ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিশ্বকাপে দু’দলের এগিয়ে যাওয়ার লড়াইও

বাংলাদেশ না ভারত, ফয়সালা কাল

প্রকাশিত: ০৬:২২, ১৮ মার্চ ২০১৫

বাংলাদেশ না ভারত, ফয়সালা কাল

মিথুন আশরাফ ॥ বাংলাদেশ ১-১ ভারত। বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে ‘হার-জিতে’র হিসাব এটি। ২০০৭ সালে বাংলাদেশ জিতেছে। ২০১১ সালে জিতেছে ভারত। এবার যখন বৃহস্পতিবার মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনাল লড়াই হবে, তখন দুই দলেরই এগিয়ে যাওয়ার লড়াই হবে এটি। পারবে বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে? পারতেও পারে। ক্রিকেটে ভারত যতই শক্তিশালী দল হোক, অজেয় নয়। আবার বাংলাদেশও তো দলটিকে হারিয়েছে। সাবেক কিংবদন্তিরাও আবার এমনভাবে বাংলাদেশ নিয়ে কথা বলছেন, মনে হচ্ছে বাংলাদেশই সেরা। আবার ইতিহাসের অনেক হিসেবই বাংলাদেশের পক্ষেও কথা বলছে। ভারতের বিপক্ষে ২৭ ম্যাচ খেলে বাংলাদেশ। তিন জয়ের বিপরীতে হারে ২৪ ম্যাচে। সেই জয়ী তিন ম্যাচের দুটি ম্যাচই আবার আসে বড় টুর্নামেন্টে। বিশ্বকাপে ও এশিয়া কাপে। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতকে হারায় ও ২০১২ সালের এশিয়া কাপেও হারে। দুইবারই বাংলাদেশের কাছে হেরে ভারত টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নেয়। আরেকটি জয় আসে ২০০৪ সালের ডিসেম্বরে বাংলাদেশ-ভারত সিরিজে। বাকি দুটি জয় আবার মার্চ মাসেই আসে। ২০০৭ ও ২০১২ সালের জয় দুটিই মার্চ মাসে পায় বাংলাদেশ। ২০১২ সালে ১৬ মার্চ ও ২০০৭ সালে ১৭ মার্চে জয় পায় বাংলাদেশ। এবারও মার্চ মাসেই বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের প্রতিপক্ষ থাকছে বাংলাদেশ। আছে স্মরণীয় দিনগুলোতে ভারতকে হারানোর রেকর্ডও। ৩১ মার্চ ওয়ানডের ২৯তম বছরপূর্তি বাংলাদেশ ক্রিকেটের। এ দিনটির আগে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের কোয়ার্টার ফাইনালে উঠে বাংলাদেশ। বৃহস্পতিবার যে ভারতের বিপক্ষে মেলবোর্নে কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ, সেই ম্যাচটি বাংলাদেশের ৩০০তম ওয়ানডে ম্যাচ। স্মরণীয় দিন বলেই আবার ভারতকে হারানোর আশাও আছে। নিজেদের ১০০ ও ১৫০তম ম্যাচে স্মরণীয় দিনে যে ভারতের বিপক্ষে খেলেছে বাংলাদেশ, দুইবারই জিতেছে বাংলাদেশই। ১০০তম ম্যাচ ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে খেলে ১৫ রানে জিতে বাংলাদেশ। সেটিই ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম জয় ছিল। এরপর ১৫০তম ম্যাচেও বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ থাকে ভারত। এবার ম্যাচটি হয় বিশ্বকাপেই। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্বের প্রথম ম্যাচেই ভারতকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ, ৫ উইকেটে। এ হারে গ্রুপ পর্ব থেকেই বিদায় নেয় ভারত! এবারও যে তেমন কিছুই হবে না, তা কে বলতে পারে। সাকিব আল হাসান তো বলছেন, ‘আমাদের প্রথম লক্ষ্য ছিল কোয়ার্টার ফাইনাল। এটা পূরণ হয়েছে। এখন অনেক কিছুই হতে পারে। আমরা এখন পরের ম্যাচ নিয়ে ভাবব। নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ম্যাচ থেকে ইতিবাচক দিকগুলো মাথায় রাখলে কোয়ার্টার ফাইনালে আমরা দারুণ কিছু করতে পারব।’ বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা তো জেতার আশাই করছেন। বলেছেন, ‘আমরা যে কোন লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত। যে কোন দলকেই আমরা হারাতে পারি। আর ২০০৭-এর বিশ্বকাপে আমরা তো ভারতকে হারিয়ে ছিলাম।’ ভারত এ বিশ্বকাপের শক্তিশালী দল হলেও কোয়ার্টার ফাইনালে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশ বলেই ভাবনা আছে। এর আগেও যে বড় টুর্নামেন্টে বিশ্বকাপের মতো আসরে ও এশিয়া কাপের মতো আসরে ভারতকে হারিয়ে বিদায় করে দিয়েছে বাংলাদেশ। কিংবদন্তি ক্রিকেটার সুনীল গাভাস্কার ভারতকে সতর্ক বার্তাই দিয়েছেন, ‘বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের কোয়ার্টার ফাইনাল ম্যাচটি সহজ হবে না এবং তারা (ধোনিরা) তাদের (মাশরাফিদের) হালকাভাবে না নিলে খুব ভাল করবে।’ যে রমিজ রাজা আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের জয়ের পর উল্টা পাল্টা বলেছেন, সেই রমিজ বলতে বাধ্য হয়েছেন, ‘২০১২ এশিয়া কাপে ভারত-শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে গিয়েই বাংলাদেশ নিজেদের চেনাতে পেরেছিল। তারা তখনই সবাইকে জানিয়ে দিয়েছিল, নিজেদের দিনে যে কোন দলকে হারাতে পারে তারা।’ ওয়াসিম আকরাম তো মুগ্ধ, ‘আমি বাংলাদেশী ক্রিকেটের খুব বড় ফ্যান। এই দেশটিতে ক্রিকেটের প্রতি মানুষের ভালবাসা আছে, দলটিতেও ভাল ক্রিকেটারের সংখ্যা নেহাতই কম নয়। কিন্তু নিজেদের চেনানোটাই বাকি ছিল তাদের। আমার মনে হয় বিশ্বকাপে সেই কাজটা তারা করেছে।’ সৌরভ গাঙ্গুলী বার বার বাংলাদেশের পক্ষ নিয়েই কথা বলেছেন। তবে বলেছেন, ‘বাংলাদেশ যে কোন দলকেই হারিয়ে দিতে পারে।’ যখনই বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত, তখন আবার বলছেন, ‘ভারতই জেতবে।’ তবে বাংলাদেশ যে কতটা ভাল দল তা বুঝিয়ে দিয়েছেন। বলেছেন, ‘বাংলাদেশ অসাধারণ খেলছে। দলে অনেক প্রতিভাবান ক্রিকেটার আছে। যারা ম্যাচ জেতাতে পারে।’ বাংলাদেশ দল বৃহস্পতিবারের ম্যাচটি জেততে কঠোর অনুশীলনও করছে। বিশ্বাসের সঙ্গে এগিয়ে চলেছে। এখন এর ফল কোয়ার্টার ফাইনালে মিলে গেলেই হয়। তাহলেই তো বিশ্বকাপে দুই দলের লড়াইয়ে এগিয়ে যায় বাংলাদেশই।
×