ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

এডিপি বাস্তবায়নে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় পিছিয়ে

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ১৯ মার্চ ২০১৫

এডিপি বাস্তবায়নে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় পিছিয়ে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচী (এডিপি) বাস্তবায়নে বেশি বরাদ্দ পাওয়া ১০ মন্ত্রণালয় ও বিভাগ পিছিয়ে রয়েছে। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগ গড়ে মোট বরাদ্দের ৩৬ দশমিক ৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করতে পেরেছে চলতি ২০১৪-১৫ অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে। অর্থবছরে তাদের ৬০ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এর মধ্যে জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ব্যয় হয়েছে ২৩ হাজার ৭৮৩ কোটি টাকা। পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের বাস্তবায়ন পরিবীক্ষণ ও মূল্যায়ন বিভাগের (আইএমইডি) প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। প্রতিবেদনে দেখা গেছে, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার। এর মধ্যে ১০টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ৬০ হাজার ৮৯২ কোটি টাকা; যা মোট এডিপির ৭৫ দশমিক ৮১ শতাংশ। স্থানীয় সরকার বিভাগে (থোক বরাদ্দসহ) বরাদ্দ দেয়া হয় সর্বোচ্চ ১৩ হাজার ৩৮০ কোটি টাকা। এর মধ্যে প্রথম ৮ মাসে উন্নয়ন প্রকল্পে এই বিভাগ ব্যয় করেছে ৭ হাজার ২০ কোটি টাকা। অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৫২ শতাংশ এডিপি বাস্তবায়ন করেছে বিভাগটি। এছাড়া বেশি বরাদ্দ পাওয়া অন্য কোন মন্ত্রণালয় বা বিভাগ প্রত্যাশিত সফলতা দেখাতে পারেনি। প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, এবারের এডিপিতে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৩ হাজার ৪৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। কিন্তু জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এই মন্ত্রণালয়ের ব্যয় হয়েছে ৯৬০ কোটি টাকা; যা মোট বরাদ্দের মাত্র ২৮ শতাংশ। শতভাগ ব্যয় করতে হলে অর্থবছরের বাকি ৪ মাসে ২ হাজার ৫১১ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে মন্ত্রণালয়টিকে। প্রায় ৩ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষা মন্ত্রণালয় আলোচ্য সময়ে ব্যয় করেছে ১ হাজার ৬৩২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৪৪ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়টি। প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে বরাদ্দ দেয়া হয় ৫ হাজার ৬০৫ কোটি টাকা। জুলাই-ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময়ে মন্ত্রণালয়টি ব্যয় করেছে ২ হাজার ৪০৮ কোটি টাকা; যা মোট বরাদ্দের ৪৩ শতাংশ। সড়ক, পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ আছে ৪ হাজার ২৯৯ কোটি। এর বিপরীতে বিভাগটি ব্যয় করেছে মাত্র ১ হাজার ৬৭২ কোটি টাকা। অর্থাৎ বরাদ্দের ৩৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে বিভাগটি। এবারের এডিপিতে ৪ হাজার ২৯৪ কোটি টাকা বরাদ্দ আছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে। চলতি অর্থবছরের প্রথম ৮ মাসে মন্ত্রণালয়টি ব্যয় করেছে ১ হাজার ৫৫৮ কোটি টাকা। মন্ত্রণালয়টি এই সময়ে বরাদ্দের ৩৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। বিদ্যুত বিভাগের অনুকূলে ৯ হাজার ২ কোটি বরাদ্দ থাকলেও প্রথম ৮ মাসে ব্যয় হয়েছে ৩ হাজার ২২৬ কোটি টাকা। বরাদ্দের ৩৬ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে বিভাগটি। আর সেতু বিভাগের অনুকূলে বরাদ্দ রয়েছে ৮ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা। ৮ মাসে বিভাগটি অর্থ ব্যয় করেছে ২ হাজার ৮৭৫ কোটি টাকা। বিভাগটি এই সময়ে বরাদ্দের ৩২ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে। প্রায় ৩ হাজার ৯৯২ কোটি টাকা বরাদ্দ পাওয়া জ্বালানি ও খনিজসম্পদ বিভাগ আলোচ্য সময়ে অর্থ ব্যয় করেছে ১ হাজার ১৮৬ কোটি টাকা; যা বরাদ্দের ৩০ শতাংশ। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুকূলে ৪ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা বরাদ্দ রয়েছে। তবে প্রথম ৮ মাসে অর্থ ব্যয় হয়েছে ১ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা। এ সময়ে বরাদ্দের মাত্র ২৯ শতাংশ অর্থ ব্যয় করেছে মন্ত্রণালয়টি। শতভাগ অর্থ ব্যয় করতে হলে অর্থবছরের বাকি ৪ মাসে ৩ হাজার ৭০ কোটি টাকার প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে হবে রেলপথ মন্ত্রণালয়কে। এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের প্রধান অর্থনীতিবিদ জাহিদ হোসেন বলেন, বেশি বরাদ্দ পাওয়া মন্ত্রণালয় ও বিভাগগুলো এডিপি বাস্তবায়নে প্রত্যাশিত সফলতা দেখাতে না পারায় আমরা অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে যাব। এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অধীনে জ্বালানি, বিদ্যুত, শিক্ষা ও সড়কের মতো গুরুত্বপূর্ণ বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন হয়ে থাকে। তাই তারা এডিপি বাস্তবায়নে সফলতা দেখালে দেশে বিনিয়োগ বাড়ত। পাশাপাশি ব্যবসা-বাণিজ্য ভাল হতো। ফলে দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতো। তিনি আরও বলেন, এসব মন্ত্রণালয় ও বিভাগের এডিপি বাস্তবায়ন অগ্রগতি লাভের বিষয়ে মনিটরিং করার কথা থাকলেও আসলে তা করা হয় না। গত ৮ মাসের এডিপি বাস্তবায়নের অগ্রগতি দেখে তা বোঝা যায়। উল্লেখ্য, চলতি অর্থবছরে এডিপির আকার ছিল ৮০ হাজার ৩১৫ কোটি টাকার। পরে সংশোধিত এডিপি আকার ধরা হয় ৭৫ হাজার কোটি টাকার।
×