ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

ঝলক

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ২০ মার্চ ২০১৫

ঝলক

দেবী শেঠী গরিবের ভগবান কৃষ্ণ ভৌমিক, ব্যাঙ্গালুরু থেকে ফিরে ॥ সাতক্ষীরার আব্দুর রাজ্জাক নিজের আট বছরের ছেলেকে বাংলাদেশের খ্যাতিমান কোন ডাক্তার দেখাতে বাদ দেননি। অনেকটা নিরুপায় হয়ে ছেলেকে নিয়ে ভারতে পাড়ি জমান। নারায়ণন হেলথ হার্ট হাসপাতালে গিয়ে আব্দুর রাজ্জাক জানালেন, সেখানে সাড়ে ৩ লাখ রুপী প্যাকেজ থাকলেও তিনি এক লাখ ২০ হাজার টাকার বেশি দেয়ার সামর্থ্য রাখেন না। অনুনয় বিনয়ও করতে হয়নি তাঁকে। সামর্থ্যরে কথা জানালেই সেখানে অপারেশনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শান্তিনিকেতন গেস্ট হাউসে ময়মনসিংহের বাসিন্দা সাধন সাহা জানালেন, ২২ বছরের ছেলের হার্ট ওপেনহার্ট সার্জারিতে সাড়ে ৩ লাখ টাকা প্যাকেজে এক লাখের বেশি দিতে পারেননি তাঁরা। এমন উদাহরণ একটি বা দুটি নয়, ভূরি ভূরি। এ কথাগুলো কেবল উপমহাদেশের একজনের বেলাতেই চলে। তিনি হৃদয়ের ঈশ্বরখ্যাত চিকিৎসক উপমহাদেশের হার্ট চিকিৎসায় কিংবদন্তি দেবী প্রসাদ শেঠী। তাঁর এক অদ্ভুত সম্মোহনী শক্তি রয়েছে। ব্যবহারেই যেন অর্ধেক রোগমুক্তি। দেখেই বলে দিতে পারেন রোগীর কী অবস্থা। আর গরিবের কাছে তিনি ডাক্তার নন, সাক্ষাত ভগবান। দেবী শেঠী বিশ্বের খ্যাতনামা হার্ট সার্জনই নন- চিকিৎসা সেবায় এক বিরল নক্ষত্র। গরিব রোগীদের কাছে তিনি সাক্ষাত ভগবান। ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরোর ব্রহ্মাচন্দ্রপুর শিল্প এলাকায় শেঠীর নারায়ণন হেলথ হার্ট হাসপাতালটি অবস্থিত। দেবী শেঠীর যশ ও মানবিকতায় এ হাসপাতালটি আজ আন্তর্জাতিকভাবে ব্যাপক খ্যাতি অর্জন করেছে। নারায়ণন হেলথ হার্ট হাসপাতালটি কলকাতা থেকে এক হাজার ৯৮৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ হাসপাতালে যেতে ট্রেন ভেদে ২৮ ঘণ্টা থেকে ৩৬ ঘণ্টা সময় লাগে। কলকাতার হাওড়া স্টেশন থেকে ট্রেনে পশ্চিমবঙ্গ, উড়িষ্যা, অন্ধ্র, তামিলনাড়ু প্রদেশ হয়ে কর্ণাটকের রাজধানী ব্যাঙ্গালুরো যশোবন্তপুর স্টেশনে নামতে হয়। ওখান থেকে ম্যাজিস্টিক বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে ভলভো বাসে ৩৭ কিলোমিটার দূরে দেবী শেঠীর হাসপাতালে পৌঁছা যায়। যশোবন্তপুর স্টেশন থেকে ট্যাক্সি বা সিএনজিতেও যাওয়া যায়। দেবী শেঠীর হাসপাতালের গেটে ঢুকতেই আগের দিনের দীর্ঘ ভ্রমণের ক্লান্তি যেন উবে যায়। একই ছাদের তলে মসজিদ, মন্দির, গীর্জা ও গুরুদুয়ারে যে যার মতো প্রার্থনা করার অভূতপূর্ব দৃশ্য শরীর-মনকে চাঙ্গা করে। মূল ভবনে ঢোকার পর বাংলায় অনুসন্ধান লেখা দেখেও বেশ ভালই লাগে। অনুসন্ধানের বাঙালী মেয়েকর্মী রোগী ও স্বজনদের পাসপোর্টের ফটোকপি নিয়ে রোগীর ফাইল হাতে ধরিয়ে শিশু কার্ডিওলজি বিভাগে পাঠান। শিশু কার্ডিওলজি বিভাগের মহিলাকর্মী রোগীর রেজিস্ট্রেশন করেন। নতুন শিশু রোগীদের ১শ’ রুপী, বয়স্কদের ৫০০ রুপী আর পুরনো শিশু রোগীদের রেজিস্ট্রেশন ফ্রি। ওই মহিলাকর্মী এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তিনি রোগী পরীক্ষা করে ইকো, ইসিজি, এক্সরে করার পরামর্শ দেন। তিনটি পরীক্ষার ফি মাত্র এক হাজার ৭২০ রুপী। পরীক্ষার পর মহিলা কর্মীরা বড় ডাক্তারের কাছে নিয়ে যান। তিনি পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে দেবী শেঠীর কাছে রেফার করেন। আন্ডারগ্রাউন্ডে দেবী শেঠীর সিরিয়াল দিতে গেলে পিএস কিছুক্ষণের মধ্যেই শিশুদের দেখানোর কথা জানান। কিন্তু ৮-১০ মিনিটের মধ্যেই পিএস হাতজোড় করে মাফ চান। ৪ দিনের শিশুর ওপেন হার্ট সার্জারির জন্য শেঠীকে ওটিতে ঢুকতে হচ্ছে; তাই সব সিডিউল বাতিল করতে হচ্ছে। এ জন্য দেবী শেঠী সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে সকাল ৮টায় শিশুদের দেখবেন বলে জানান। হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, শিশু কার্ডিয়াক সার্জারিতে দেবী প্রসাদ শেঠী ছাড়াও চিন্নাস্বামী রেড্ডি, কলিং জন, ডিবেশ ত্রিবেদী, প্রভাকথা রেশমী, প্রদীপ কৌশিক, রবী ভার্মা, শেখর রাও, ভিশাল ভি ভেন্ডে এবং বয়স্ক কার্ডিও বিভাগের দেবী প্রসাদ শেঠী ছাড়াও হার্ট সার্জন রয়েছেনÑ এভরি মেথিউ, জয়রাজ, জুলিয়াস পুনেন, ধাদেক্স, সামজয়া বাছাভারাজ, পিভি রাও, কীরণকে, প্রবীন কুমার, রাঘভেন্দ মুর্ত্তী, রানাম শেষাদী, রবি ভাযন জি পাটিল, রবীন্দ্র শেঠী, শক্তিভেল কুমার রাসান, শ্যাম আসক্ত, ভিনেথ মহাজন ও ভিভেক্ট ধারোয়ার। পরদিন সকাল ৮টায় দেবী শেঠীর পিএসের কাছে ফাইল জমা দিলে দ্বিতীয় তলায় নিয়ে যান। কয়েক মিনিট পরই দেবী শেঠীর চেম্বারে নিয়ে গেলেন। সেখানে গিয়ে দেখা গেল ঢাকা থেকে আগত বয়স্ক রোগীকে অভয় দিয়ে শেঠী বলছেন, আপনার সার্জারি লাগবে না। ওষুধ খান এক বছর পর বেড়িয়ে যাবেন। এ কথা শুনে রোগী কেঁদে ফেললেন। ঢাকার ডাক্তাররা তাঁকে হার্ট অপারেশনের পরামর্শ দিয়েছিলেন। শিশু পার্থর রিপোর্ট দেখালে তিনি জানালেন, এখন বাচ্চার অপারেশন লাগবে না। ঢাকার ডাক্তাররা যখন অপারেশনের কথা বলবে তখন চলে আসবেন। দেবী শেঠীকে দেখলাম তিনি রোগীর সঙ্গী সবার সঙ্গেই কথা বলেন। শেঠী কলকাতার বিড়লা হার্ট হাসপাতালে দীর্ঘদিন চাকরি করেছেন। এক দরিদ্র রোগীর ওপেন হার্ট অপারেশনে চার্জ মওকুফ নিয়ে কর্তৃপক্ষের আচরণে তিনি ক্ষুব্ধ হন। তাৎক্ষণিক চাকরি থেকে পদত্যাগ করেন। তৎকালীন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতিবসু তাঁকে ফোন করে পশ্চিমবঙ্গ না ছাড়ার অনুরোধ করেন। পশ্চিমবঙ্গে হার্ট হাসপাতাল প্রতিষ্ঠায় তিনি সরকারীভাবে জমি বরাদ্দের প্রস্তাব দেন। এ নিয়ে সে সময় পশ্চিমবঙ্গের মিডিয়ায় ব্যাপক ঝড় ওঠে। তিনি ব্যাঙ্গালুরো ফিরে যান। ২০০১ সালে ব্রহ্মাচন্দ্রপুর নারায়ণন হৃদয়ালয় নামে এ হাসপাতালটি গড়ে তোলেন। এটি এখন নারায়ণন হেলথ। প্রতিষ্ঠার সময় ২২৫ শয্যা থাকলেও এখন সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ হাজার ৫০০। তিনি নারায়ণন হাসপাতালের পেছনে বিশাল হেলথ সিটি গড়ে তুলেছেন। বনমেরো, কিডনি, লিভার, ট্যান্সপ্লান্ট থেকে শুরু করে সব ধরনের চিকিৎসা এখানে করা হয়। তিনি ভারতের অন্যতম বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা গ্রুপের কর্ণধর। তাঁর মালিকানায় ব্যাঙ্গালুরো, আহমেদাবাদ, বহরমপুর, ধারোয়াদ, ধবনগিরী, দুর্গাপুর, গোহাটী, হায়দরাবাদ, জয়পুর, জামশেদপুর, কলার, কলকাতা, কুপম, মাইশুর, রায়পুর, সিমলাসহ ১৭টি স্থানে ২৯টি হাসপাতাল গড়ে উঠেছে। তাঁর হাসপাতালে ৪ থেকে ৬টি বিল্ডিং রয়েছে। প্রত্যেকটিতে ২ থেকে ৫ হাজার বেড রয়েছে। হাসপাতাল ঘুরে দেখা গেছে, তিনি প্রয়োজন ছাড়া কোন টেস্ট বা সার্জারি করেন না। টাকা ফুরিয়ে গেলে বাংলাদেশী রোগীদের দেশে ফেরার টাকাও তিনি দিয়ে থাকেন। এ যেন এক অবিশ্বাস্য বিরল সেবা করে যাচ্ছেন দেবী শেঠী। ভারত, বাংলাদেশ, নেপাল, ভুটান, পাকিস্তান, শ্রীলঙ্কা, আফ্রিকাসহ খোদ আমেরিকান (যাদের স্বাস্থ্য বীমা নেই) রোগীরা প্রতিদিন দেবী শেঠীর হাসপাতালে ভিড় জমাচ্ছেন। তিনি পৃথিবীর অন্যতম হার্ট সার্জনই নন, মানবিকতায় আজ ভারতীয়দের কাছে ভগবান শেঠী। দেবী শেঠী তিন সন্তানের জনক। স্ত্রী গীতা শেঠী আইনজীবী। ছেলে সদানন্দ শেঠী, মেয়ে সন্দিতা শেঠী ও সাদিতা শেঠী তিনজনই ডাক্তার। বাঙালীর হৃদয়ে বিশ্ব সুখী দিবসের দোলা সমুদ্র হক ॥ আজ আন্তর্জাতিক সুখী (হ্যাপিনেস) দিবস। দিনটি নীরবে নিভৃতে এসে নীরবেই চলে যায়। জাতিসংঘ ঘোষিত প্রচারের দিবসগুলোর মতো ঘটা করে পালন করা হয় না এ দিনটি। অনেকে হয়ত জানেও না দিবসটির নাম। তবে বাংলাদেশের মানুষের কাছে এ দিনটি তাৎপর্যবহ। কেননা দক্ষিণ এশিয়ার বঙ্গীয় ব দ্বীপের বাংলাদেশের মানুষ তার অপার সম্ভাবনা ও নিসর্গের বৈচিত্র্য নিয়ে অনেক সুখী। বিশ্বে বাংলাদেশেরই মানুষ গর্ব করে বলতে পারে তারা অল্পতেই সুখী। গেল প্রায় সাত বছরে এ দেশের মানুষের যে অগ্রগতি হয়েছে, তা গত প্রায় অর্ধ শতাব্দীতেও হয়নি। গ্রামীণ জনপদে আজ অতীতের সেই মাটির কাঁচা সরু রাস্তা সহজে চোখেই পড়ে না। নিভৃত গ্রামের মানুষও এখন বাস ও যন্ত্রচালিত যানবাহনে চলাচল করে। দেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামে নানাভাবে বিদ্যুত পৌঁছেছে। সরকারের বিদ্যুত উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের পাশাপাশি সৌরবিদ্যুত (সোলার প্যানেল) গিয়েছে। আজ কৃষক তাঁর ঘরের দুয়ারেই কৃষি উপকরণ পান। বিদ্যুতায়িত গ্রামে এখন কুঁড়েঘর চোখে পড়ে কম। রঙিন টিভি কেবল নেটওয়ার্কসহ দেখা যায় গৃহস্থ ও কিষান বাড়িতে। ফ্রিজ ওভেনও পৌঁছেছে। সেল (মোবাইল) ফোন এখন রীতিমতো বিপ্লব। বিশ্ব এখন আমাদের গ্রামের মানুষেরও হাতের মুঠোয়। প্রত্যেক মানুষ তার নিজস্ব আঙিনায় সুখ খুঁজে নিয়েছে এবং খুঁজে পেয়েছে। একটা সময় নদী তীরের ও চরগ্রামের মানুষের দুঃখের সীমা ছিল না। আজ তারাও অনেক সুখে আছে। এভাবেই আজকের দিনটি সুখী দিবস হয়ে মানুষের হৃদয়ের গভীরে পালিত হচ্ছে। কুকুরের মধুর প্রতিশোধ আচমকা ধাক্কা দিয়েই চলে গিয়েছিল গাড়িটা। চিনে রেখেছিল সে। ঠিক সময় বুঝে দলবল নিয়ে এক ব্যক্তির শখের গাড়িটি নষ্ট করল কুকুর! এভাবেই মধুর প্রতিশোধ নিল কুকুর। ঘটনাটি ঘটেছে চীনে। পুরো ঘটনাটি ক্যামেরাবন্দী করা হয়েছে। ভিডিওতে দেখা যায়, একটি লাল গাড়িকে দু’তিনটি কুকুর মিলে কামড়ে, দুমড়ে একেবারে ক্ষতবিক্ষত করে দিচ্ছে। বেশ কিছুক্ষণ পর বিজয়ীর মতো সদলবলে ফিরে গেল তারা। কেন? গাড়ির মালিক জানিয়েছেন, কয়েক দিন আগে চীনের চংকিং শহরে গাড়ি চালানোর সময় রাস্তার একটি কুকুরকে ধাক্কা মারেন তিনি। কুকুরটি তখন ঘুমোচ্ছিল। গাড়ির ধাক্কায় আকস্মিক ঘুম ভেঙ্গে যায় কুকুরটির। কিন্তু গাড়ির মালিক ভাবতেও পারেননি কুকুরটি তাঁকে ও তাঁর গাড়িটি চিনে রাখবে এবং পরবর্তীতে প্রতিশোধ নেবে।
×