখন সক্রিয় হয়ে ওঠার তৎপরতা প্রদর্শন করছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের তারিখ ঘোষণার পর প্রার্থীদের প্রচারণা জোরদার হওয়ায় উত্তেজনা, উত্তাপে গরম হয়ে উঠছে নির্বাচনী মাঠ। অবিলম্বে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করার জন্য বিশেষ অভিযান পরিচালনা করা হবে। সন্ত্রাসী-অপরাধী গ্রেফতার ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারই বিশেষ অভিযান পরিচালনার উদ্দেশ্য। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। নির্বাচন কমিশনার কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদ বুধবার এক সংবাদ সম্মেলন করে ঢাকার উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের জন্য আগামী মনোনয়নপত্র দাখিল, যাচাই-বাছাই, প্রত্যাহার ও ২৮ এপ্রিল নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছেন। নির্বাচনের সময় ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে প্রার্থীদের মধ্যে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিবেশ সৃষ্টি হওয়ার আমেজ শুরু হয়ে গেছে। এর আগে গত দুই বছর আগেই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার তোড়জোড় শুরু হলে সিটি কর্পোরেশন এলাকার সম্ভাব্য প্রার্থীদের ও সন্ত্রাসীদের তালিকা তৈরি করা হয়। দুই বছর আগের তালিকাটি এখন আবার আপডেট করে বিশেষ অভিযান পরিচালনার প্রস্তুতি নেয়া হচ্ছে। সূত্র জানান, বিএনপি-জামায়াত জোটের অনির্দিষ্টকালের টানা অবরোধ-হরতালের নামে পেট্রোলবোমার আগুনে পুড়িয়ে মারার নাশকতা, বোমাবাজি, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটনা অব্যাহত থাকার মধ্যেই তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচন ঘোষণা করা হয়েছে। তবে বিএনপি-জামায়াত জোট নির্বাচনে অংশগ্রহণ করলে কিংবা না করলে পরিস্থিতি কি দাঁড়ায় তার ওপর ভিত্তি করেও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিষয়টির ওপর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। বিএনপি-জামায়াত জোট গত ৫ জানুয়ারির জাতীয় সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলেও অতীতে দেশের উপজেলা ও এই তিন সিটি কর্পোরেশনের বাইরের সিটি কর্পোরেশনগুলোতে নির্বাচনে অংশ নিয়ে বিপুলসংখ্যক প্রার্থীর বিজয় নিশ্চিত করতে সক্ষম হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বিএনপি-জামায়াত জোট দলীয়ভাবে প্রকাশ্যে প্রার্থী যদি নাও দেয়, তবু তাদের প্রার্থী থাকবে বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ঢাকার উত্তর, দক্ষিণ ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের জন্য প্রায় ৮শ’ সন্ত্রাসীর নামের তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এর মধ্যে পেশাদার সন্ত্রাসী-অপরাধীর সংখ্যা প্রায় ৪ শতাধিক। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির জন্য হুমকি হয়ে ওঠতে পারে তারা। তারা সম্ভাব্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীদের নির্বাচনে ভূমিকা রাখতে পারে। একই ওয়ার্ডে সরকারদলীয় একাধিক প্রার্থী মাঠে নেমে পড়ায় সংঘাতের আশঙ্কা তৈরি হয়েছে। দলীয় ক্যাডার ও সন্ত্রাসীরা প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছে। ফলে প্রার্থীর প্রতিপক্ষের হামলার ঝুঁকির মধ্যে পড়তে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যেই তৎপরতা শুরু করেছে শীর্ষ সন্ত্রাসীরা। কারাবন্দী ও বিদেশে পলাতক শীর্ষ সন্ত্রাসীরা প্রার্থীদের সঙ্গে দলের পক্ষে কাজ করার পাঁয়তারা করেছে। উঠতি সন্ত্রাসীরাও সক্রিয় হয়ে উঠেছে। সব মিলিয়ে উত্তেজনা, উত্তাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনী এলাকায়। গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০১৩ সালে নির্বাচনের সম্ভাবনা তৈরি হওয়ায় গোয়েন্দা সংস্থা দফায় দফায় তথ্য সংগ্রহ করে। ডিএমপি পুলিশও সম্প্রতি সম্ভাব্য প্রার্থীদের তালিকা করে খোঁজখবর নিয়েছে। এতে বেশকিছু এলাকায় নির্বাচনকেন্দ্রিক সংঘাতের আশঙ্কা দেখা গেছে। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন উত্তর ও দক্ষিণের নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলার আগাম সতর্কতামূলক তথ্য সংগ্রহ করেছে গোয়েন্দারা। গোয়েন্দা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের ৯২টি ওয়ার্ডের আওয়ামী লীগ ও বিএনপি দলীয় বর্তমান কাউন্সিলর ও সম্ভাব্য কাউন্সিল প্রার্থী মিলে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছেন শতাধিক প্রার্থী। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা জানিয়েছেন, তিন সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর পরই ঢাকা এবং চট্টগ্রামে বিশেষ অভিযান পরিচালনার সিদ্ধান্ত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে যা যা করা দরকার, তাÑই করা হবে। পুলিশ ও র‌্যাবকে ইতোমধ্যেই বিশেষ নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। কোন মেয়র বা কাউন্সিলর প্রার্থীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কর্মকা-ের অভিযোগ আসলে তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে। নিরপেক্ষভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কাজ করবে। কে কোন দলের পক্ষে হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করলেও তাদের বিরুদ্ধেও আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করবে নির্বাচন কমিশন। ঢাকা মহানগর পুলিশের একজন কর্মকর্তা বলেছেন, রাজধানীর ৪৯টি থানার অফিসার ইনচার্জদের (ওসি) মাধ্যমে ৯২টি ওয়ার্ডে কাউন্সিলর পদে সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঠিকানাসহ তাদের জীবন বৃত্তান্ত সংগ্রহ করা হয়েছে। জরিপ অনুযায়ী, সম্ভাব্য প্রার্থীর সংখ্যা সহস্রাধিক হতে পারে। এতে এলাকায় কোন প্রার্থীর সামাজিক অবস্থা কি রকম, কার জীবনের হুমকি আছে, কে সন্ত্রাসী ও কার সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের সখ্য আছেÑ সে সস্পর্কে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। সম্ভাব্য প্রার্থীদের মধ্যে কার বিরুদ্ধে কতটি মামলা আছে, কে কোন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে সম্পৃক্তÑ সে সম্পর্কেও তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ। এদের মধ্যে বেশিরভাগ প্রার্থীই আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী। স্থানীয় বিরোধের কারণে বেশি সংঘাতের ঝুঁকির মুখে রয়েছে প্রার্থীরা।
×