ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

উৎসব না বিদায়

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১৯ মার্চ ২০১৫

উৎসব না বিদায়

মিথুন আশরাফ ॥ আজ যখন মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে নয়টায় ভারতের বিপক্ষে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে খেলতে নামবে বাংলাদেশ, তখন কঠিন পরীক্ষাই দিতে হবে টাইগারদের। দলটি ভারত বলেই সেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিক, মাহমুদুল্লাহদের। এবার বিশ্বকাপে যে মাঠগুলোতে খেলা হচ্ছে, মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ড (এমসিজি) সেই মাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম বড় মাঠ। এ মাঠে ব্যাটে বল আসে। ব্যাটসম্যানরা ভুল না করলে বড় ইনিংসও হয়। সেই সঙ্গে যে দল আগে ব্যাট করে ৩০০ রানের বেশি করতে পারে, তারাই ম্যাচ জিতে। জিততে হলে তাই একটি শর্তই যেন এ মাঠে প্রযোজ্য। সেটি কী? আগে ব্যাট কর এবং ৩০০ রানের বেশি কর। প্রতিপক্ষ সেই রানের চাপে পড়ে হার মানবেই। এবার বিশ্বকাপে এ মাঠে তিনটি ম্যাচে যা হয়েছেও। তাহলে তো আজ বাংলাদেশ টস জিতে আগে ব্যাট করে তামিম, ইমরুল, সৌম্য, মাহমুদুল্লাহ, সাকিব, মুশফিক, সাব্বিরদের ব্যাটিং নৈপুণ্যে শর্ত পূরণ করলেই আরেকটি ভারত বধ হয়ে যায়। পারবে বাংলাদেশ তা করতে? দলটি ভারত বলেই কোন নিশ্চয়তা মিলছে না। যদি ভারতই আগে ব্যাট করে মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন, সাকিবদের বোলিংকে তুলোধুনো করে শর্ত পূরণ করে ফেলে। তাহলে তো কোয়ার্টার ফাইনালই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ হতে পারে। এখান থেকে বিদায় নিতে পারে বাংলাদেশ। ভারত উঠে যেতে পারে সেমিফাইনালে। এর বাইরেও শামি, যাদব, শর্মা, অশ্বিন, জাদেজাদের বোলিংকে নাস্তানাবুদ বানিয়ে বাংলাদেশ যদি ৩০০ রান বা তার কাছাকাছি রানও করে ফেলে, তাহলেও যে জিতে যাবে; এমন নিশ্চয়তাও নেই। ভারত দলটি যে ব্যাটিংয়ে যে কোন দলের চেয়ে শক্তিশালী। দলটিতে শিখর ধাওয়ান, রোহিত শর্মা, বিরাট কোহলি, আজিঙ্কা রাহানে, সুরেশ রায়না, মহেন্দ্র সিং ধোনির মতো ব্যাটসম্যানরা আছেন। প্রতিপক্ষ যত রানই করুক, তা অতিক্রম করার ক্ষমতা আছে ভারতের। তাহলে কী ভারতকে হারানোই যাবে না। যাবে। বাস্তবতায় থেকে সেই পথ দেখাচ্ছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজাই। বলেছেন, ‘আসলে ভারতের সঙ্গে কত রান করলে সুবিধা হবে এটা বলা খুব কঠিন। অন্যতম ব্যাটিং শক্তিশালী দল ভারত। তারা সব সময় রান চেজ করতে পছন্দ করে। আমার বিশ্বাস সবমিলিয়ে যদি আমরা ভাল খেলি, সে ক্ষেত্রে কত রান এটা বিষয় না। হয় তো দেখা গেল ২৭০-২৮০ রান করেও ভাল বোলিং করতে পারলে আমরা ম্যাচটা জিততে পারি। ভাল খেললে অবশ্যই আমাদের সুযোগ থাকবে।’ তার মানে মাশরাফি চাচ্ছেন আগে ব্যাট করতে এবং তখন মাশরাফি, রুবেল, তাসকিন, সাকিবদের বোলিং কল্যাণে জেতারও আশা করছেন। মাশরাফি বোলারদের দায়িত্বের কথা বলেছেনও, ‘আমাদের অবশ্যই ভাল স্কোর গড়তে হবে। অথবা ওরা (ভারত) যে স্কোর দেবে জিততে গেলে তা চেজ করতে হবে। এ ছাড়া বোলারদেরও চেষ্টা থাকবে যতটা সম্ভব অল্প রানে ভারতকে বেঁধে ফেলা যায়। এ কারণে আমি বলব জিততে গেলে ব্যাটিং-বোলিং ২ টাতেই চ্যালেঞ্জ নিতে হবে। তবে যে ধরনের উইকেটে খেলা হবে তাতে বোলারদের চ্যালেঞ্জটা একটু বেশিই থাকবে।’ দুই দলই এবার বিশ্বকাপে অস্ট্রেলিয়ার সবচেয়ে বড় মাঠগুলোর মধ্যে অন্যতম মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে একটি করে ম্যাচে খেলেছে। দুটি ম্যাচই হয়েছে গ্রুপ পর্বের। দক্ষিণ আফ্রিকাকে দুমড়ে মুছড়ে দিয়ে ১৩০ রানের বড় জয় তুলে নিয়েছে ভারত (প্রথমে ব্যাট করে ৩০৭ রান করে ভারত)। আর শ্রীলঙ্কার কাছে ৯২ রানের বড় ব্যবধানে হেরেছে বাংলাদেশ (প্রথমে ব্যাট করে ৩৩২ রান করেছে শ্রীলঙ্কা)। দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাট করা দল হেরেছে। বোঝাই যাচ্ছে, ম্যাচটিতে টস অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মাশরাফি তা মনে করছেন না। বলেছেন, ‘টসটা আমার কাছে মনে হয় না এতটা প্রভাব ফেলবে। আসলে টসের উপর নির্ভর করে খেলা যায় না। তাই এটা নিয়ে ভেবে বেশি লাভ নেই।’ অবশ্য স্বপ্নটা যে আরও বড় হয়ে গেছে, তা মানলেন মাশরাফিও, ‘স্বপ্নটা সবাইকেই ছুঁয়ে যায়। সত্য কথা বলতে স্বপ্নের শেষও নেই। প্রথমে আমাদের স্বপ্ন ছিল কোয়ার্টার ফাইনালে যাওয়ার। এখন স্বপ্ন সেমিফাইনালে যেতে পারব কি না। এগুলো আসবে এটা খুব স্বাভাবিক। আমরা আমাদের খেলা নিয়ে মনযোগী। ভাল খেলতে পারলে অবশ্যই আমাদের সুযোগ থাকবে জয়ের।’ ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে বধ করা গেছে। সেই জয় কী প্রেরণা দিচ্ছে না। মাশরাফি সেইসব নিয়ে ভাবতেই রাজি নন, ‘সবাই ভাল খেলছে তাই মোটিভেটেড আছে। তরুণ খেলোয়াড়রা পারফর্ম করছে। ২০০৭ সালের ভারত দলও অনেক ভাল ছিল। অনেক গ্রেট ক্রিকেটার ছিল। শচীন ছিল, সৌরভ গাঙ্গুলী ছিল। শেবাগও ছিল। আসলে আমি মিলাতে চাই না; কারণটা হচ্ছে এগুলো মাঠের পারফর্মেন্সে কোন প্রভাব ফেলে না। এটা শুধু সুন্দর স্মৃতি। কিন্তু মাঠে এটা কোন সাহায্যই করে না। আমি মনে করি আমাদের উচিত হবে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যেভাবে খেলেছি ঠিক সেভাবেই পারফর্মেন্স করা।’ সত্যিই তাই? মাশরাফি তা নিয়ে না ভাবলেও ভারত ক্রিকেট দল কিন্তু ঠিকই ভাবছে। তাই তো বাংলাদেশ নিয়ে গভীর ভাবনাতেও মগ্ন তারা। বাংলাদেশ যে নির্দিষ্ট দিনে, ভাল একটি দিনে প্রতিপক্ষ যেই হোক, হারিয়ে দিতে পারে। যে হার এর আগে বিশ্বকাপেই হজমও করেছে ভারত। তাই তো ভারত অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনিই বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘চাপই অনুভব করছি। তবে আমাদের জন্য এটা খুব ভাল দিক যে, ছেলেরা সবাই চাপ সামলাতে অভ্যস্ত।’ এই চাপই না আবার কোনভাবে ভারতকে হারিয়ে দেয়। তাহলেই তো বাংলাদেশ জিতে সেমিফাইনালেও উঠে যাবে। ভারতের দুর্বলতা, ত্রুটিগুলো ভালভাবেই পর্যালোচনা করা হচ্ছে। একটি বিষয়ও সামনে চলে আসছে, জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে ভারতের ম্যাচেই দেখা গেছে; জিম্বাবুইয়ে ২৮৭ রান করার পর একটু ভাল বোলিং করে ভারতকে চাপে ফেলে দিয়েছিল। বাংলাদেশের তো জিম্বাবুইয়ের চেয়েও ভাল বোলিং লাইনআপ। মাশরাফি যেন ভারতকে হারাতে বার বার সেইদিকেই বেশি মনোযোগী হচ্ছেন। বলেছেনও, ‘অবশ্যই আমরা দেখার চেষ্টা করছি কোথায় তাদের ত্রুটিগুলো আছে। আমরা তেমন একটা পরিকল্পনাও তৈরি করেছি। সেই পরিকল্পনা অনুযায়ীই খেলতে চাই। আসলে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করাটাই মূল বিষয়। সবাই নিজেকে নিয়ে পরিকল্পনা করছে। নিজেদের সমস্যাগুলো বের করার চেষ্টা করছে। আমার বিশ্বাস পরিকল্পনা অনুযায়ী খেলতে পারলে ফলটা ইতিবাচক হবে।’ শক্তিশালী ভারত এখন ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ের দ্বিতীয় স্থানে আছে। বাংলাদেশ আছে নয় নম্বরে। এবার বিশ্বকাপেও গ্রুপ ‘বি’ থেকে ধোনির দল দেখিয়ে দিয়েছে কতটা শক্তিশালী দল তারা। সেই তুলনায় বাংলাদেশ কোয়ার্টার ফাইনালে খেলা নিশ্চিত করলেও গ্রুপ ‘এ’ থেকে চতুর্থ দল হিসেবেই খেলছে। র‌্যাঙ্কিং, শক্তিমত্তা-এসব একদিনের ক্রিকেটে নির্দিষ্ট দিনে অনেক সময় উড়েই যায়। সেই দিনটি আজই হোক এবং বাংলাদেশই জিতুক। ভারত বধ করে উঠে যাক সেমিফাইনালে। এটাই এখন প্রত্যাশা।
×