ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

অভিভাবকদের অভিযোগের তদন্ত করছে মন্ত্রণালয়

রাজধানীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাশকতায় অর্থ যোগান দেয়

প্রকাশিত: ০৬:০০, ২০ মার্চ ২০১৫

রাজধানীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নাশকতায় অর্থ যোগান দেয়

বিভাষ বাড়ৈ ॥ বিএনপিপন্থী শিক্ষক নেতা অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়ার পর এবার রাজধানীর দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতায় অর্থ যোগান দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। প্রতিষ্ঠান দুটি ‘জামায়াতের’ নিজস্ব অর্থে পরিচালিত উল্লেখ করে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ এনে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে লিখিত আবেদন করেছেন অভিভাবকরা। এদিকে ঘটনা তদন্তে ইতোমধ্যেই মাঠে নেমেছে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। মন্ত্রণালয় ও অধিদফতরের কর্মকর্তা বলেছেন, অভিযোগ গুরুতর। তদন্তে প্রমাণ হলে আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের পৃথক তিন মামলায় অধ্যক্ষ সেলিম ভূইয়াকে গত ২৪ জানুয়ারি দনিয়া একে স্কুল এ্যান্ড কলেজ থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। সেলিম ভূইয়া ওই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ। বিএনপিপন্থী শিক্ষক সংগঠন জাতীয় শিক্ষক-কর্মচারী ঐক্যজোটের তিনিই চেয়ারম্যান। তাঁর বিরুদ্ধে গত ২৩ জানুয়ারি রাতে যাত্রাবাড়ীতে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রোলবোমা হামলা করে ৩১ যাত্রীকে দগ্ধ করার ঘটনায় মদদ দেয়াসহ নানা অভিযোগ উঠেছে। গ্রেফতারের পর গাড়ি ভাংচুর, অগ্নিসংযোগ ও বিস্ফোরণের পৃথক তিন মামলায় সেলিম ভূইয়াকে ১৪ দিনের রিমান্ডেও নেয়া হয়। ওই ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই এবার দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নাশকতা ও সহিংসতায় অর্থ যোগান দেয়ার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। রাজধানীর খিলগাঁওয়ে অবস্থিত এ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দুটির বিরুদ্ধে এ অভিযোগ তুলেছেন এলাকাবাসী ও অভিভাবকরা। তারা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট দফতরে লিখিতভাবে জানিয়ে বলেছেন, বিষয়টি যেন দ্রুত খতিয়ে দেখা হয়। জানা গেছে, ওই আবেদনের পর প্রাথমিক তদন্ত প্রক্রিয়া শুরু হলেও একই ঠিকানায় অবস্থিত পৃথক দুটি প্রতিষ্ঠানের নাম ভুলক্রমে একীভূত হওয়ায় তা সংশোধন করে পুনরায় তদন্তে নেমেছে মন্ত্রণালয়ের পরিদর্শন ও নিরীক্ষা অধিদফতর (ডিআইএ)। ডিআইএর পরিচালক অধ্যাপক মো. মফিজ উদ্দিন আহমেদ তথ্যের সত্যতা নিশ্চিত করে বলেছেন, আমাদের একটি প্রতিনিধি দল তদন্তের জন্য গিয়েছিল। শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান দুটি একসঙ্গে কার্যক্রম করছে- এমন তথ্যে আমরা প্রতিষ্ঠান দুটির একই নাম লিখে তদন্ত শুরু করি। কিন্তু প্রতিষ্ঠান দুটির কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, তারা পৃথক পৃথকভাবে কাজ করছে। যেহেতু প্রতিষ্ঠান দুটি আলাদা আলাদাভাবে শিক্ষা কার্যক্রম পরিচালনা করছে তাই আমরা আলাদা আলাদাভাবে পুনরায় অনুসন্ধান শুরু করছি। অভিযোগ প্রমাণিত হলে প্রতিষ্ঠানগুলোর বিরুদ্ধে কঠিন ব্যবস্থা নেয়া হবে। তিনি আরও বলেন, কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিন ধরেই জঙ্গী কার্যক্রমের সঙ্গে সম্পৃক্ততার অভিযোগ রয়েছে। তাই আমরা বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে খতিয়ে দেখছি। ডিআইএতে জমা দেয়া অভিযোগনামায় বলা হয়েছে, ঢাকার খিলগাঁওয়ে বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠা করা হয় এই প্রতিষ্ঠান। খিলগাঁও থানার বিপরীত পাশে অবস্থিত প্রধান ক্যাম্পাসে সন্ধ্যা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্রশিবিরের গোপন সভা হয়ে থাকে। ধর্মীয় সভার নামে এখানে গোপন সরকারবিরোধী রাজনৈতিক কর্মকা- হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। এই প্রতিষ্ঠান একটি ট্রাস্টের অধীনে পরিচালিত হয়, যার প্রধানের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ রয়েছে। এই ট্রাস্টের অধিকাংশ সদস্যই থানা জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে সম্পৃক্ত। আর প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষও স্থানীয় জামায়াতে ইসলামীর শূরা সদস্য। তারা নানাভাবে খরচ দেখিয়ে এবং ট্রাস্টের সদস্যদের সম্মানী ভাতা দেখিয়ে প্রতিষ্ঠানের অর্থ জামায়াত-শিবিরের রাজনৈতিক কর্মকা-ে ব্যয় করে থাকেন। বর্তমানে চলমান বিএনপি-জামায়াতের সহিংসতা ও বোমাবাজিতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সহায়তা করছে ওই দুই প্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক, অধ্যক্ষ, পরিচালনা পরিষদসহ শতাধিক শিক্ষক। তারা স্থানীয় ছাত্রশিবিরের ক্যাডারদের আর্থিক সহায়তা দিচ্ছে। পাঠদানের নামে এই প্রতিষ্ঠানটি ব্যবহৃত হচ্ছে জামায়াত-শিবিরের স্থানীয় কার্যালয় হিসেবে। অভিভাবকরা আরও বলেন, কর্তৃপক্ষ এবার এসএসসি পরীক্ষার ফি আদায় করেছে প্রায় আট হাজার টাকা করে। পরবর্তীতে উচ্চ আদালত শিক্ষা বোর্ড নির্ধারিত ফি’র বাইরে আদায় করা বাড়তি অর্থ শিক্ষার্থীদের ফেরত দেয়ার নির্দেশ দেয়। সেই টাকা এখনও শিক্ষার্থীরা পেল কিনা তাও খতিয়ে দেখা জরুরী। আবাসিক এলাকায় বাড়ি ভাড়া নিয়ে স্থাপিত এই প্রতিষ্ঠানে ‘সংখ্যালঘু’ পরিবারের ছেলেমেয়েদের ভর্তির সুযোগ খুবই সীমিত অভিযোগ তুলে বলা হয়, ভর্তি পরীক্ষার নামে কৌশলে সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তানদের অযোগ্য দেখানো হয়। বর্তমান দু’চারজন সংখ্যালঘু পরিবারের সন্তান এই স্কুলে পড়ালেখা করলেও তাদের ধর্মীয় পোশাক ও সংস্কৃতি অনুসরণের নামে মানসিকভাবে নির্যাতন করা হয় বলেও অভিযোগ আনা হয়েছে। এদিকে প্রতিষ্ঠান দুটি ঘুরে দেখা যায়, রাজধানীর খিলগাঁওয়ের তালতলার নূরজাহান টাওয়ারের দ্বিতীয় তলার দুটি ফ্ল্যাটে একসঙ্গে কলেজ ও স্কুলের প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে। এর মধ্যে একটি ফ্ল্যাটে পাশাপাশি দুটি রুম কলেজের অধ্যক্ষ ও স্কুলের প্রধান শিক্ষকের জন্য বরাদ্দ। নূরজাহান টাওয়ার ছাড়াও পাশের বিভিন্ন ভবনে ভাড়া করা ক্লাসরুমে প্রতিষ্ঠান দুটির একাডেমিক কার্যক্রম চলছে। অভিযোগের বিষয়ে প্রতিষ্ঠান দুটির একটি তথা কলেজের অধ্যক্ষ মাকসুদ উদ্দিন অবশ্য বলেছেন, এ ধরনের কোন কার্যক্রমের সঙ্গে আমাদের সম্পৃক্ততা নেই। জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গেও তাদের কোন সম্পৃক্ততা নেই। স্কুলের প্রধান শিক্ষকের নাম মোঃ শহীদুল্লাহ। তার সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি। স্কুলের গেট থেকে বলা হয়, স্যার বাইরে। এরপর তার সেল ফোনে কল করা হলে বন্ধ পাওয়া যায়। কার্যক্রম সম্পর্কে স্কুলের কয়েকজন শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তারা কথা বলতে রাজি হননি।
×