ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

আহত শতাধিক

হবিগঞ্জে পুণ্যস্নান ও মেলায় জুয়াখেলা নিয়ে সংঘর্ষ পুলিশের গুলি ২ জনের মৃত্যু

প্রকাশিত: ০৭:২৮, ১৯ মার্চ ২০১৫

হবিগঞ্জে পুণ্যস্নান ও মেলায় জুয়াখেলা নিয়ে সংঘর্ষ পুলিশের গুলি ২ জনের মৃত্যু

নিজস্ব সংবাদদাতা, হবিগঞ্জ, ১৮ মার্চ ॥ হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলার পল্লী করাবের বেলশ্বরী (সুতাং) নদী ও সংলগ্ন এলাকায় হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব পুণ্যস্তান ও মেলায় জুয়াখেলায় বাধা দেয়া নিয়ে এবং গ্রামবাসী ও পুলিশের সংর্ঘষ এবং গুলিবর্ষণের ঘটনায় এক মহিলাসহ অন্তত দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। এরা হলেন- সদর উপজেলার অষেঢ়া ফান্ডাইলের বাসিন্দা মধু মিয়ার স্ত্রী আরিশা খাতুন (৫৫) ও লাখাই উপজেলার করাব গ্রামের ক্ষঙ্কার বাড়ির বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম (৪৯)। রফিকুল বুধবার রাত ১০টার দিকে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মারা যায়। এ ঘটনায় আহত হয়েছে অন্তত শতাধিক লোক। এরমধ্যে সিলেট ও হবিগঞ্জের বিভিন্ন বেসরকারী ক্লিনিকে ভর্তি তিনজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। অন্যদিকে বৃদ্ধা আরিশা সন্ধ্যায় ওই স্থানে সংর্ঘষ চলাকালে তাঁর এক পুত্রকে পুলিশের বেধড়ক পিটুনির দৃশ্য দেখে হার্ট এ্যাটাকে মারা যান। স্থানীয় গ্রামবাসী ও পুণ্যস্থানে আসা সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন ও গ্রামবাসী জানান, বিকেল সোয়া চারটার পর ওই ঘটনার সূত্রপাত ঘটে। জানা গেছে, প্রতি বছর এই এলাকায় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বেলশ্বরী (সুতাং) নদীতে পুণ্যস্তানে অংশ নেন। আর এই উৎসবের আশপাশে বসে বিশাল মেলা। এতে একশ্রেণীর লোক মিলিত হয় জুয়াসহ নানা অসামাজিক কার্যকলাপে। তার ভাগ-বাটোয়ারা পায় একশ্রেণীর অসাধু পুলিশ কর্মকর্তা। ফলে এসব বন্ধে এবার করাব গ্রামবাসী সোচ্চার হয়ে একাধিক সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তা প্রতিরোধের ঘোষণা দেয়। বুধবার ভোর থেকে এই স্থানে উৎসব ও মেলা শুরু হলে তাতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নারী-পুরুষের সমাগম ঘটে। এমনকি কয়েক শ’ দোকানপাটও বসে। এ সময় করাব গ্রামের মানুষ সংঘবদ্ধভাবে ওই সব অসামাজিক কার্যকলাপ বন্ধে উৎসবস্থল ও মেলা প্রাঙ্গণে তীক্ষè দৃষ্টি রাখে। তবুও বিচ্ছিন্নভাবে দু-একটি জুয়ার বোর্ড বসা ও মহিলাদের গলা থেকে স্বর্ণের চেন ছিনতাইয়ের অভিযোগ ওঠে। এসব অভিযোগের পক্ষ-বিপক্ষ হলেও লাখাই থানার বিতর্কিত এসআই মহরম ও বাছিতের নেতৃত্বে পুলিশের পৃথক গ্রুপ হিন্দু নারীসহ বেশ কয়েকজনকে দুপুরের দিকে ধরে নিয়ে যায়। এ নিয়ে কিছুটা উত্তেজনা চলছিল। বিকেল চারটার দিকে বেলশ্বরী (সুতাং) নদীর উল্টোপাড় সদর উপজেলার বেকিটেকা এলাকা থেকে এসআই মহরমের নেতৃত্বে লাখাই থানা পুলিশ দুই যুবককে মারধর এবং পরবর্তীতে ধরে নিয়ে যায়। এ খবর পেয়ে বেকিটেকা এলাকা থেকে উত্তেজিত লোকজন লাখাই থানা পুলিশকে ধাওয়া করে। এ খবর পেয়ে হবিগঞ্জ থেকে অতিরিক্ত পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে বেলশ্বরী উৎসব ও মেলায় থাকা শত শত নারী-পুরুষের ওপর অতর্কিতে টিয়ারশেল নিক্ষেপ ও শটগানের গুলি ছুড়লে বহু লোক আহত হয়। পরবর্তীতে লাখাই থানার ওসি মোজাম্মেলের নেতৃত্বে একদল পুলিশ করাব গ্রামবাসী ও মেলায় আগত লোকজনের ওপর গ্যাস নিক্ষেপসহ নানা আইন প্রয়োগ করছে বলে অভিযোগ জনতার। তবে এ প্রসঙ্গে পুলিশের একাধিক কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও তারা সুস্পষ্ট কোন বক্তব্য দেয়া থেকে বিরত রয়েছেন।
×