ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অনিশ্চিত!

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ১৮ মার্চ ২০১৫

সোনাদিয়ায় গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ অনিশ্চিত!

আবদুর রাজ্জাক, মহেশখালী ॥ বহুল প্রতীক্ষিত দেশের একমাত্র গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ প্রায় অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের প্রশ্ন সোনাদিয়া গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ কবে আরম্ভ হবে। কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার উপদ্বীপ হিসেবে খ্যাত সোনাদিয়া বর্তমান সরকার তাদের মেয়াদকাল শুরুর দিকে এই গভীর সমুদ্রবন্দরটি নির্মাণ করার কথা ছিল। এ বন্দর নির্মাণের প্রাথমিকভাবে যাছাই-বাচাই করতে সময় লেগেছে ১১ বছর। এই নিয়ে একাধিক কমিটি গঠন করা হয়েছে। গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে একাধিক দাতা সংস্থা অর্থায়নে আগ্রহ প্রকাশ করলেও কমিটির সদস্যদের অবহেলা ও খামখেয়ালিপনার ফলে সরকার সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে না পারায় এখনও পর্যন্ত আলোর মুখ দেখেনি এই প্রকল্পটি। ফলে এলাকাবাসী ও সচেতন মহলের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, প্রতিবছর এই প্রকল্পটি পর্যালোচনা করতে হচ্ছে। প্রাথমিকভাবে ৪৩ হাজার কোটি টাকা ব্যয় ধরা হলেও এখন এর ব্যয় বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৫ হাজার কোটি টাকা। এদিকে একযুগ অপেক্ষা করার পরও কোন অগ্রগতি না থাকায় অর্থায়নে আগ্রহী দাতা সংস্থাগুলো হতাশা প্রকাশ করেছে। যদিও এখনও পর্যন্ত এ প্রকল্পে বিনিয়োগে একাধিক দাতা সংস্থা আগ্রহী বলা হলেও এখন পর্যন্ত সুনির্দিষ্ট কোন প্রস্তাবনা পাওয়া যায়নি। সর্বশেষ তথ্য অনুসারে জানা গেছে, জুলাই মাসে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে নেদারল্যান্ডস ভিত্তিক দাতা সংস্থা গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেন। এর আগে গভীর সমুদ্রবন্দর নির্মাণে সরকারের পক্ষ থেকে আহ্বান জানানো হয়েছিল। ২০১১ সালে বিএনপি জামায়াত জোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই বন্দর নির্মাণের পরিকল্পনা হাতে নেয়। ওই সময় প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয় ৪৩ হাজার কোটি টাকা। এরপর দীর্ঘ সময় পার হয়ে গেলেও কাজের কোন অগ্রগতি হয়নি। বন্দরটি নির্মিত হলে চট্টগ্রাম ও মংলাবন্দরের ওপর অতিরিক্ত চাপ কমবে। এই চিন্তা মাথায় রেখে স্বাধীনতার পক্ষের সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রকল্পটি বাস্তবায়নের বিষয়ে আগ্রহ দেখানো হয়। প্রধানমন্ত্রীর তত্ত্বাবধানে ফাস্ট ট্রাক মনিটরিং কমিটির ৭ প্রকল্পের বিশেষ মনিটরিংয়ের আওতায় আনা হয় এ বন্দর নির্মাণ প্রকল্পে। এছাড়া প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণ কাজ ত্বরান্বিত করতে ২০১২ সালে এর খসড়া অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা। এ প্রসঙ্গে নৌপরিবহনমন্ত্রীর এক দায়িতশীল কর্মকর্তা জানান, দেশের প্রথম সমুদ্রবন্দর নির্মাণে নৌপরিবহন অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে সরকারী বেসরকারী অংশিদারিত্ব (পিপিপি) কার্যালয় একযোগে কাজ করছে, এরপরও অর্থায়নে সমস্যা খাটছে না। সরকারের প্রণীত নীতিমালা অনুযায়ী দাতাদের কাজ থেকে সুষ্পষ্ট প্রস্তাব পাওয়া যায়নি। এর ফলে বাস্তবায়ন সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছে না। সূত্রে জানা গেছে, যে সব দাতা সংস্থা সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন সেগুলো হলো ভারত, যুক্তরাষ্ট্র, সংযুক্ত আরব আমিরাত, নেদারল্যান্ডস, ডেনমার্ক ও জার্মানি। সম্প্রতি আরব আমিরাতের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব দেয়া হয়েছে। দেশটির দুবাই পোর্ট ওয়ার্ল্ডের মাধ্যমে প্রস্তাবটি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পেশ করা হয়। সমুদ্রবন্দর নির্মাণে আগ্রহী দাতা সংস্থাগুলো পক্ষ থেকে বলা এই মেগা প্রকল্প নির্মাণে ১ হাজার কোটি ডলার প্রয়োজন হতে পারে তারা প্রাথমিকভাবে জানিয়েছে। আর সম্ভাব্যতা যাচাইয়ের পর ১০ বছরেরও বেশি সময় লাগবে প্রাথমিক কার্যক্রম শেষ করতে।
×