ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

সালাহউদ্দিনের সন্ধানে অলিখিত সার্চ কমিটি কাজ করছে

প্রকাশিত: ০৫:৩১, ১৯ মার্চ ২০১৫

সালাহউদ্দিনের সন্ধানে অলিখিত সার্চ কমিটি কাজ করছে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ নিখোঁজ বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধানে অলিখিত সার্চ কমিটি গঠন। সরকারের সবোর্চ্চ পর্যায়ের নির্দেশেই শক্তিশালী সার্চ কমিটি কাজ করছে। ব্যাপক পরিসরে গঠিত কমিটিতে সকল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তারা রয়েছেন। এর বাইরেও বিভিন্ন সংস্থার লোকজনও জড়িত রয়েছে। কমিটির সদস্যরা সালাহউদ্দিন আহমেদকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে যাওয়ার অভিযোগের পর থেকেই কাজ করে যাচ্ছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের সন্ধানে কূটনৈতিক তরফ ছাড়াও দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে যোগাযোগ চলছে। যদিও বুধবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত কোন হদিস জানা যায়নি। এমন পরিস্থিতিতে স্বাভাবিক কারণেই উৎকণ্ঠা বাড়ছে। আজ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে স্বামীর হদিস করতে লিখিতভাবে আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ। বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়া সরকারের কাছে সালাহউদ্দিনকে ফেরত দেয়ার দাবি জানিয়েছেন। যদিও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বরাবরই সালাহউদ্দিনকে আটক বা গ্রেফতার করা হয়নি বলে দাবি করে আসছে। গত ৫ জানুয়ারি থেকে বিএনপির ডাকা দেশব্যাপী লাগাতার অবরোধ সফল করতে অজ্ঞাতস্থান থেকে সালাহউদ্দিন আহমেদের নামে বিবৃতি আসছিল। যদিও সেসব বিবৃতি সত্যি সত্যিই সালাহউদ্দিন দিচ্ছিলেন নাকি অন্য কেউ তার নামে দিচ্ছিলেন সে সম্পর্কে বিস্তর আলোচনা- সমালোচনা রয়েছে। এমন অবস্থার মধ্যে গত ১১ মার্চ সালাহউদ্দিনের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ দাবি করেন, তাঁর স্বামী উত্তরার একটি বাসায় গোপনে অবস্থান করে দলীয় কর্মকা- চালাচ্ছিলেন। গত ১০ মার্চ রাতে ডিবি পরিচয়ে তাঁর স্বামীকে তুলে নিয়ে যাওয়া হয়। স্বামীর হদিস জানতে তিনি হাইকোর্টের শরণাপন্ন হন। আগামী ৮ এপ্রিল এ সংক্রান্ত শুনানি রয়েছে। নিখোঁজের এক সপ্তাহ পরেও হদিস না মেলায় সালাহউদ্দিনের পরিবারের তরফ থেকে চরম উৎকণ্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে। সালাহউদ্দিন আহমেদের স্ত্রী হাসিনা আহমেদ জনকণ্ঠকে বলেন, ইতোমধ্যেই স্বামীর হদিস করতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করা হয়েছে। তারপরও সরকারের তরফ থেকে তাদের সঙ্গে কেউ যোগাযোগ করেননি। এমনকি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তরফ থেকেও কেউ তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেননি। কেন যোগাযোগ করা হচ্ছে না, তা অবশ্য স্পষ্ট নয়। এ ব্যাপারে সরকার যাতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয় এজন্য বৃহস্পতিবার (আজ) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বরাবর আবেদন করব। তিনি ও তাঁর পরিবারের তরফ থেকেও সরকারের বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগের চেষ্টা করা হচ্ছে। গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, সালাহউদ্দিন নিখোঁজের পর পরই সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে একটি সার্চ কমিটি গঠিত হয়। কমিটির সদস্য করা হয়েছে পুলিশ, র‌্যাব, বিজিবিসহ সকল আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এবং এনএসআই, সিআইডি, এসবিসহ সকল গোয়েন্দা সংস্থার চৌকস কর্মকর্তাদের। কমিটির সদস্য সংখ্যা শতাধিক। সদস্যরা দেশ-বিদেশে বিভিন্ন মাধ্যমে সালাহউদ্দিনের হদিস জানার চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি কূটনৈতিকভাবেও বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বিষয়টি নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের যোগাযোগ অব্যাহত। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, নিখোঁজ সালাহউদ্দিনের হদিস করতে রাষ্ট্রযন্ত্র ব্যাপক তৎপর। রাষ্ট্রের প্রতিটি বিভাগের লোকজন বিষয়টি নিয়ে কাজ করছেন। দেশ-বিদেশে নানাভাবে যোগাযোগ চলছে। বিভিন্নভাবে নানা বিষয় নিয়ে পর্যালোচনা চলছে। নজরদারিতে রাখা হয়েছে সালাহউদ্দিনের পরিবারসহ ঘনিষ্ঠ অনেককেই। বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের কতিপয় নেতাকেও। এছাড়া বিভিন্ন জঙ্গী গোষ্ঠী ও অপহরণকারী চক্রের বিষয়েও অনুসন্ধান অব্যাহত আছে। স্বেচ্ছায় আত্মগোপনে থেকে সরকার ও রাষ্ট্রকে বিপাকে ফেলতে বা আন্দোলন চাঙ্গা করতে নিখোঁজের ঘটনা ঘটেছে কিনা সে বিষয়েও পর্যালোচনা ও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। এছাড়া ব্যক্তিগত, পারিবারিক, রাজনৈতিক বা পুরনো কোন শত্রুতা নিখোঁজ হওয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত কিনা সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। আগেই বিদেশে পালিয়ে গিয়ে তার নামে অন্য কেউ বিবৃতি দিত কিনা বা বিবৃতিগুলো সত্যি সত্যিই সালাহউদ্দিনের তরফ থেকে দেয়া হতো কিনা সে বিষয়েও পর্যালোচনা অব্যাহত আছে। যদিও সালাহউদ্দিন আহমেদ নিখোঁজের পর হদিস মেলা যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা মুজিবুর রহমান বা পরিবেশবিষয়ক সংগঠন বেলার নির্বাহী পরিচালক রেজোয়ানা হাসানের স্বামীর মতো ফিরে আসবেন, নাকি যুবলীগ নেতা লিয়াকত হোসেন বা চালকসহ নিখোঁজ ইলিয়াস আলী বা আরেক বিএনপি নেতা চৌধুরী আলমের মতো নিখোঁজই থাকবেন, তা পরিষ্কার নয়।
×