ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

ব্যাংকের অযৌক্তিক চার্জ নেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ আসছে

প্রকাশিত: ০৫:৪২, ১৯ মার্চ ২০১৫

ব্যাংকের অযৌক্তিক চার্জ নেয়ার বিষয়ে কঠোর নির্দেশ আসছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংকের অযৌক্তিক চার্জ নেয়ার ক্ষেত্রে কঠোর নির্দেশনা আসছে। বিশেষ করে বিদেশী ব্যাংকগুলোর অস্বাভাবিক সার্ভিস চার্জের নিয়ন্ত্রণ করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। আজ বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত ব্যাংকার্স সভায় বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় দিকনির্দেশনা দেবেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গবর্নর ড. আতিউর রহমান। এছাড়া যেসব ব্যাংকের ঋণ ও আমানতের সুদ ব্যবধান এখনও কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশিত সীমার বাইরে রয়েছে সেসব ব্যাংকগুলোকেও সতর্ক করে দেয়া হবে। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে বিকেল ৩টায় গবর্নর ড. আতিউর রহমানের সভাপতিত্বে এ বৈঠক অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। বিশ্বস্ত সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, বিনিয়োগ মন্দায় আমানতের সঙ্গে ঋণের সুদ হারও কমছে। তবে তা প্রত্যাশিত হারের চেয়ে কম। চলতি বছরের জানুয়ারিতে ব্যাংকিং খাতে ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান দাঁড়িয়েছে ৫ দশমিক ০৬ শতাংশীয় পয়েন্ট। এ সময়ে আমানতের গড় সুদ দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ২৬ শতাংশ। আর ঋণের গড় সুদ দাঁড়িয়েছে ১২ দশমিক ৩২ শতাংশীয় পয়েন্ট। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা অনুযায়ী কোন ব্যাংকের স্প্রেড ৫ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে থাকতে পারবে না। অথচ জানুয়ারিতে প্রায় দুই ডজন ব্যাংকের স্প্রেড নির্ধরিত সীমার বাইরে থাকার তথ্য মিলেছে। এ সময়ে সার্বিক ব্যাংকিং খাতে গড় সুদহার ১২ দশমিক ৩২ শতাংশ হলেও বেসিক, প্রিমিয়ার, এক্সিম, ন্যাশনাল, ব্র্যাকসহ নতুন একটি বাদে সব ব্যাংকের গড় সুদহার ১৪ শতাংশীয় পয়েন্টের ওপরে। এসব ব্যাংক কম সুদে আমানত নিয়ে বেশি সুদে কেন অর্থায়ন করছে এ বিষয়ে ব্যাংকগুলোর এমডিদের দৃষ্টি আকর্ষণ করবেন গবর্নর। তিনি সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে ঋণের সুদ যুক্তিসঙ্গত পর্যায়ে নামিয়ে আানতে ব্যাংকগুলোকে নির্দেশ দেবেন বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে। এছাড়া ব্যাংকার্স সভায় ব্যাংকের অযৌক্তিক চার্জ নেয়ার বিষয়ে আলোচনা হবে। বিশেষ করে বিদেশী ব্যাংকগুলোর সার্ভিস চার্জ ইস্যুটি গুরুত্ব পাবে। পাশাপাশি বেসরকারী ব্যাংকের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান-সন্ততিদের চাকরির নিয়োগে সর্বোচ্চ বয়সসীমা ৩২ বছর অনুসরণে ব্যাংক এমডিদের নির্দেশ দেবেন গবর্নর। বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ থেকে এ বিষয়ে অবিলম্বে একটি সার্কুলারও জারি করা হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র। এছাড়াও বড় ঋণগ্রহীতাদের ঋণ পুনঃতফসিল ও ভাল ব্যবসায়ীদের বিশেষ সুবিধা দেয়ার অগ্রগতি নিয়েও আলোচনা হবে। জানা গেছে, বর্তমানে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ এক অঙ্কের ঘরে রয়েছে। আগামীতে খেলাপী ঋণ যাতে এক অঙ্কের ঘরে রাখা যায় সেজন্য নতুন কৌশল নিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর শেষে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ দাঁড়িয়েছে ৫০ হাজার ১৫৬ কোটি টাকা, যা মোট ঋণের ৯ দশমিক ৬৯ শতাংশ; যা সেপ্টেম্বর শেষেও ছিল ৫৭ হাজার ২৯০ কোটি টাকা বা ১১ দশমিক ৬০ শতাংশ। সে হিসেবে তিন মাসের ব্যবধানে খেলাপী ঋণ কমেছে সাত হাজার ১৩৪ কোটি টাকা। যদিও গত এক বছরের ব্যবধানে এ খাতে খেলাপী ঋণ বেড়েছে ৯ হাজার ৫৭৩ কোটি টাকা। জানা গেছে, রাজনৈতিক বিবেচনায় ব্যবসায়ীদের ক্ষতি পুষিয়ে দিতে বিপুল পরিমাণের খেলাপী ঋণ পুনঃতফসিল করার পরও গতবছর ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ বাড়তে থাকায় উদ্বিগ্ন গবর্নর গত ব্যাংকার্স সভায় সব ব্যাংকের এমডিদের খেলাপী ঋণ কমানোকেই প্রধান লক্ষ্য হিসেবে নেয়ার আহ্বান জানান। এজন্য খেলাপী ঋণ আদায়ে সর্বশক্তি প্রয়োগের নির্দেশ দেন তিনি। এ লক্ষ্যে দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতা, দক্ষতা ও দূরদর্শিতা প্রয়োগের ওপর জোর দেন তিনি। এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা বলেন, ব্যাংকিং খাতে ভাবমূর্তি নষ্ট করে খেলাপী ঋণ। কাজেই এটা যত কন্টোলের মধ্যে রাখা যাবে ততই এ খাতের জন্য মঙ্গল। এজন্য ভবিষ্যতে ব্যাংকিং খাতে খেলাপী ঋণ আর যেন বৃদ্ধি না পায় সেজন্য ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন গভর্নর। খেলাপী ঋণ এক অঙ্কের ঘরে নেমে আসায় ব্যাংক এমডিদের ধন্যবাদ জ্ঞাপন করবেন গবর্নর। একই সঙ্গে আগামীতে যাতে তা এক অঙ্কের ঘরেই রাখা যায় খেলাপী ঋণ আদায় জোরদারসহ নতুন ঋণ প্রদানে সতর্কতা অবলম্বনে ব্যাংকগুলোকে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেবেন।
×